বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৫৯ অপরাহ্ন

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ৩৪)

  • Update Time : শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩.৪৫ পিএম

ম্যাকসিম গোর্কী

একটি চিঠি

কেউ মন্তব্য করলেন, শেস্টভ একজন ইহুদি।

“খুব সম্ভব না।” সংশয়ের সংগে বললেন লিও নিকোলাইয়েভিচ।

“না, ইহুদির মতো নন তিনি। ইহুদিরা কখনো ভগবানে অবিশ্বাস করেন না। ভগবানে অবিশ্বাস করেন, এমন একজন ইহুদিরও তুমি নাম করতে পারবে না।…….. পারবে না।”

মাঝে মাঝে মনে হোতো যেন এই বৃদ্ধ জাদুকর মৃত্যুর সংগে খেলা করছেন, তার সংগে আদর সোহাগের ছল করছেন, চেষ্টা করছেন তাকে কোনো রকমে প্রতারিত করতে। যেন বলছেন “আমি তোমায় ভয় করি না, তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে পেতে চাই।”

এবং সেই সংগে তাঁর ক্ষুদে ধারালো চোখ দুটো মৃত্যুর গভীরে উকি দিয়ে যেন জানতে চাচ্ছে: তুমি কেমন? এখান থেকে নিয়ে গিয়ে তুমি আমায় কী দেবে? তুমি কি আমায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস ক’রে দেবে, না, আমার মধ্যেকার কিছু থাকবে বেঁচে?”

“আমি সুখী, আমি ভয়ানক সুখী, আমি অতি বেশী সুখী।” তাঁর এই কথাগুলি মানুষের মনের ওপর একটি অদ্ভুত ছাপ রেখে যায়। তার পর মুহূর্তেই তিনি বলেন “যন্ত্রণা পেয়ে।” এ-কথাটিও তাঁর মধ্যে অত্যন্ত সত্য। আমি মুহূর্তের জন্যেও সন্দেহ করি না যে তিনি অর্ধ-অসুস্থ একটি মানুষ, অথচ কারাগারে নিক্ষিপ্ত হ’লে, নির্বাসিত হ’লে, এক কথায় শহীদের কণ্টক-মুকুট পরতে পেলে তিনি বাস্তবিক পক্ষে সুখী হবেন না।

সম্ভবত, এই শহীদত্বই কি মৃত্যুকে অনেকাংশে ন্যায়সংগত ক’রে তুলবে না-করবে না তাকে বাইরের প্রথাগত দৃষ্টিভংগীর দিক থেকে আরো সুবোধ্য, সহজগ্রাহু? কিন্তু টলস্টয় কখনো কোনো কালেই সুখী ছিলেন না। কি জ্ঞানের গ্রন্থব্যুহে, “কি অশ্বপৃষ্ঠে”, কি “নারীর বাহু বল্লরীতে” কোথাও যে তিনি “পার্থিব স্বর্গের” পরিপূর্ণ আনন্দলাভ করেন নি, সে বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ।

কারণ তাঁর বুদ্ধিবৃত্তি এতোই প্রবল ছিল যে, সুখ তাঁর মধ্যে ছিল অসম্ভব। জানতেন অত্যন্ত ভালো ক’রে। এই: তাছাড়া তিনি জীবন ও মানুষকে তাঁরই আরো কয়েকটি কথা হোলো “খলিফা আবদুর রহমন তাঁর পেয়েছিলেন, যেগুলি ছিল সুখের। সমস্ত জীবনে মাত্র চোদ্দটি দিন কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, আমি অতগুলিও পাই নি। আর তার কারণ, আমি আমার নিজের জন্যে কখনো বাঁচি নি-বাঁচতে পারি নি। আমি অপরের জন্যে বেঁচেরি, অপরকে দেখাবার জন্যে।”

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024