প্রিয়াঙ্কা শঙ্কর
নভেম্বরের শেষের দিকে পশ্চিম নেপালের মনোরম শহর পোখারার একটি খোলা মাঠে প্রায় ৬০ জন কিশোর সকালের ঠান্ডায় শরীর গরম করতে দাঁড়িয়ে ‘জাম্পিং জ্যাক’ করার ছন্দময় শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।ওই কিশোরদের প্রশিক্ষক তাদের ব্রিটিশ সেনাবাহিনী বা সিঙ্গাপুর পুলিশের গুর্খা নিয়োগ কর্মসূচির পরবর্তী ধাপে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি দিচ্ছেন।
মধ্য নেপালের একটি শহর থেকে আসা ১৯ বছর বয়সী শিশির ভট্টারি, পোখারায় সালুট গোরখা ট্রেইনিং সেন্টারের মালিকানাধীন ওই মাঠে অনুশীলন করছেন।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “ছোটবেলা থেকে আমি যে কোনো সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছি। আমার এই স্বপ্নটা মূলত মায়ের উৎসাহ থেকেই এসেছে। যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তাম, ব্রিটিশ আর্মির এক সদস্য আমাদের স্কুলে এসে কীভাবে তাদের নিয়োগ-প্রক্রিয়া চলে, সে সম্পর্কে বলেছিলেন। তাদের ‘ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্ট’ নির্বাচন পদ্ধতিতে আমি মুগ্ধ হই এবং তখন থেকেই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার লক্ষ্য স্থির করি।”
তিনি আরও বলেন, “ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আমার ইচ্ছে ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। বহু গুর্খা [প্রধানত নেপালের স্থানীয় সৈনিক] ভারতের পক্ষে লড়েছেন, তাই পূর্বপুরুষদের সেই ঐতিহ্য ধরে রাখার ইচ্ছা আমারও আছে। আমি বলিউডের ‘শেরশাহ’ ছবিটি খুব পছন্দ করি, যেটিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গল্প রয়েছে। ছবিটি দেখে আমার অনুপ্রেরণা আরও বেড়ে যায়।”
কিন্তু শিশিরের মতো তরুণদের কাছে এখন আর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পথ খোলা নেই, কারণ ২০২২ সালে নয়াদিল্লি নতুন নিয়োগ নীতিমালা চালু করার পর নেপাল সরকার প্রতিবাদস্বরূপ সেই গুর্খা নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্থগিত রাখে।
শিশির বলেন, “এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। আগে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী বা সিঙ্গাপুর পুলিশের জন্য নির্বাচিত হতে না পারলেও ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চেষ্টা করার সুযোগ থাকত। আমি আশা করি, ভারত নিয়ম বদলাবে। অনেকেরই কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।”
বিশ্বের অন্যতম দুর্ধর্ষ যোদ্ধা
গুর্খারা ‘বিশ্বের অন্যতম দুর্ধর্ষ যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচিত এবং কয়েক দশক ধরে তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি শাখা হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান থেকে আসা সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারগিল যুদ্ধসহ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অনেক যুদ্ধে তারা অংশ নিয়েছে।
ভারতে গুর্খাদের উপস্থিতি ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, উপমহাদেশ ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থাকাকালীন, শুরু হয়। তখন তাদের নিয়োগ করত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৭ সালে ভারত, যুক্তরাজ্য ও নেপালের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় এক চুক্তির বলে গুর্খাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নিয়োগের ধারা অব্যাহত থাকে।
কিন্তু ২০২২ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের সশস্ত্র বাহিনীর নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার পর ওই চুক্তি অচল হয়ে পড়ে।
“Agnipath” (অগ্নিপথ) নামের নতুন নিয়োগব্যবস্থা জুন ২০২২-এ চালু হয়। এর আওতায় ১৭ বছর ছয় মাস থেকে ২১ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের চার বছরের একটি সীমিত মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষে একটি নির্বাচিত অংশ — প্রায় এক-চতুর্থাংশ — স্থায়ী চাকরিতে বহাল থাকে। বাকিরা অবসর গ্রহণ করে এবং তারা পেনশন পাবে না।
এর আগে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে গুর্খাদের গড়ে ১০ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ ছিল। ২০২২ সালের আগস্টে কাঠমান্ডু জানায়, নতুন স্কিম বিষয়ে ভারত নেপালকে পরামর্শ না করে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। তাই তারা সাময়িকভাবে গুর্খা নিয়োগ বন্ধ রাখে। সে সময় নেপালের সরকারপ্রধান ছিলেন পুষ্পকমল দাহাল (বর্তমানে বিরোধী দলের নেতা)।
প্রায় ৩০ বছর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে গুর্খা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অবসরপ্রাপ্ত অনারারি ক্যাপ্টেন কৃষ্ণ বাহাদুর (বর্তমানে সালুট গোরখা ট্রেইনিং সেন্টারের প্রধান প্রশিক্ষক) নতুন এই ‘অগ্নিপথ’ ব্যবস্থাকে “পুরোপুরি রাজনৈতিক” বলে বর্ণনা করেন।
তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “এটি নেপালের তরুণদের কর্মসংস্থানে বড় ধাক্কা দিয়েছে। এখানে যারা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যাওয়ার সুযোগ পেত, এখন তারা বেকার থাকার আশঙ্কায় পড়বে। নেপালের সেনাবাহিনীর বেতন খুবই কম, তাই অনেকেই বিদেশি সশস্ত্র বাহিনীতে যেতে চায়।”
ভারতের কিছু প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক মনে করেন, অগ্নিপথ স্কিমের মাধ্যমে মোদি সরকার প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় কমিয়ে সামরিক আধুনিকীকরণের দিকে এগোতে চাইছে।
তবে জুলাই মাসে ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনকালে মোদি বলেন, এই স্কিম অর্থ সাশ্রয়ের জন্য নয়, বরং সেনাবাহিনীরই প্রকল্প। তিনি উল্লেখ করেন, “এটি দেশের শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং সামর্থ্যবান তরুণেরা মাতৃভূমির সেবায় এগিয়ে আসবে।”
ভারতীয় বিরোধী দলের নেতারা, বিশেষ করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, মোদিকে “শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মতো মুহূর্তেও রাজনীতি করা”র অভিযোগ এনে এই নিয়োগ ব্যবস্থা বাতিলের দাবি জানান।
গুর্খাদের আর্থিক উপকার
৫০টি পুশ-আপ করতে থাকা তরুণদের পর্যবেক্ষণকালে কৃষ্ণ বাহাদুর জানালেন যে তিনি নিজেও ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার কারণে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমার বাবা ও দাদাও সেনাবাহিনীতে ছিলেন, সেটি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। কিন্তু আমি চাইছিলাম ভালো উপার্জন করতে, আর সে দিক থেকে ভারতই ছিল সবচেয়ে ভালো সুযোগ। ভারতে শিক্ষা ব্যবস্থাও ভালো, তাই বিভিন্ন পোস্টিংয়ে আমার ছেলে-মেয়েরা সেখানে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এখন তারা ভারতে ভালো চাকরি করছে। আমি চাই, আজকের এই তরুণরাও এমন সুযোগ পাক।”
বর্তমানে প্রায় ৩২,০০০ গুর্খা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত। বাহাদুরের হিসেব অনুযায়ী, নেপাল নিয়োগ বন্ধ করার আগে প্রতি বছর ১,৩০০ থেকে ১,৫০০ গুর্খা তরুণ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিতেন।
তিনি বলেন, “আমরা কঠোর প্রশিক্ষণ দিই, যা ছেলেদের বিশ্বের যে কোনো সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার উপযোগী করে তোলে। শারীরিক অনুশীলনের মধ্যে বিখ্যাত ‘দোকো’ বহন অন্তর্ভুক্ত থাকে — একটি বাঁশের ব্যাগে ১৫ কেজি ওজনের বালু ভরে হিমালয়ের উঁচু পথে দৌড়ে ওঠার প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য গণিত থেকে সাধারণ জ্ঞান পর্যন্ত তাত্ত্বিক ক্লাসও করাই।”
তিনি আরও বলেন, “প্রশিক্ষণ সহায়ক, তবে আমরা গুর্খারা জন্মগতভাবেই লড়াকু, নির্ভীক, অনুগত এবং শৃঙ্খলাপরায়ণ। যে কোনো সেনাবাহিনীর জন্যই আমরা সম্পদ।”
২০ বছর বয়সী উজ্জ্বল রাই পূর্ব নেপালের ওখলঢুঙ্গা জেলা থেকে এসেছেন। রাই সম্প্রদায়ের লোকেরা সারা বিশ্বে বিভিন্ন সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত।
উজ্জ্বল বলেন, “আমাদের সম্প্রদায় মূলত পূর্ব নেপালে। আমরা জন্মগতভাবে লড়াকু। গুর্খা সৈনিকরা আমাদের রক্তে রয়েছে।”
কালো-লাল জ্যাকেট ও হাফপ্যান্ট পরে পুল-আপ করার সময় তিনি তার দাদার কথাও স্মরণ করেন, যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।
উজ্জ্বল বলেন, “তিনি আমাকে বলতেন, কী ধরনের যুদ্ধের জন্য তাদের প্রস্তুতি নিতে হয়। আবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেসে খাবারের কথাও বলতেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারলে ভালো লাগত, কিন্তু এখন সেই সুযোগ আর নেই। তাই সিঙ্গাপুর পুলিশের জন্যই প্রশিক্ষণ নিচ্ছি।”
প্রতি বছর ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়ে প্রায় ২০,০০০ গুর্খা আবেদন করে, যার মধ্যে ২০০-৩০০ জন নির্বাচিত হয়। বর্তমানে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ৪,০০০-এর বেশি গুর্খা কর্মরত। অন্যদিকে সিঙ্গাপুর পুলিশের গুর্খা শাখায় প্রায় ২,০০০ গুর্খা রয়েছেন, এবং প্রতি বছর সেখানে প্রায় ১৫০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নেপালে কর্মসংস্থানের অভাব
নেপালে চাকরির পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় অনেক তরুণ বিদেশে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া পেশা হিসেবে বেছে নেন। জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের জুন মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নেপালে বেকারত্বের হার ১২.৬ শতাংশ।
নেপালের ১৯ বছর বয়সী প্রিয়াশ গুরুং, যিনি পোখারায় ব্রিটিশ গুর্খা ট্রেইনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেন, বলেন, “নিজের দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া অবশ্যই সম্মানের। কিন্তু নেপালের সেনাবাহিনীতে থেকে তেমন অর্থ রোজগার করা যায় না। আমি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি, যাতে আমার পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারি।”
কৃষ্ণ বাহাদুরের হিসেবে নেপালে একজন সৈনিকের মাসিক প্রাথমিক বেতন প্রায় ২৭,০০০ থেকে ৩০,০০০ নেপালি রুপি (প্রায় ১৯৯ থেকে ২২১ ডলার)। অন্যদিকে সিঙ্গাপুর পুলিশে নতুন সৈনিকের মাসিক বেতন ৩,০০০ ডলারের ওপরে।
তিনি বলেন, “অনেক ছেলে-ই দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। তাই ওই পরিমাণ বেতন তাদের জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।”
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক গুর্খা এবং ব্রিটিশ গুর্খা ট্রেইনিং সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়া প্রকাশ গুরুংয়েরও একই মত। তবে তিনি যোগ করেন, “বিদেশি সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সুবিধা থাকলেও বৈষম্য এখনো আছে।”
তিনি বলেন, “আমরা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যখন ছিলাম, একজন ব্রিটিশ সৈনিকের চেয়ে নেপালি গুর্খারা কম বেতন পেত। এ নিয়ে আন্দোলনের পর এখন কিছু সংস্কার হয়েছে, যাতে সমতা নিশ্চিত হয়।”
ভারতীয় নতুন নিয়োগব্যবস্থাকে “বৈষম্যমূলক” আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “চার বছর পর একজন তরুণ কী করবে? আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ছিলাম। নেপাল ও ভারতের সরকারকে বসে আলোচনা করা দরকার, যাতে আমাদের তরুণদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয়।”
রাশিয়ার দিকে ঝোঁক
ব্রিটিশ সেনাবাহিনী বা সিঙ্গাপুর পুলিশের নিয়োগে যদি চান্স না মেলে, তখন আরও ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্প হিসেবে কিছু তরুণ উচ্চ আয়ের আশায় রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
নেপাল ও রাশিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সেনা নিয়োগ চুক্তি নেই। তবে সরকারি পরিসংখ্যান না থাকলেও, একাধিক প্রতিবেদনে (উদাহরণস্বরূপ CNN) বলা হয়েছে, রাশিয়া প্রায় ১৫,০০০ নেপালি ভাড়াটে সৈন্য নিয়োগ করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০ জন নেপালি নিহত হয়েছে।
রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে অবস্থানরত রমেশ বিষ্কর্মা (ডায়মন্ড নামে পরিচিত) জানান, তিনি আর্থিক কারণে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। এর আগে তিনি নেপালের মাওবাদী পিপলস লিবারেশন আর্মিতে ব্যাটালিয়ন কো-কমান্ডার ছিলেন।
আল জাজিরাকে তিনি বলেন, “আমি নেপালের মাওবাদী ‘পিপলস ওয়ার’-এ (১৯৯৬-২০০৬) অংশ নিয়েছিলাম। যুদ্ধ শেষে ২০০৮ সালে মাওবাদী সেনাদের নেপালের জাতীয় সেনাবাহিনীতে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হলে আমি আমার স্ত্রী ও ভাইকে নিয়ে স্বেচ্ছায় অবসর নিই। পরে কৃষিকাজ, পশুপালন ও একটি ছোট মুদির দোকান চালিয়ে সংসার চালাই।”
কিন্তু নেপালে ওই আয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই রমেশ আবারও সশস্ত্র বাহিনীতে ফিরতে চান, এবার রাশিয়ায়।
তিনি বলেন, “মস্কো পৌঁছে দেখি, বিদেশিদের জন্য কীভাবে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া যায়, সেই প্রচারপত্র চারদিকে। ওখানে ঠিকানা ও প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া ছিল। আমি ট্যাক্সি নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রীয় নিয়োগকেন্দ্রে যাই। একজন ইংরেজি-জানা ব্যক্তি বিদেশি নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন।”
তিনি জানান, “আমি মাসে ২১০,০০০ রুবল (প্রায় ২,০৮৮ ডলার) বেতন পাই। এর সঙ্গে আমি কতদিন যুদ্ধে থাকি, তার ওপর ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ভাতা যুক্ত হয়। ওই অর্থ একটি সরকারি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আসে, যা রুশ সেনাবাহিনীর আওতায়। আমি সেখান থেকে এক বন্ধুকে পাঠাই, যিনি মস্কোতে থাকেন। তিনি পরে নেপালে আমার পরিবারের কাছে টাকা পাঠিয়ে দেন।”
রমেশ আরও বলেন, তিনি একসময় কমিউনিস্ট আদর্শের পক্ষে অস্ত্র ধরেছিলেন। রাশিয়ার বিপ্লবের ইতিহাস তাকে অনুপ্রাণিত করে। তাই “অর্থ, সম্মান ও আত্মতৃপ্তি” একত্রে পাবেন ভেবে তিনি রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়াকেই শ্রেয় বলে মনে করেছেন।
অন্যদিকে, ক্যাপ্টেন কৃষ্ণ বাহাদুর জানান, কিছু নেপালি রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগ দিচ্ছে বলে শুনেছেন বটে, তবে তার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এমন কাউকে পাননি।
তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, “যারা ব্রিটিশ সেনাবাহিনী বা সিঙ্গাপুর পুলিশের জন্য নির্বাচিত হয় না, তারা পড়াশোনা বা অন্য পেশা বেছে নিতে পারে।”
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেমন হতে পারে?
ভারত ও নেপালের মধ্যে অগ্নিপথ নিয়ে আলোচনা এখনো অচলাবস্থায়। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী নেপাল সফরে সামরিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বললেও অগ্নিপথ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেননি। এদিকে নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিকে নয়াদিল্লি চীনের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করে, যার জেরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে।
নেপাল সরকার আল জাজিরার প্রশ্নের উত্তরে জানায়নি যে তারা আবার ভারতীয় সেনাবাহিনীতে গুর্খা নিয়োগের অনুমতি দেবে কি না।
পোখারায় তাদের অনুশীলনের মাঠে শিশির ও উজ্জ্বল বলছেন, ভবিষ্যতে সরকারগুলো কী সিদ্ধান্ত নেয় কিংবা নিয়মই বদলে যায়, গুর্খা সৈনিকদের কাছে সব সেনাবাহিনীর মর্যাদাই সমান।
“আমরা গুর্খা। আমাদের আদর্শ ‘ক coward হওয়ার থেকে মরা ভালো’ – এই সূত্রেই আমরা লড়াই করি। আমরা যেকোনো বাহিনীর সঙ্গেই সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে যুদ্ধ করে যাব,” শিশির বলেন, আর উজ্জ্বল তার সঙ্গে মিলে ডোকো বয়ে কঠোর অনুশীলন চালিয়ে যায়।
Leave a Reply