সারাক্ষণ ডেস্ক
গত চার বছর ধরে মৌমাছি পালন সানিয়া জেহরার জীবনের অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন সকাল ছয়টার দিকে ঘুম থেকে উঠে তিনি প্রথমে তাঁর মৌ-কলোনিগুলো দেখভাল করেন, তারপর বাকি দিন জুড়ে সেই উদ্যোগটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করেন—যে উদ্যোগই তাকে কাশ্মীরের “মৌ রানি” হিসেবে খ্যাতি এনে দিয়েছে।
জেহরার মৌমাছি পালনের যাত্রা শুরু হয়েছিল যখন তিনি মাত্র ১৬ বছরের কিশোরী। তখন তিনি ভারতীয় কাশ্মীরের বালহামায় পারিবারিক খামারে তাঁর বাবাকে কঠোর পরিশ্রম করতে দেখতেন।
“আমি প্রথমে আমার দাদাকে মৌমাছি নিয়ে কাজ করতে দেখি, পরে বাবাকেও একই কাজ করতে দেখি। বাবার পরিশ্রম দেখে আমিও পাশে দাঁড়াতে এবং তাঁকে সাহায্য করতে চাই,” জেহরা আরব নিউজকে জানান।
মৌমাছির হুলের ভয় কাটিয়ে উঠে তিনি কাজ শুরু করেন এবং সরকারি একটি প্রকল্পে আবেদন করেন, যা তাঁর ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা করে।
তবে সব সময় এত মসৃণ ছিল না—শুরুর দুই বছর লাভ করা ছিল কঠিন। তাঁকে সারাক্ষণ মৌমাছি পালন, পণ্য বিক্রি—দু’দিক একসঙ্গে সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
কিন্তু শত পরিশ্রমের ফলস্বরূপ, কয়েকশো মৌ-কলোনি সামলে তিনি “মৌ রানি” উপাধি অর্জন করেছেন। এখন তাঁর পণ্য সারা দেশে বিক্রি হচ্ছে। জেহরা বলেন, “আমি সারা ভারতজুড়ে পণ্য বিক্রি করছি। এমনকি সৌদি আরব, পাকিস্তান, দুবাই, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাতারসহ বিভিন্ন জায়গা থেকেও অর্ডার পাচ্ছি।”
২০ বছর বয়সী জেহরার কাছে মৌমাছি পালন একাধিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এটি পরিবেশের সুরক্ষায় অবদান রাখে এবং পরিবারের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার সুযোগ করে দেয়।
কাশ্মীরের বেশিসংখ্যক নারী এখন নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করছেন, অনেকেই সরকারের নানা প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি গ্রহণ করছেন। এই সমাজে আজও নারী উদ্যোক্তাদের পথে নানা সামাজিক বাধা থাকলেও, জেহরা পরিবার—বিশেষত তাঁর মায়ের—সম্পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমার মা আমাকে wholeheartedly সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে থাকলেও তুমি ছেলেদের থেকে অনেকদূর এগিয়ে গেছ, আর কোনো নারী চাইলে তার পথ আটকে রাখতে পারে না।’ আমার কাছে এটি কেবল পেশাই নয়, পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখার আকাঙ্ক্ষাও। মৌমাছির সামাজিক জীবনযাপন ও বাস্তুতন্ত্রে তাদের ভূমিকা আমাকে বরাবরই মুগ্ধ করেছে। আমি তাদের সুরক্ষায় কাজ করতে চাই, প্রাকৃতিক মধু উৎপাদন করতে চাই, প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ রাখতে চাই। তারা আমাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা জোগায়।”
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি উপলব্ধি করেছেন, মৌমাছি পালন শুধু মানসিক প্রশান্তিই দেয় না, কাশ্মীরের উদ্যোক্তা পরিবেশকে সমৃদ্ধ করতেও সহায়তা করে।
Leave a Reply