ডিসেম্বর ২০, সিএমজি বাংলা ডেস্ক: সুতায় বোনা হচ্ছে জীবনের কাব্য। এগিয়ে যাচ্ছে লি ব্রোকেড তৈরি জন্য সুতা তৈরির কাজ। রঙিন সুতা রোদে শুকানোর পালা চলছে। চীনের দ্বীপ প্রদেশ হাইনানের লি জাতির নারীরা হাজার বছর ধরে লি ব্রোকেডের ঐতিহ্য ধারণ করছেন। লি ব্রোকেড চীনের একটি অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এর রয়েছে দীর্ঘ সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য। চীনের টেক্সটাইল ইতিহাসে লি ব্রোকেডকে বলা হয় জীবন্ত ফসিল। কারণ এটি আবহমান কাল থেকে তাদের বুনন কৌশল ধরে রেখেছে।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো সম্প্রতি লি ব্রোকেডের সুতা কাটা, রং করা, বুনন এবং নকশীকাজের মাধ্যমে কাপড় তৈরি কৌশলকে মানবতার অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
২০০৯ সালে চীনের অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় লি ব্রোকেডের অন্তর্ভুক্তি ঘটে। তখন এই ঐতিহ্য দ্রুত সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে জানানো হয়।
বর্তমানে লি ব্রোকেড নতুন প্রাণশক্তি লাভ করেছে। এই কারুশিল্প সংরক্ষণে বড় ভূমিকা পালন করেছেন লি জাতির মেয়ে ছেন ম্যংলি। ছোটবেলা থেকেই লি ব্রোকেড বুননের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন ছেন। এই ব্রোকেড নারীদের নিজস্ব কারুশিল্প। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে নারীরা এই ধারা বয়ে নিয়ে যায়। ছেন পরিবার থেকে এই শিল্প শেখেন। কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর তিনি তার হোমটাউনে ফিরে আসেন এবং লি ব্রোকেড স্টুডিও নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
ছেন ম্যংলি, লি জাতির ঐতিহ্যবাহী পোশাক লি ব্রোকেডের ধারক । তিনি বলেন ‘ আমার জাতির কারুশিল্পীদের হাতের কাজ প্রদর্শন এবং বিক্রির জন্য আমি এই দোকান প্রতিষ্ঠা করি। তারা উৎপাদনের দায়িত্ব পালন করেন, আমার প্রতিষ্ঠান বিপণনের দায়িত্ব নিয়েছে।’
লি ব্রোকেডের ধারাকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে পৌছে দিতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৩ সালে হাইনানের উচিশান এবং শেনচেনের স্কুল অব ইতালির শীর্ষ কারুশিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটুটো মারানগোনির সঙ্গে প্রতিভা প্রশিক্ষণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
এখানে লি ব্রোকেড বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং এই শিল্প যেন বিশ্বে পরিচিত হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
লি জাতির ঐতিহ্যবাহী পোশাক লি ব্রোকেডের একজন ধারক থান ছাওইয়ান। তিনি বলেন, ‘আমি এক বছরের বেশি সময় ধরে এই প্রশিক্ষণে যোগ দিয়েছি। এখন তৃতীয় পর্যায় চলছে। আমি অনেক শিখেছি। বিশেষ করে রং এবং উজ্জ্বলতাকে ব্যবহার করে প্রেরণা পাওয়ার বিষয়টি। আমি অনেক কিছু শিখতে পারছি।”
নতুন প্রজন্মের কাছে লি জাতির নারীদের এই নকশী কারুশিল্পকে পৌছে দেয়ার ফলে হাজার বছরের প্রাচীন এই শিল্প যেন নতুন প্রাণশক্তি লাভ করেছে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
Leave a Reply