প্রদীপ কুমার মজুমদার
স্থানীয় অঙ্কপাতন পদ্ধতি কবে ভারতবর্ষে আবিষ্কৃত বা প্রচলিত হয়েছিল তা বলা কঠিন। মনে হয় কোন মহৎ পণ্ডিত অথবা পণ্ডিতদের মহাসম্মেলনে এই পদ্ধতিটি গৃহীত হয়ে থাকবে। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক কল্হণ বলে গিয়েছেন এই পদ্ধতি ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রচলিত ছিল।
বিখ্যাত গণিত ঐতিহাসিক বি. বি. দত্ত মনে করেন খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে এই পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়ে থাকবে। প্রসঙ্গক্রমে বলা প্রয়োজন এই পদ্ধতি অনেক আগে আবিষ্কৃত হলেও সপ্তদশ শতাব্দীতেও স্থানীয় অঙ্কপাতন পদ্ধতি ব্যতিরেকেই সংখ্যা লিখতে দেখা যায়। অবশ্য কেন যে এটা চলেছিল সে সম্পর্কে ঐতিহাসিকেরা সুস্পষ্ট মতামত দিতে পারেন নি।
ভারতীয় গণিতশাস্ত্রে দশাঙ্ক সংখ্যা ও স্থানীয়মান তত্ত্ব
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জগতের দিকপাল গবেষকদের অধিকাংশের মত যে ভারতীয় গণিতবিদরাই গণিতে শাস্ত্রে প্রথম দশাঙ্ক সংখ্যার প্রচলন করেন। তবে কোন গণিতবিদ এ ব্যাপারে প্রথম অগ্রসর হয়েছিল তা বলা কঠিন। বায়ুপুরাণের এক- জায়গায় নিম্নোক্ত শ্লোকটি দেখতে পাওয়া যায়-
“এযা সংখ্যারুতা সংখ্যা ঈশ্বরেণ স্বয়ম্ভূবা।
গণনা বিনিবৃত্তৈযা সংখ্যা ব্রাহ্মী চ মানুষী”। ১০১/২০৮
শ্লোকটির অনুবাদ না করেও বলা যায় যে বায়ুপুরাণের মতে দশাঙ্ক সংখ্যা প্রণালীর আবিষ্কর্তা ব্রহ্মা। দশাঙ্ক সংখ্যা ব্যবহারের প্রমাণ মহাভরতে, পিঙ্গলের ছন্দসূত্রে,অনুযোগদ্বারস্থত্র নামক জৈন আগমসূত্রে, বিষ্ণুপুরাণে, অগ্নিপুরাণে, বায়ুপুরাণে, তিলয় পন্নতি (ত্রিলোক প্রজ্ঞপ্তি) নামক জৈন আগমগ্রন্থে, বাকশালীর পাটীগণিতে, মূল পুলিশ সিদ্ধান্তে, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে, তন্ত্রশাস্ত্রে, বৃহজ্জাতকবিবৃতিতে এবং আরও নানা ভারতীয় গণিত ও ধর্মগ্রন্থে দেখতে পাওয়া যায়।
(চলবে)
Leave a Reply