সারাক্ষণ ডেস্ক
১৮ ডিসেম্বর, মুম্বাই উপকূলের আরব সাগরে একটি ফেরি এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি স্পিডবোটের সংঘর্ষে ১৫ জন প্রাণ হারান। এই ঘটনা নিরাপত্তা এবং নৌবাহিনীর উদাসীনতার অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। স্নেহল মুথা এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহনের সমস্যার উপর প্রতিবেদন করেছেন।
“আমরা স্পিডবোটের গতির সীমা এবং সম্ভাব্য দুর্ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলাম।”
ইকবাল মুকাদম
জল পরিবহন সমবায় সংস্থা
“আমি যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছালাম, দেখি প্রায় ৯৫% ফেরি ডুবে গেছে। প্রায় ৫০ জন, যার মধ্যে শিশুরাও ছিল, পানির ওপরে ভেসে থাকা সামান্য অংশে আটকে ছিল।”
অনমল শ্রীবাস্তব
জেএনপিএ পাইলট বোটের ক্যাপ্টেন
১৮ ডিসেম্বর: এক মর্মান্তিক দিন
১৭ বছর বয়সী তন্বী ওয়াকচউরে তার বাবা দীপচাঁদকে শেষবার দেখেছিলেন ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে। ৪৫ বছর বয়সী এই প্লাম্বার মুম্বাইয়ের গোবন্দি এলাকায় তন্বীকে কলেজে নামিয়ে দেন। কিন্তু দীপচাঁদ জানিয়েছিলেন না, তিনি পরবর্তী কোথায় যাচ্ছেন।
রাতে বাড়ি না ফেরায় দীপচাঁদের পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ফোনের মাধ্যমে জানতে পারে, দীপচাঁদ একটি ফেরি ধরে এলিফ্যান্টা দ্বীপে গিয়েছিলেন। এলিফ্যান্টা দ্বীপ, যা গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া থেকে ৯ নটিক্যাল মাইল দূরে, ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৩,০০০ পর্যটক ভ্রমণ করেন।
নৌবাহিনীর স্পিডবোটের ধাক্কা
বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে, এলিফ্যান্টা দ্বীপের কাছেই নৌবাহিনীর একটি স্পিডবোট যাত্রীবাহী ফেরি “নীল কমল”-এর সাথে ধাক্কা লাগে। ফেরিটি ডুবে যায়। দুর্ঘটনায় দীপচাঁদসহ ১৩ জন মারা যান। পরে নিখোঁজ থাকা আরও দুইজনের মরদেহ উদ্ধার হয়, এবং মৃতের সংখ্যা ১৫-এ পৌঁছায়।
অতিরিক্ত যাত্রী ও উদ্ধার অভিযান
ঘটনার সময় ফেরিটিতে প্রায় ১১০-১১৫ জন যাত্রী ছিলেন, যদিও ফেরিটির ধারণক্ষমতা ছিল ৮০ জন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুর্ঘটনার পর ফেরির অনেক যাত্রী জীবনজ্যাকেটের অভাবে ডুবে যান।
উদ্ধার অভিযান দ্রুত শুরু হয়। সিআইএসএফ পেট্রল বোট, জেএনপিএ পাইলট বোট, এবং নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার সহ প্রায় ২০টি উদ্ধার যানবাহন ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করা হয়।
নৌবাহিনীর বিবৃতি ও তদন্ত
ভারতীয় নৌবাহিনী জানিয়েছে, স্পিডবোটটি ইঞ্জিনের পরীক্ষার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরির সাথে ধাক্কা লাগে। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
মৃত্যুর কারণ ও আর্থিক সহায়তা
মৃতদের ময়নাতদন্তে জানা গেছে, মৃত্যুর কারণ ছিল ডুবে শ্বাসরোধ হওয়া। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী মৃতদের পরিবারকে ₹৫ লক্ষ এবং আহতদের ₹৫০,০০০ অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবহন মালিকদের অভিযোগ
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, নৌবাহিনী ফেরির চলাচলের পথে ট্রায়াল পরিচালনা করে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করে। দুর্ঘটনার কয়েকদিন আগেই এ বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছিল।
বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের মানসিক আঘাত
বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। একজন নতুন বিবাহিত দম্পতি জানিয়েছেন, তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো জলযানে উঠবেন না।
উপসংহার
এই দুর্ঘটনা একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—ফেরির অতিরিক্ত যাত্রী বহন, নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাব, এবং নৌবাহিনীর দায়িত্বশীলতার অভাব। উদ্ধারকাজ সত্ত্বেও, এটি এক অমার্জনীয় ক্ষতির স্মারক হয়ে থাকবে।
Leave a Reply