বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন

শিশুদের নিউমোনিয়া চিকিৎসায় স্থানীয়ভাবে তৈরি, সাশ্রয়ী বাবল সিপ্যাপ

  • Update Time : রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৫.৩১ পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক 

শিশুদের নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় বাবল কনটিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার (বাবলসিপ্যাপ); স্থানীয়ভাবে তৈরি, সাশ্রয়ী মূল্যের একটি শ্বাস-প্রশ্বাস সহায়ক একটি উদ্ভাবনের সম্ভাবনা তুলে ধরতে আইসিডিডিআর,বি আজ একটি বিশেষ সেমিনার আয়োজন করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্যান্ডার্ড অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় বিসিপ্যাপ বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে এবং এটি সীমিত সম্পদযুক্ত অঞ্চলে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া সম্পর্কিত মৃত্যু হার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বাবল কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার (বিসিপ্যাপ): শিশুদের তীব্র নিউমোনিয়া চিকিৎসার জন্য স্থানীয়ভাবে তৈরি, সাশ্রয়ী মূল্যের এবং জীবন রক্ষাকারী একটি উদ্ভাবনবৈশ্বিক স্কেলআপ রোডম্যাপ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ডা. সায়েবা আক্তার, চেয়ারপারসন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল। সেমিনারে উপস্থিত অন্যান্য বিশেষ অতিথিরা হলেন প্রফেসর ডা. মেসবাহ উদ্দিন আহম্মেদ, সভাপতি, বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন এবং প্রফেসর ডা. মোঃ মাজহারুল শাহীন, অধ্যক্ষ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ।

কি-নোট প্রেজেন্টেশনে বারডেম জেনারেল হাসপাতাল (চাইল্ড ও মাদার উইং) এর পেডিয়াট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোঃ আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন,“আইসিডিডিআর,বি-তে পরিচালিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রমাণিত হয়েছে যে, বিসিপ্যাপ  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রস্তাবিত লো-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় ৭৫% মৃত্যু হার কমাতে সাহায্য করে। বিসিপ্যাপ এর মাধ্যমে চিকিৎসা প্রাপ্ত শিশুদের মধ্যে উচ্চ-ফ্লো এবং লো-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় চিকিৎসার ব্যর্থতার হার ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এর সহজ নকশা এবং সাশ্রয়ী উৎপাদন সত্ত্বেও, যন্ত্রটি অনেক উন্নত শ্বাস-প্রশ্বাস সহায়ক যন্ত্রের চেয়ে বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।”

তাঁর মূল বক্তব্যে, প্রফেসর ডা. সায়েবা আক্তার বলেন, “আমি সবসময় বাবল সিপ্যাপ এর কথা শুনেছি কিন্তু, আমার ধারণা ছিল না যে এটি এত ভাল কাজ করে। আমি আমাদের শিশু বিশেষজ্ঞদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি কেননা তারা এমন একটি দেশীয় উদ্ভাবনকে প্রচারে সহায়তা করছে। আমাদের যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে আমাদের নিজেদেরও সমস্যাটি সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়াও, আমি আইসিডিডিআর,বি-র প্রশংসা করি এই ধরনের উদ্ভাবন এবং বিজ্ঞানীদের সাথে কাজ  করার জন্য যারা মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।”

আইসিডিডিআর,বি-র এর নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, “বাবল সিপ্যাপের সাফল্য স্থানীয়ভাবে তৈরি উদ্ভাবনগুলোর প্রভাবের একটি স্বাক্ষ্য। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে বাংলাদেশে এর ব্যবহার বৃদ্ধি করা, যাতে নিউমোনিয়া থেকে আমাদের দেশের আরও শিশুর জীবন রক্ষা করা যায়।”

আইসিডিডিআর,বি-র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ডা. মোহাম্মদ জুবায়ের চিশতী বলেন, “আমাদের গবেষণা যার মধ্যে বাংলাদেশ এবং ইথিওপিয়ায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রয়েছে সেটি  প্রমাণ করেছে যে বাবল সিপ্যাপ অনেক প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে বেশি কার্যকর। ইতিমধ্যে আফ্রিকার ৩৭টি – ইথিওপিয়া তে ২৪টি, নাইজেরিয়া তে ১২টি এবং মালাউইতে একটি হাসপাতালে ইমপ্লেমেন্টেশন রিসার্চের মাধ্যমে আমাদের প্রযুক্তির বহুল ব্যভহার শুরু হয়েছে। এখন বাংলাদেশ এবং এশিয়ার দেশগুলোতেওএই জীবন রক্ষাকারী উদ্ভাবনের ব্যবহার বৃদ্ধি করা উচিত।”

সেমিনারে ইথিওপিয়ায় বিসিপ্যাপের সফল বাস্তবায়ন সম্পর্কেও তুলে ধরা হয়। জেলা পর্যায়ের ১২টি হাসপাতালে পরিচালিত কার্যকারিতা এবং সম্ভাব্যতা পরীক্ষার পর দেখা যায়, বিসিপ্যাপ, সাধারণ লো-ফ্লো অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় ৭৪% চিকিৎসা ব্যর্থতা এবং ৮৬% মৃত্যু হার কমাতে সহায়ক হয়েছে।

ইথিওপিয়ায় পাওয়া সাফল্য এবং বাংলাদেশের চলমান প্রচেষ্টাগুলোর মাধমে বিসিপ্যাপ বৈশ্বিকভাবে নিউমোনিয়া সম্পর্কিত মৃত্যুহার কমাতে নিশ্চিতভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত। আইসিডিডিআর,বি-র লক্ষ্য অনুযায়ী নেপাল এবং অন্যান্য দেশে এর ব্যবহার সম্প্রসারণ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র-৩ অর্জনের ক্ষেত্রেও অবদান রাখবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024