বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৪৪ অপরাহ্ন

আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের দুর্ঘটনা: রুশ ক্ষেপণাস্ত্র তত্ত্ব নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি

  • Update Time : শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭.২৩ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক 

আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট কাজাখস্তানের আক্তাউয়ের কাছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে ৩৮ জনের প্রাণহানি ঘটিয়েছে, এবং এর কারণ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে। এমব্রেয়ার ১৯০ উড়োজাহাজটি, যা বাকু থেকে গ্রোজনি, চেচনিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল, কুয়াশার কারণে পথ পরিবর্তন করে আক্তাউয়ে অবতরণ করতে গিয়ে আগুন ধরে যায় এবং ভেঙে পড়ে। এতে ২৯ জন যাত্রী বেঁচে গেলেও তারা বিভিন্ন আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

রুশ কর্মকর্তারা দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনো অনুমান করা ভুল হবে।” কাজাখস্তানের প্রধান প্রসিকিউটরও তদন্ত চলমান থাকার কথা জানিয়েছেন।

ক্ষেপণাস্ত্র তত্ত্ব নিয়ে বিতর্ক

তবে, আজারবাইজানের মিডিয়াগুলো, বিশেষত সরকার-সমর্থিত সূত্রগুলো, দাবি করছে যে রুশ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে আকাশে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিমানটি ভেঙে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা ক্ষেপণাস্ত্রের ছররা আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও আজারবাইজান সরাসরি রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেনি, তবে কর্মকর্তারা আশা করছেন যে মস্কো এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করবে।

বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের বর্ণনা

ফ্লাইটটিতে ৬৭ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের অধিকাংশই আজারবাইজানের নাগরিক। বাকিরা ছিলেন রাশিয়া, কাজাখস্তান এবং কিরগিজস্তানের। গ্রোজনিতে অবতরণের দুটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর, বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা জানিয়েছেন যে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছিল, যার পরে বিমানটি পথভ্রষ্ট হয় এবং ভেঙে পড়ে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় যে, বিমানটি উচ্চ গতিতে ভূমির দিকে নামছিল এবং রানওয়ে থেকে একটু দূরে ভেঙে পড়ে আগুন ধরে যায়।

কাজাখ কর্তৃপক্ষ ফ্লাইটের ডেটা রেকর্ডার উদ্ধার করেছে, তবে প্রাথমিক রুশ মিডিয়া রিপোর্টগুলো একটি পক্ষীর আঘাতের কারণে দুর্ঘটনার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছে। তবে, বিমান বিশ্লেষকরা এই তত্ত্ব প্রত্যাখ্যান করেছেন, কারণ এমন দুর্ঘটনাগুলো সাধারণত এভাবে ঘটে না।

ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

এই দুর্ঘটনা এমন এক সময় ঘটল যখন অঞ্চলটিতে সামরিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। চেচনিয়া, যেখানে গ্রোজনি অবস্থিত, সম্প্রতি ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।

ঝুঁকি পরামর্শ বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ক্রাম্প বলেছেন যে সক্রিয় রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, “ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের ছররার ধরণ দেখে এটাই মনে হয়।”

এটি রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে, যেমন কেন সামরিক কার্যক্রমের সময় বিমানসীমা বন্ধ করা হয়নি এবং কেন বিমানটিকে তৎক্ষণাৎ অবতরণ করতে দেওয়া হয়নি।

 আজারবাইজানের জাতীয় শোক

আজারবাইজান বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার শিকারদের সম্মানে জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে। প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এই ঘটনাকে “আজারবাইজান জনগণের জন্য এক বিরাট দুঃখ” বলে উল্লেখ করেছেন।

বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা, যাদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর আহত, স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সাতজনের অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ায় তাদের বাকুতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

আজারবাইজান এয়ারলাইন্স জানিয়েছে যে এমব্রেয়ার ১৯০ উড়োজাহাজটি অক্টোবরে সম্পূর্ণরূপে পরিষেবা করা হয়েছিল এবং এতে কোনো কারিগরি ত্রুটি ছিল না।

তদন্ত কমিটি, যেখানে আজারবাইজান ও কাজাখস্তানের প্রতিনিধিরা রয়েছেন, এই ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। মানব জীবন এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মতো বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে এই তদন্তের স্পষ্ট ব্যাখ্যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024