আবু ইসহাক
স্কুলে এমন ছাত্র খুব কমই আছে যাদের অঙ্ক-আতঙ্ক নেই। জ্যামিতিও অঙ্কেরই অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়। জ্যামিতির সম্পাদ্য মোটামুটি সহজ। কিন্তু উপপাদ্য অনেকেরই মাথা ঘোরে। প্রমাণ করতে বললেন অষ্টম শ্রেণীতে জ্যামিতি পড়ান অঙ্কবিশারদ শ্রী হীরালাল মুখার্জি। তিনি বেশ রগুড়ে লোক। রসকসহীন অঙ্ক শেখাবার সময়েও তিনি এমন মজার মজার কথ্য বলেন, রাঙে ছাত্ররা কখনো কিৎকিৎ করে, কখনো থিকথিক-খুকখুক করে, কখনো বা হিলসহ যোলো করে হেসে ওঠে।
সাদা চক দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে একটা ত্রিভুজ এঁকে হীরালাল স্যার বলেন, ত্রিভুজের যে-কোনো দুই বাহুর সমষ্টি ত্রিভুজটির তৃতীয় বাহু অপেক্ষা বৃহত্তর।
ব্লাকবোর্ডে এঁকে তিনি প্রমাণ করে দেখান যে ক-খ বাহু ও ক-গ বাহুর সমষ্টি খ-গ বাহুর চেয়ে বৃহত্তর, আবার ক-খ ও খ-গ বাহুর সমষ্টি ক-গ বাহুর চেয়ে এবং ক-গ বাহু ও খ-গ বাহুর সমষ্টি ক-খ বাহুর চেয়ে বৃহত্তর।
বোঝানো শেষ করে তিনি ছাত্রদের দিকে তাকিয়ে বলেন, না বুঝল কে?
ঘনশ্যাম নামের এক ছাত্র দাঁড়িয়ে বলে, স্যার, আমি বুঝতে পারিনি।
-তুই মনোযোগ দিয়ে শুনিস নি। আমার কাছে আয় তোকে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
ঘনশ্যাম মনে করেছে, মনোযোগ দিয়ে না শোনার জন্য তাকে নিশ্চয়ই বেত মারা
হবে। তাই সে তাঁর জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে।
-অ্যাই ঘনশা, এলিনে? জলদি আয়।
ভয়ে ভয়ে ঘনশ্যাম স্যারের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
তিনি ন্যাকড়া দিয়ে বোর্ডটা পরিষ্কার করে বড় একটা ত্রিভুজ এঁকে তার নাম দেন ক-খ-গ। ত্রিভুজটির ক-খ বাহু আধা ইঞ্চির চেয়েও ছোট। তারপর বলেন, চেয়ে দ্যাখ, ত্রিভুজটার যে-কোনো দুই বাহু তার তৃতীয় বাহুর চেয়ে লম্বায় বড় কি না।
-স্যার, লম্বা বাহু দুটোর সমষ্টি ছোট ক-খ বাহুটার চেয়ে লম্বায় বড় তা দেখে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু ছোট বাহুটার সাথে খ-গ বাহু যোগ করলে তার সমষ্টি লম্বা ক-গ বাহুর চেয়ে বড় হবে কি না তা স্কেল দিয়ে মাপলে বোঝা যাবে।
-তুই তো ছাগলেরও অধম। স্কেল দিয়ে মাপতে হবে কেন? যে-কোনো ছাগল চোখ দিয়ে দেখেই বুঝতে পারবে ত্রিভুজটায় যে-কোনো দুই বাহু তার তৃতীয় বাহুর চেয়ে লম্বায় বড়।
ক্লাসের সবাই থিকথিক করে হেসে ওঠে। ইলিয়াস দাঁড়িয়ে বলে, স্যার, ত্রিভুজটার দুই বাহুর সমষ্টি যে তার তৃতীয় বাহুর চেয়ে লম্বায় বড় তা ছাগলে বুঝবে কেমন করে?
-ছাগলে বুঝবে না বলতে চাস? আচ্ছা দ্যাখ। তিনি ত্রিভুজটা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে আবার বলেন,-মনে কর একটা তিনকোনা পুকুর। পুকুরটার তিন দিকের পথগুলো হচ্ছে ক-খ, খ-গ এবং ক-গ।
তিন ক-এর স্থানে একটা ছাগল এবং গ-এর স্থানে একঝোপ ঘাস এঁকে বলেন,- এই ছাগলটা ঘাস খাওয়ার জন্য ক-খ পথ ঘুরে খ-গ পথ দিয়ে হেঁটে ঘাসের কাছে যাবে? কখনো তা যাবে না। কারণ ওটার জ্যামিতিক জ্ঞান আছে বলেই ওটা বোঝে ঐ রাস্তা অনেক লম্বা। তাই ওটা ক থেকে সোজা ক-গ পথ দিয়ে হেঁটে গ-এর জায়গায় গিয়ে ঘাস খাবে।
একটু থেমে তিনি আবার বলেন, মনে কর, তোরা সবাই ক-এর জায়গায় দাঁড়িয়ে আছিস। গ-এর জায়গায় ঘাসের বদলে এক গামলা রসগোল্লা রেখে দিলে তোরা কী করবি?
এক ছাত্র দাঁড়িয়ে বলে, আমরা সবাই ক-গ রাস্তা দিয়ে দৌড়ে গিয়ে রসগোল্লাগুলো টপাটপ খেয়ে ফেলব।
সবাই হেসে ওঠে। হীরালাল স্যারের মুখেও মুচকি হাসি।
-কিন্তু ক-এর জায়গায় যদি ঘনশা একা থাকে, ও কী করবে? ও বুঝতে না পেরে ক-খ ঘুরে খ-গ রাস্তা ধরবে রসগোল্লা খাওয়ার জন্য। ততক্ষণে তিন-চারটা কাক এসে কিছু তো খাবেই, গামলার সব রসগোল্লাও নোংরা করে ফেলবে। ঘনশা গিয়ে কী দেখবে? তিনি দুই হাতের দশ আঙুল দিয়ে দুটো গোল্লা বানিয়ে তা নেড়ে নেড়ে বলেন,-ও দেখবে কতকগুলো জুঠা গোল্লা! গোল্লা!! গোল্লা!!!
হি-হি-হো হো হাসির হিল্লোল বয়ে যায় সারা ক্লাসে।
Leave a Reply