শ্রী নিখিলনাথ রায়
এইরূপে ইংরেজ কোম্পানী বঙ্গরাজ্যের অধীশ্বর হইয়া, ভারতের অন্যান্য স্থানের প্রতি তীক্ষ্ণ- বৃষ্টিপাত করিতে লাগিলেন। কোম্পানীর স্বহস্তগঠিত বিজয় মুকুটে বিস্তৃষিত হইয়া, ভাগ্যলক্ষ্মী কতিপয় দেশীয় লোকের প্রতিও অনুগ্রহদৃষ্টি ৪১৯ করিলেন। ইহাদের মধ্যে আমাদের আলোচ্য কান্ত বাবুও একজন। কান্ত বাবুর সংক্ষিপ্ত পরিচয় প্রদানের সহিত তিনি কিরূপে ভাগ্যলক্ষ্মীর অনুগ্রহ লাভ করিয়াছিলেন, তাহাই দেখাইবার জন্য এই প্রবন্ধের অব- তারণা। আমরা ক্রমশঃ তাহাই বিবৃত করিতেছি। বলা বাহুল্য যে, কান্ত বাবুই কাশীমবাজারের বর্তমান রাজবংশের আদিপুরুষ।
তাঁহারই সুরতিবলে আজ কাশীমবাজার রাজবংশ বঙ্গদেশে, কেবল বঙ্গদেশে কেন, সমগ্র ভারতবর্ষে পরিচিত। বাঙ্গলায় এমন স্থান নাই, যেখানে স্থানশীলা মহারাণী স্বর্ণময়ী-মহোদয়ার নাম বিঘোষিত না হয়। কি শিক্ষিত, কি অশিক্ষিত সকল প্রকার লোকই মহারাণী-মহোদয়ারও। তাঁহার সুযোগ্য উত্তরাধিকারী মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্রের নাম জ্ঞাত আছে। মহারাণী-মহোদয়ার ও মহারাজ-মহোদয়ের এই সুনামের কারণ, কান্ত বাবুর সৌভাগ্য। সেই কান্ত বাবুর বিবরণ প্রদান করিতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করিতেছি।
খৃষ্টীয় সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে কাশীমবাজার বাঙ্গলার মধ্যে একটি বাণিজ্যপ্রধান স্থান বলিয়া বিখ্যাত হয়। তৎকালে ইহাতে ও ইহার নিকটবর্তী স্থানসমূহে, ভিন্ন ভিন্ন ইউরোপীয় জাতির কুঠী সংস্থাপিত ছিল। ইউরোপীয়দিগের সহিত বাণিজ্যকাৰ্য্য চালাইবার জন্য, অনেক দেশীয় লোক কাশীমবাজারে অবস্থিতি করিতেন। বঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন স্থান হইতে অনেক লোক কাশীমবাজারে আসিয়া বাস করিতে আরম্ভ করে। কান্ত বাবুর পূর্ব্বপুরুষেরাও সেই উদ্দেশ্যে কাশীমবাজারে আপনা- দিগের আবাসস্থান স্থাপন করিয়াছিলেন।
ইঁহাদের পূর্ব্বনিবাস বর্দ্ধমান জেলার অন্তর্গত মন্ত্রেশ্বরের অধীন রিপীগ্রাম বা সিজনা। তথা হইতে ব্যব- সায়ের উদ্দেশ্যে ইঁহারা কাশীমবাজারের নিকট শ্রীপুর নামক স্থানে আসিয়া বাস করেন। বর্তমান কাশীমবাজার রাজবাটী সেই শ্রীপুরেই অবস্থিত। কান্ত বাবুর দুই তিন পুরুষ পূর্ব্ব হইতে, ইঁহারা রেশমের ও সুপারির ব্যবসায় চালাইতেছিলেন। ধনশালী ব্যবসায়ী ‘না হইলেও ইঁহারা এক ঘর মধ্যবিত্ত গৃহস্থ ছিলেন; কখন অন্নবস্ত্রের কষ্ট ভোগ করেন নাই। রাধাকৃষ্ণ নন্দী সুপ্রসিদ্ধ কান্ত বাবুর পিতা। কোন কোন মতে রাধাকৃষ্ণের পিতা সীতারাম এবং কাহারও কাহারও মতে তাঁহার পিতামহ অর্থাৎ সীতারামের পিতা কালী নন্দী, প্রথমে কাশীমবাজারে আগমন করেন।
Leave a Reply