বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:১০ অপরাহ্ন

মনমোহন সিং, ভারতের অনিচ্ছুক প্রধানমন্ত্রী, ৯২ বছর বয়সে প্রয়াত

  • Update Time : শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৪.৩৫ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

ড. মনমোহন সিংযিনি ভারতের অর্থনীতিকে অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করার এবং শত শত মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যের অন্ধকার থেকে তুলে আনার কৃতিত্বের জন্য স্মরণীয়২৬ ডিসেম্বর হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স ছিল ৯২ বছর। তিনি বয়সজনিত শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।

ভারতের প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ড. সিংকে একজন অনিচ্ছুক রাজা” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। কিন্তু তার নেতৃত্বে ভারত একের পর এক সাফল্যের মুকুট অর্জন করেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “ড. মনমোহন সিং জির মৃত্যুতে ভারত তার অন্যতম সেরা নেতাকে হারিয়েছে।” তিনি ড. সিং-এর অর্থনীতিবিদ থেকে রাজনীতিবিদ হওয়ার পথচলার প্রশংসা করেন এবং ভারতের ১৯৯০-এর দশকের শুরুর অর্থনৈতিক উদারীকরণের অন্যতম স্থপতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তার মৃত্যুতে দেশব্যাপী সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

ড. সিং ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারত সরকার ২৭ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে জানায় যে, “প্রয়াত এই মহান ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য পুরো ভারতে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হবে।” জানুয়ারি ১২০২৫ পর্যন্ত শোক চলবে। এই সময় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

ভারতীয় ক্রিকেট দলযারা এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চতুর্থ টেস্ট খেলছে২৭ ডিসেম্বর মাঠে কালো আর্মব্যান্ড পরে ড. সিং-এর প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। যদিও রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নির্দিষ্ট তারিখ তৎক্ষণাৎ ঘোষণা করা হয়নিকংগ্রেস দলের এক সিনিয়র সদস্য জানিয়েছেনএটি সম্ভবত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

জীবনের প্রথম দিক এবং অর্থনৈতিক কৃতিত্ব

ড. সিং ব্রিটিশ শাসিত ভারতের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেনযা বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থিত। মোমবাতির আলোয় পড়াশোনা করে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা পান এবং পরে অক্সফোর্ডে গিয়ে ভারতের অর্থনীতিতে রপ্তানি ও মুক্ত বাণিজ্যের ভূমিকা নিয়ে ডক্টরেট সম্পন্ন করেন।

তিনি একজন স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর এবং সরকারের উপদেষ্টা হন। ১৯৯১ সালে অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়ে তিনি তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে তিনি ভারতে অর্থনৈতিক সংস্কারের পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার নেতৃত্বে ভারতে নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ ও মুক্ত বাণিজ্যের প্রচলন শুরু হয়যা দেশকে বৈশ্বিক অর্থনীতির অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নেতৃত্ব

২০০৪ সালে ড. সিং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেনযা তার জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল। সোনিয়া গান্ধীকংগ্রেস দলের নেত্রীতাকে দায়িত্ব নিতে বলেন। তার নেতৃত্বে ভারতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটে এবং নতুনভাবে অর্জিত এই সম্পদের মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পসহ একাধিক কল্যাণমূলক স্কিম চালু হয়।

২০০৮ সালে তার সরকারের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি হয়যা তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি বাণিজ্যের পথ সুগম করে। তবে তার অর্থনৈতিক সংস্কার উদ্যোগগুলো অনেক সময় তার দলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়।

সমালোচনা ও উত্তরাধিকার

যদিও ড. সিং বিশ্বনেতাদের মধ্যে প্রশংসিত ছিলেনদেশে তাকে প্রায়ই সোনিয়া গান্ধীর ছায়ায় পরিচালিত নেতা হিসেবে দেখা হত। তিনি সততা ও সরলতার জন্য খ্যাত ছিলেনকিন্তু তার দ্বিতীয় মেয়াদে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির কেলেঙ্কারি তার সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

২০১৪ সালে কংগ্রেস দল নির্বাচনে বিশাল পরাজয় বরণ করেএবং নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতায় আসে। মোদী দুর্নীতি দমন এবং গ্রামীণ ভারতে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় করেন।

সরকার থেকে বিদায়ের আগে এক প্রেস কনফারেন্সে ড. সিং বলেন, “আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি যে ইতিহাস আমার প্রতি আরও সদয় হবেবর্তমান মিডিয়া বা বিরোধী দলগুলোর তুলনায়।

ড. সিং তার স্ত্রী এবং তিন মেয়েকে রেখে গেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024