বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৪২)

  • Update Time : রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

রাধাকৃষ্ণ বর্দ্ধমান জেলার কুড়ুম্বগ্রামে বিবাহ করিয়া ছিলেন। তাঁহারা জাতিতে তৈলিক বা তিলি। অনেকে তাঁহাদিগকে তেলি বলিয়া ভ্রমে পতিত হন এবং সেইজন্য সাহেবদের মধ্যে কেহ কেহ তাঁহাদিগকে Oilman বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন।। বর্তমান সময়ে যাহাদিগকে তেলি বলে, তাহারা ইঁহাদের হইতে সম্পূর্ণ পৃথক্। ইহারা সাধারণতঃ তিলি নামেই অভিহিত হন। তৈলিক বা তিলিগণ নবশাখ শূদ্রের মধ্যে এক শাখা; সুতরাং জাত্যংশে শূদ্রদের মধ্যে তাঁহারা নিতান্ত হীন নহেন। রাধাকৃষ্ণের পাঁচ পুত্র ছিল; তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ কৃষ্ণ- রাধাকৃষ্ণ কান্ত।

এই কৃষ্ণকান্তই কান্তবাবু বলিয়া সুপরিচিত। এণের আরজ রেশম ও নিজে ভাব ঘুড়ী উড়াইতে পারিতেন বলিয়া, লোকে তাঁহাকে প্রলিফা + বলিয়া অভিহিত করিত। কাশীমবাজারের ইংরেজ কুঠী ও রেসিডেন্সির নিকটই তাঁহাদের দোকান ছিল; এজন্য কুঠীর লোকদিগের সহিত তাঁহার দের বিশেষ পরিচয় হয়। কৃষ্ণকান্ত, বাল্যকালে বাঙ্গলা, ফারসী ও সামান্ত- রূপ ইংরেজী শিক্ষা করেন। এরূপ জনশ্রুতি আছে যে, কান্ত বাবু দুই হাজার ইংরেজী শব্দ কণ্ঠস্থ করিয়াছিলেন, এতদ্ভিন্ন বাঙ্গলা হিসাবাবু গুই তাঁহার বিশেষ জ্ঞান ছিল। কান্ত বাবুর বৃদ্ধি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ছিল; এজন্য তিনি কাশীমুবাজারস্থ ইংরেজদিগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ইংরেজ বণিদিগের সহিত ব্যবসায়বিষয়ে সম্পর্ক হওয়ায়, কান্ত বাবু ক্রমে ক্রমে কাশীমবাজারের ইংরেজ কুঠীতে মুহুরীর পদে নিযুক্ত হন। তিনি বাল্যকাল হইতে আপনাদের রেশমের ব্যবসায় দেখিয়া আসিতেছিলেন; তজ্জন্য উক্ত বিষয়ে তাঁহার অভিজ্ঞতা জন্মে।

ইংরেজ কুরীতে রেশমের ব্যবসায়ই প্রধান হওয়ায় এবং সে বিষয়ে তাঁহার বিশেষ জ্ঞান থাকায়, শীঘ্রই তাঁহার পদোন্নতি ঘটে। এই সময়ে বঙ্গের প্রথম গবর্ণর জেনারেল ওয়ারেণ হেষ্টিংসের সহিত তাঁহার পরিচয় হয়। ১৭৫৩ গুঃ অব্দের অক্টোবর মাসে নবাব আলিবর্দী খাঁ মহবৎ জঙ্গের রাজত্বকালে, ওয়ারেণ হেষ্টিংস কলিকাতা হইতে কাশীমবাজার কুঠীতে আগমন করেন। ক্রমে ক্রমে কান্ত বাবুর সহিত তাঁহার পরিচয় জন্মিলে, কান্ত বাবুর কাৰ্য্যদক্ষতায় তিনি তাঁহার উপর সন্তুষ্ট হন। ওয়ারেণ হেষ্টিংস এই সময়ে একজন নিম্নতন কর্মচারিখাত্র ছিলেন। এই সময়ে হেস্টিংসেরও কর্তব্যনিষ্ঠার অনেক পরিচয় পাওয়া যায়।

১৭৫৬ খৃষ্টাব্দের এপ্রেল মাসে নবাব আলিবর্দ্দী খাঁ ইহলোক হইতে বিদায় গ্রহণ করিলে, তাঁহার প্রিয়তম দৌহিত্র সিরাজ বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার সিংহাসনে আরোহণ করেন। আলিবদ্দী মৃত্যুকালে বলিয়া যান যে, ইংরেজেরা যেরূপ ক্ষমতাশালী হইতেছে, তাহাতে যেরূপে পার, ইহা- দিগকে দমন করিতে চেষ্টা করিবে। সেই পরামর্শের বশবর্তী হইয়া, সিরাজ ইংরেজদিগের উচ্ছেদসাধনে কৃতসংকল্প হইলেন এবং অবিলম্বে কাশীমবাজার কুঠী আক্রমণ করিলেন। নবাবসৈন্যের নিকট ইংরেজ বণিক্- গণ আত্মসমর্পণ করিল। এই সময়ে ওয়াটুস সাহেব কাশীমবাজারের অধ্যক্ষ ছিলেন। কলেট ও ব্যাট্রসন সাহেবদ্বয় তাঁহার সদস্যস্বরূপে অব- স্থিতি করিতেন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024