সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:০৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ভাষার গান’ নিয়ে আসছেন রিজিয়া ও দিঠি ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৫৮) আমেরিকা- ভারত সম্পর্ক ২১ শতকের বিশ্ব রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হবে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রেশন–সুবিধা চালুর প্রস্তাব ডেমোক্র্যাটরা মাস্ক ডেরেঞ্জমেন্ট সিনড্রোমে ভুগছে প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৯২) কিয়েভ রাশিয়ার সাথে শান্তি আলোচনা শুরুর আগে ‘নিরাপত্তা গ্যারান্টি’ চায় বুর্জোয়া নেতৃত্ব না থাকায় আমেরিকার ডেমোক্র্যাট দল এখন বিপাকে অ্যাপল এনক্রিপশণ সেবাকে বিপজ্জনক বলছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদরা মোবাইল ইন্টানেটের অব্যবহৃত ডাটা পরবর্তী প্যাকেজে যুক্ত করতে হাইকোর্টের রুল

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৯৬)

  • Update Time : বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১.০০ এএম

সন্ন্যাসী ঠাকুর

একটা দিন স্থির করিলাম দাদার ওখানে যাইবার। তারপর অতি সঙ্কোচের সঙ্গে দাদা আমাকে বলিলেন, “কিছু টাকা আমাকে ধার দিতে পার ভাই? ধর গোটা পঁচিশেক টাকা। তোমাকে বলিতে তো লজ্জা নাই। বড়ই অভাব পড়িয়াছে সংসারে।” আমি বলিলাম, “হাতখরচের জন্য আমার কাছে মাত্র দশটি টাকা আছে। ইহাতে কি আপনার হইবে?” দাদা বলিলেন “আর যখন নাই, তাই দাও। তোমাকে বড়ই অসুবিধায় ফেলিলাম।”

আমি উত্তর করিলাম, “না দাদা। আমার কোনোই অসুবিধা হইবে না। আপনি যে দয়া করিয়া এই লইতে চাহিলেন তাহাই আমার পরম সৌভাগ্য। আমার বালককালে আপনার গৃহে যে আদর-যত্ন পাইয়া আসিয়াছি তাহার ঋণ কোনোদিন পরিশোধ করিতে পারব না।” দাদা বলিলেন, “ওসব বলিয়া আর লজ্জা দিও না ভাই। আমরা তোমার কিছুই করি নাই।”

দাদাকে দশটি টাকা আনিয়া দিলাম। দাদা চলিয়া গেলেন। নির্দিষ্ট দিনে মালখা নগরে সুহৃদদার বাড়ি যাইয়া উপস্থিত হইলাম। বসুদের সেই চকমিলানো বাড়ি সুহৃদদার দারিদ্র্যের মতোই চুন-জলের অভাবে খসিয়া খসিয়া পড়িতেছে। বৌদি আসিয়া দেখা করিলেন। আমার সেই সোনার বৌদি। বয়সের নিষ্ঠুর-দেবতা তাঁর অঙ্গ হইতে ঝলমল রূপ কবে হরণ করিয়া লইয়া গিয়াছে। কপালের বলিরেখায় মোটা কলমের আঘাতে কে যেন কঠোর দারিদ্র্যের লেখন লিখিয়া রাখিয়াছে। দেখিলেই পড়িতে পারা যায়। বৌদিকে বলিলাম, “আমাকে চিনিতে পারেন বৌদি? আমার কথা মনে আছে আপনার?”

চন। এক করিয়া একবার খখানা এ দিদি দপুর নগাধ তিনি তন দর ভুল রা ত ন বৌদি বলিলেন, “কেন মনে থাকিবে না? সেকালের কথা কি ভোলা যায়?” মনে মনে ভাবিলাম, এই কঠোর অভাবের জীবনে সেই বিগতকালের দিনগুলির স্মৃতিই হয়তো ইহাদের বাঁচিয়া থাকার একমাত্র অবলম্বন। স্বেচ্ছায় সন্ন্যাস বরণ করিয়া সংসারের সবকিছু বিসর্জন দিয়াছিলেন সুহৃদদাদা। তাঁহার পায়ের কাছে অর্থ-সম্পদ গড়াগড়ি যাইত। তাহা স্বেচ্ছায় পদাঘাত করিয়া আজ পরিণত বয়সে সুহৃদদাকে কতজনের কাছেই সামান্য অর্থের জন্য হাত পাতিতে হয়।

বাড়ির ভিতরে যাইয়া মা’র সঙ্গে দেখা করিলাম। সেই স্নেহময়ী মা আজ কঠিন বাতব্যাধিতে শয্যাগত। তিনি আমাকে দেখিয়া কত খুশি হইলেন। সুহৃদদা আর একটি বিবাহ করিয়াছিলেন। সেই নতুন বৌদিকেও দেখিলাম। রূপে আগের বৌদিদির পায়ের নখেরও সমান নয়। বয়সও বেশ। মানুষ কার কি দেখিয়া যে ভোলে তা বিধাতারও অগোচর।

আমি যতদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করিতাম, সুহৃদদা মাঝে মাঝে আমাকে দেখিতে আসিতেন। তারপর আমি কলিকাতা চলিয়া গেলাম। দেশ বিভাগের পর সুহৃদদাদারা যে কোথায় গিয়াছেন জানিতে পারি নাই।

 

চলবে…

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024