বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন

রাতের প্রাণীরা: পৃথিবীর  পরিবেশ রক্ষায় বাদুড়ের অপরিহার্য ভূমিকা

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১.১০ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

তাদের বেশিরভাগই রাতের প্রাণী। কিছু বাদুড় রক্ত পান করে, কিন্তু তারা সবাই পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বাদুড়কে ভয় বা অবজ্ঞার চোখে দেখা নয়, বরং তাদের প্রশংসা করা উচিত, কারণ তারা আমাদের গ্রহের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

“কিছু প্রজাতি পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী বা এমনকি অন্যান্য বাদুড়ও খায়। তিনটি প্রজাতি রক্ত পান করে।”
বাদুড়ের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরে নেতিবাচক মনোভাব ছিল। তাদের রাতের জীবনযাপন, অদ্ভুত চেহারা এবং আচরণ তাদের প্রতি একটি শয়তানসুলভ ধারণা তৈরি করেছে। ১৭০০ সালের দিকে ইউরোপে রক্তচোষা, রূপান্তরিত হওয়া ভ্যাম্পায়ার বাদুড়ের গল্প জনপ্রিয় ছিল। ব্রাম স্টোকারের ১৮৯৭ সালের উপন্যাস ড্রাকুলা এই নেতিবাচক ধারণাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। সাম্প্রতিক সময়ে, করোনাভাইরাস মহামারীর সময় উড়ন্ত এই স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলিকে ভাইরাস ছড়ানোর জন্য দায়ী করা হয়েছিল।

তবে বাদুড় বিশ্বের সবচেয়ে অবিচারিত প্রাণীগুলোর মধ্যে একটি। তারা যখন প্রকৃতপক্ষে, মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যার অধ্যাপক রদ্রিগো মেদেলিনের মতে, “আমাদের সেরা বন্ধু।”

তারা পুরো পরিবেশব্যবস্থার মঙ্গল সাধনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন, যখন জলবায়ু পরিবর্তন তাদের বড় পরিমাণে বিলুপ্ত করছে, আমরা হয়তো তাদের গুরুত্ব বুঝতে অনেক দেরি করে ফেলেছি।

চরমত্বের উদাহরণ

বাদুড় হলো প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। তারা উল্টে ঝুলে ঘুমায়, তাদের মজবুত হাত পাখায় পরিণত হয়েছে এবং তারা এত চৌকস এবং দক্ষ উড়ানদক্ষ প্রাণী যে, কিছু প্রজাতি প্রতি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার (১০০ মাইল) গতিতে উড়তে পারে। দেহের আকারের তুলনায় তারা পৃথিবীর দীর্ঘায়ু স্তন্যপায়ী প্রাণী। এবং দীর্ঘজীবন লাভ করেও তারা সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে।

তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি খুবই কম এবং তারা মারাত্মক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও অসুস্থ হয় না। তাদের উন্নত বায়োসোনার ক্ষমতা রয়েছে, যা তাদের আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে চারপাশের অবজেক্টের প্রতিধ্বনি শুনে একটি শ্রবণচিত্র তৈরি করতে সাহায্য করে – যেন কান দিয়ে দেখা।

খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশে ভূমিকা

বাদুড় খাদ্যের অভাবে তাদের বিপাক প্রক্রিয়া কয়েক দিন বা সপ্তাহের জন্য কমিয়ে দিতে পারে। আর যখন খাবার পাওয়া যায়, তখন তাদের খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। কিছু প্রজাতি পাখি, স্তন্যপায়ী বা অন্যান্য বাদুড় খায়। তিনটি প্রজাতি রক্ত পান করে। কিছু প্রজাতি রসালো ফল খেতে পছন্দ করে, যা তাদের ৫৫০ প্রজাতির উদ্ভিদের বীজ পরাগায়নের কাজ করে।

“বাদুড় বিশ্বের ক্রান্তীয় বনাঞ্চলের মালী,” বলেন মেদেলিন। “বনের পুনরুজ্জীবন অনেকাংশে বাদুড়ের বীজ ছড়ানোর উপর নির্ভর করে। তারা শুধু বন পরিষ্কার হওয়ার পর পুনরুদ্ধার শুরু করে না, বরং বড় গাছের বীজ ছড়িয়ে বনাঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে।”

কীটপতঙ্গ দমন এবং কৃষিতে সাহায্য

বেশিরভাগ বাদুড় পোকামাকড় এবং ক্ষুদ্র অমেরুদণ্ডী প্রাণী খেতে পছন্দ করে। এটিই তাদের অন্যতম শক্তি, বলেন নেপলস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যার অধ্যাপক দানিলো রুশো। “বাদুড় আমাদের সংস্কৃতিতে কীটপতঙ্গের শত্রু, এবং আমি মনে করি এটি মানবজাতির জন্য বাদুড়ের উপকারিতার একটি বড় দিক।”

রুশোর গবেষণায় দেখা গেছে, বন বাদুড়ের প্রজাতি ইতালির বনাঞ্চলে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করে, যা কৃষি ও বনের জন্য ক্ষতিকর। বাদুড় ভুট্টাকে কর্ন ইয়ারওয়ার্মের লার্ভা থেকে মুক্ত রাখে এবং ক্ষতিকর ছত্রাক প্রতিরোধ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানাতে ১৫০টি বড় বাদুড়ের একটি কলোনি প্রতি বছর ১৩ লাখ কীটপতঙ্গ খেয়ে ফেলে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও বাদুড়ের চ্যালেঞ্জ

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক বাদুড় উত্তরে সরে যাচ্ছে। যদিও এটি তাদের অভিযোজনযোগ্যতার ইঙ্গিত দেয়, তবে এটি স্থানীয় পরিবেশব্যবস্থার উপর কী প্রভাব ফেলবে তা এখনও অজানা।

উচ্চ তাপমাত্রায় বাদুড়ের মৃত্যু বেড়েছে। রুশোর গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, গরমে তারা তাপীয় শক ও পানিশূন্যতায় মারা যেতে পারে। বাদুড়ের আবাসস্থল গরম হয়ে উঠছে, যা তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য বিপজ্জনক।

বাদুড় রক্ষার পথ

বাদুড়কে রক্ষা করতে হলে বহুমুখী পন্থা গ্রহণ করতে হবে: তাদের বাসস্থান সংরক্ষণ, কীটনাশকের ব্যবহার কমানো, শহুরে এলাকাকে তাদের জন্য উপযোগী করে তোলা, প্রাকৃতিক করিডোর রক্ষা করা এবং কৃত্রিম আলো কমানো।

“আমরা যদি আজকের চেয়ে বাদুড়কে ভালোভাবে রক্ষা করতে পারি, তবে আমরা তাদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারব, এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যেও,” বলেন রুশো।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024