সারাক্ষণ ডেস্ক
ভারতীয় রুপির বিনিময় হার গত সপ্তাহে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৮৫ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ, ১ মার্কিন ডলার কিনতে এখন ৮৫ রুপি খরচ করতে হবে। এপ্রিল মাসে এই “বিনিময় হার” ছিল প্রায় ৮৩, আর এক দশক আগে, যখন নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হন, তখন এটি ছিল প্রায় ৬১। এভাবে, ডলারের তুলনায় রুপির মান ক্রমাগত কমছে—এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা।
বিনিময় হার কী?
ভারতের অভ্যন্তরে আমরা পণ্য (যেমন পিজ্জা বা গাড়ি) এবং পরিষেবা (যেমন চুল কাটানো বা হোটেলে থাকার) কিনতে ভারতীয় রুপি ব্যবহার করি। কিন্তু বিদেশি কোনো পণ্য—যেমন আমেরিকান গাড়ি, সুইস ছুটি, বা অপরিশোধিত তেল—কিনতে হলে আমাদের প্রথমে নিজস্ব মুদ্রার বদলে সেই দেশের মুদ্রা, যেমন মার্কিন ডলার বা সুইস ফ্রাঁ, কিনতে হয়। মুদ্রা বিনিময়ের এই হারকেই বলা হয় বিনিময় হার। অর্থাৎ, একটি ডলার বা একটি ইউরো কিনতে কত রুপি প্রয়োজন হবে।
এই বাজারকে মুদ্রা বাজারও বলা হয়, যেখানে প্রতিটি মুদ্রা এক একটি পণ্যের মতো। এক মুদ্রার তুলনায় অন্য মুদ্রার মানই হলো বিনিময় হার। এই মান কখনো এক রকম থাকে, তবে প্রায়ই পরিবর্তিত হয়।
কী এটি নির্ধারণ করে?
জীবনের অন্যান্য ব্যবসার মতোই, এক মুদ্রার তুলনায় অন্য মুদ্রার আপেক্ষিক মান নির্ভর করে কোন মুদ্রার চাহিদা বেশি তার উপর। যদি ভারতীয়রা মার্কিন ডলারের বেশি চাহিদা করে, কিন্তু মার্কিনিরা ভারতীয় রুপির ততটা চাহিদা না করে, তবে বিনিময় হার ডলারের দিকে ঝুঁকে পড়বে।
এই প্রবণতা যদি প্রতিদিন ঘটে, তবে ডলারের তুলনায় রুপি ক্রমাগত দুর্বল হবে।
রুপি বনাম ডলারের চাহিদা কী নির্ধারণ করে?
এখানে তিনটি প্রধান উপাদান কাজ করে।
১. প্রথমত, পণ্য বাণিজ্য। সরলতার জন্য ধরুন, পৃথিবীতে শুধু দুটি দেশ—ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদি ভারত আমেরিকা থেকে আমদানি বেশি করে এবং রপ্তানি কম করে, তবে মার্কিন ডলারের চাহিদা ভারতীয় রুপির চাহিদাকে ছাড়িয়ে যাবে। ফলে ডলার শক্তিশালী হবে, আর রুপির বিনিময় হার দুর্বল হবে।
২. দ্বিতীয়ত, পরিষেবা বাণিজ্য। যদি ভারতীয়রা মার্কিন পরিষেবা (যেমন পর্যটন) বেশি কেনে, তবে আবার ডলারের চাহিদা বেশি হবে এবং রুপি দুর্বল হবে।
৩. তৃতীয়ত, বিনিয়োগ। যদি মার্কিনরা ভারতে বেশি বিনিয়োগ করে, তবে রুপির চাহিদা বাড়বে এবং ডলারের তুলনায় রুপি শক্তিশালী হবে।
এই চাহিদাগুলোর উপর কী প্রভাব ফেলে?
এই তিন ধরণের চাহিদার উপর প্রভাব ফেলতে পারে বিভিন্ন কারণ।
■ ধরুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা ভারতীয় পণ্য আমদানি করবে না। এই পরিস্থিতিতে, ভারতীয় রুপির চাহিদা তীব্রভাবে কমে যাবে।
ফলাফল: রুপি দুর্বল হবে।
■ কল্পনা করুন, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন। মুদ্রাস্ফীতি একটি মুদ্রার মূল্য কমিয়ে দেয়। যদি পাঁচ বছরের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মুদ্রাস্ফীতি শূন্যে নিয়ে আসে এবং ভারতের মুদ্রাস্ফীতি ৬% থাকে, তবে বিনিয়োগকারী ভারতের বাজারে নতুন বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে পারেন এবং এমনকি তাদের বিনিয়োগ ফিরিয়ে নিতে পারেন। এর ফলে রুপির চাহিদা কমে যাবে এবং রুপি ডলারের তুলনায় দুর্বল হবে।
এখন যা ঘটছে তা হলো বিনিয়োগকারীরা ভারতে বিনিয়োগ কমাচ্ছেন, ফলে রুপি দুর্বল হচ্ছে।
Leave a Reply