বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৩১ পূর্বাহ্ন

সচিবালয়ে আগুন নিয়ে যা জানা গেলো

  • Update Time : রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩.৪৭ পিএম

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় গুরুত্বপূর্ণ কেপিআইভুক্ত (কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন) স্থাপনায় বুধবার মধ্যরাতে আগুনে ভস্মীভূত গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ মন্ত্রণালয়ের নথি৷

শুক্রবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আট সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা প্রবেশ করেন৷ সেখানে তারা মিটিং করেন৷ কমিটির সদস্য সচিব ফায়ার সার্ভিসের ডিজি সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে৷ বলার মতো এখনও কিছু হয়নি৷

অন্যদিকে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য দু’টি কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়৷

এছাড়া আগুনের ঘটনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে৷

মাঝেমধ্যেই আগুন লাগে সচিবালয়ে

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, সচিবালয়ের পুরোনো কোনো ভবনই অগ্নি ঝুঁকিমুক্ত নয়৷ এর আগে মাঝেমধ্যেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে৷ তবে সেগুলোতে বড় কোনো ক্ষতি হয়নি৷

গত ১ আগস্ট সচিবালয় ক্লিনিক ভবনে (৯ নম্বর ভবন) নিচ তলায় সিঁডিকোঠায় বিদ্যুতের মেইন ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ডে (এমডিবি) আগুন লাগে৷ তবে সচিবালয়ের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাৎক্ষণিক আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হন৷ ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আগুনের ঘটনা ঘটে৷ ৬ নম্বর ভবনের সপ্তম তলায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৬০৬ নম্বর কক্ষে ফলস সিলিংয়ের সঙ্গে থাকা টিউব লাইটের স্টার্টারে আগুন লাগে৷ এতেও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি৷

এর আগে ২০১৯ সালের ৭ জুলাই সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সপ্তম ও অষ্টম তলার মাঝামাঝি স্থানে বৈদ্যুতিক বোর্ডরুমে আগুন লাগে৷ গ্যাস সরবরাহ লাইন থেকে ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর সচিবালয়ের ক্লিনিকের পেছনে গণমাধ্যমকেন্দ্রের সামনে উত্তর দিকের দেওয়ালে এ আগুন লাগে৷ ২০১৮ সালের ১৩  সেপ্টেম্বর ৪ নম্বর ভবনের সপ্তম তলায় ৬২৯ নম্বর কক্ষে আগুন লাগে৷

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সচিবালয়ের পুরোনো ৯টি ভবনের মধ্যে ৪, ৬ ও ৭- এ তিনটি ভবন সবচেয়ে বড়৷ ৭ ও ৪ নম্বর ভবন দুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ষাটের দশকে৷ ৬ নম্বর ভবনটির নির্মাণকাল আশির দশকের শেষ দিকে৷ এই তিনটি ভবনের সবকটিতেই বাইরের দিকে কোনো বারান্দা নেই৷ ৪, ৬ ও ৭ নম্বর ভবনের দুই পাশে রুম, মাঝে চলাচলের রাস্তা৷ কয়েক বছর আগে ১ নম্বর ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সবচেয়ে বড় ২১ তলাবিশিষ্ট ভবন ৬-এ প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও মন্ত্রিসভা কক্ষ স্থানান্তর করা হয়৷ তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অন্যান্য দপ্তর ১ নম্বর ভবনেই আছে৷

সাজসজ্জায় বেড়েছে অগ্নিঝুঁকি

সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার৷ সেসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অগ্নিঝুঁকি কমাতে নানান সুপারিশ করেছিল ফায়ার সার্ভিস৷ কিন্তু সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি৷ বরং সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের সংস্কারকাজ এমনভাবে করা হয়েছে, যা আগুন লাগার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বরে মনে করেন বিশ্লেষকেরা৷

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে অনেক মন্ত্রণালয়ে সংস্কারকাজ হয়েছে৷ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাজসজ্জার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ৷ কাঠ দাহ্য পদার্থ হওয়ায় তা আগুন লাগার ঝুঁকি অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ৭ নম্বর ভবনের আগুন ছড়িয়ে পড়ার একটি বড় কারণ হলো মন্ত্রণালয়গুলো কাঠ দিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করেছে৷

এদিকে সচিবালয়ের ভেতরে ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়িগুলো প্রবেশ করানো যায় না৷ গেইটগুলো এমনভাবে নির্মান করা হয়েছে যে, বড় গাড়ি সেখানে প্রবেশ করতে পারে না৷

এছাড়া হোসরিল পাইপ, ফায়ার অ্যালার্ম, ফায়ার ড্রিল এবং সব ফ্লোরে হাইড্র্যান্ট সিস্টেম স্থাপনের পরামর্শ দিয়ে গণপূর্ত বিভাগকে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস৷ সচিবালয়ের ভবনগুলো দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়৷ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বেশিরভাগ কর্মকর্তাই নতুন৷ ফলে আগে কী হয়েছে তারা জানেন না৷ তারা আসার পর তাদের সামনে এ বিষয়গুলো আসেনি৷

তার আগে ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি অগ্নিকাণ্ডের উদ্ধার সচেতনতার জন্য সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনে ‘অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার মহড়া’ চালায় ফায়ার সার্ভিস৷

সেসময় ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের তৎকালীন সহকারী পরিচালক ছালেহ উদ্দিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘‘সচিবালয়ে বড় কোনো অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলা করা কঠিন হবে৷ কারণ, সচিবালয়ের প্রবেশ গেটগুলো খুবই ছোট৷ এসব গেট দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে নেওয়া যায় না৷ সচিবালয়ের ভেতরে যেখানে চারশ গাড়ি পার্কিং রাখার জায়গা রয়েছে, সেখানে এক হাজার ২০০ গাড়ি পার্ক করা হয়৷ তাই যদি পিক আওয়ারে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে ফায়ার সার্ভিসের কোনো গাড়ি সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না৷’’

ডয়চে ভেলে বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024