ম্যাকসিম গোর্কী
একটি চিঠি
তিনি সেই মানুষ, যিনি বিধাতার সন্ধান করেছেন, নিজের জন্যে নয়, সমস্ত মানুষের জন্যে। তিনি ভগবানের কাছে দাবী করতে চেয়েছেন মানুষের নিজের কোনো নির্বাচিত এক নির্জন মরুর নিঃসংগ একটি কোণে শান্তিতে বাস করার অধিকার। তিনি খুস্টের জীবনের লীলাকাহিনীগুলিকে পরিত্যাগ করেছিলেন, আমরা যাতে খৃস্টের জীবনের স্বতঃবিরুদ্ধতাগুলিকে ভুলে যেতে পারি, তাই।
তিনি সহজ সংক্ষিপ্ত ক’রে দিয়েছেন খৃস্টের মুর্তিকে, তার কঠিন উদ্ধত অংশগুলিকে ক’রে দিয়েছেন মসৃণ, চিকন, সম্মুখে উপস্থাপিত করেছেন সেই “বিনতি-ভরা যিনি তাঁকে পাঠিয়েছিলেন, তাঁরই ইচ্ছাকে।” টলস্টয় খৃস্টের যে লীলাকাহিনী প্রচার করেছেন, তা জনসাধারণের কাছে অপেক্ষাকৃত সহজে গ্রাহ্য হবে, কারণ সেটাই রুশ জনসাধারণের “ব্যাধির পক্ষে আরামপ্রদ”। জন-সাধারণকে তাঁর কিছু দেওয়া চাই-ই। কারণ, তারা অনুযোগ করে, আর্ত চীৎকারে পৃথিবী মাথায় করে এবং তাঁর “পরমতমের” নিবিষ্ট চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটায়।
কিন্তু “যুদ্ধ ও শান্তি” উপন্যাস বা ঐ ধরণের কিছু ধূসর বিবর্ণ বস্তু রুশ দেশের দুঃখ নৈরাশ্যকে প্রশমিত করতে পারে না। তাঁর “যুদ্ধ ও শান্তি” উপন্যাস সম্পর্কে, তিনি নিজে বলেন: “মিছে বিনয় ছেড়ে বলি, ওটা হোলো ইলিয়াডের মতন।” তাঁর “শৈশব” ও “যৌবন” সম্পর্কেও ওই ধরণের একই প্রশংসিত মন্তব্য এম. ওয়াই. তচাইকোভস্কি তাঁর নিজের মুখ থেকেই শুনেছেন।
নাপল্স থেকে সাংবাদিকরা এসে পৌঁচেছেন; এমন কি একজন তাড়াতাড়ি চ’লে এসেছেন রোম থেকে। টলস্টয়ের “পলায়ন” সম্পর্কে আমার কি মতামত, তাই তাঁরা প্রশ্ন করছেন। “পলায়ন”-পলায়ন কথাটাই তাঁরা ব্যবহার করছেন সবাই। আমি ওঁদের সংগে আলাপ করবো না। তুমি, অবশ্য, বুঝতেই পারছ, আমার আভ্যন্তরিক শান্তি ভয়ানকভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে: টলস্টয়কে আমি সন্ত হিসাবে দেখতে চাই না।
আমি চাই এই সর্ব-পাপে-ভরা পৃথিবীর অন্তরের সংগে নিবিড় হ’য়ে পাপীরূপেই তিনি থাকুন, এমন কি থাকুন তিনি আমাদের প্রত্যেকের অন্তরের সংগে নিবিড় হয়ে। পুশকিন এবং তিনি-এ দুই-এর চেয়ে কোনো মহত্তর, কোন প্রিয়তর বস্তু আমাদের কাছে নেই।
লিও টলস্টয়ের মৃত্যু হয়েছে। একটি টেলিগ্রাম এসে পৌঁছলো, অতিসাধারণ কটি কথা-মৃত্যু হ’য়েছে।
Leave a Reply