ম্যাকসিম গোর্কী
একটি চিঠি
“হ্যাঁ,” একটু চিন্তা ক’রে জবাব দিলেন টলস্টয়, “কথাটা হঠাৎ মনে পড়ে গেলো-তিনি খুব ফ্যাশানেব্ল, চটপটে। তাছাড়া, আমার মনে পড়ে গেলো, গ্রামে এক চাষা-মামার বিয়েতে মস্কো থেকে এসেছিলেন এক সৌখীন ভদ্র লোক। নিখুঁত তাঁর চালচলন, আদব- কায়দা, নাচেনও সুন্দর। তাই তিনি সবাইকে ঘৃণা করতেন।”
আমার বিশ্বাস, এই আলোচনাটির আমি প্রায় হুবহু পুনরাবৃত্তি করেছি। এটা আমার কাছে অত্যন্ত স্মরণীয় বিষয়। এমন কি, এ ব্যাপারটিকে আমি টুকেও রেখেছিলাম, এরকম অন্য অনেক জিনিষও যা আমার ভালো লাগে আমি টুকে রাখি। সুলারঝিজকি আর আমি, আমরা দুজনেই টলস্টয়ের মুখের বহু কথাই টুকে রেখেছিলাম। কিন্তু সুলারঝিজকি যখন আমার কাছে আরসামাসে আসে, তখন তার যে লেখাগুলি কোথায় হারিয়ে গেছে।
হারানোই স্বাভাবিক: কারণ, সুলার ছিল অসাবধানী। তাছাড়া, যদিও সে টলস্টয়কে কতকটা মেয়েমানুষের মতোই ভালবাসতো, তবু মাঝে মাঝে টলস্টয়ের প্রতি সে ব্যবহার করতো অদ্ভুত ভাবে, যেন সে টলস্টয়ের চেয়ে বড়ো। আমার সেই লেখাগুলো আমিও কোথায় রেখেছি, খুঁজে পাচ্ছি না। রাশিয়ার কেউ নিশ্চয় সেগুলো পেয়ে থাকবে। আমি টলস্টয়কে অত্যন্ত মনোযোগের সংগে লক্ষ্য করতাম, কারণ আমি সন্ধান ক’রে ফিরছিলাম-আজো ফিরছি এবং মৃত্যু পর্যন্ত ফিরবো-এমন একটি মানুষকে, যাঁর মধ্যে রয়েছে সজীব সক্রিয় একটি আদর্শ, একটি বিশ্বাস।
আর তাছাড়া, একদিন আন্টন শেখভ আমাদের সংস্কৃতির দুর্বলতার উল্লেখ ক’রে অনুযোগ ক’রে বলেছিলেন: “গ্যেটের প্রতিটি শব্দ লিপিবদ্ধ হয়ে আছে; অথচ টলস্টয়ের চিন্তাগুলি হারিয়ে যাচ্ছে হাওয়ায়। এটা হলো আমাদের, রাশিয়ানদের, চরিত্রগত ত্রুটি, যা অসহ্য। টলস্টয়ের মৃত্যুর পর, দেখো, দেশের লোকের ঘুম ভাঙবে, তখন তারা টলস্টয়ের স্মৃতি লিখতে সুরু করবে, এবং কেবলই লিখবে মিছে কথা।”
হ্যাঁ, শেস্টভের কথা বলছিলাম। টলস্টয় বললেন, “তিনি বলছেন যে ‘ভয়ংকর প্রেতের পানে তাকানো সম্ভব নয়।’ কিন্তু প্রেত যে ভয়ংকর কিম্বা ভয়ংকর নয়, তা তিনি কেমন ক’রে জানলেন? যদি তিনি প্রেত দেখে থাকতেন, প্রেতকে জানতেন, তবে তিনি এই সব আজেবাজে কথা নিশ্চয় লিখতেন না, করতেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ-যা বুদ্ধ ক’রে- ছিলেন তাঁর সমস্ত জীবন ধ’রে।”
Leave a Reply