বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩০ অপরাহ্ন

সাংবাদিকরা কি এআই-সংক্রান্ত অতিরঞ্জিত প্রচার বাড়িয়ে তুলছেন?

  • Update Time : বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৫, ৫.৫৬ এএম

ডেভিড সিলভারবার্গ

চার বছর ধরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে প্রতিবেদন লেখার অভিজ্ঞতা ফিরে দেখলেমেলিসা হেইকিলা দুটো বিষয়কে প্রধান বলে মনে করেনএকটি ইতিবাচকঅন্যটি নেতিবাচক।এআই হলো সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্ষেত্র… এআই আসলে ক্ষমতার গল্পযাকে এতভাবে কাভার করা যায়,” বলছেন এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ সাময়িকীর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। এবং এখানে প্রচুর মজারএমনকি বেশ অদ্ভুত চরিত্রও রয়েছেযাদের নিয়ে লেখার সুযোগ রয়েছে।

এটাই তার ইতিবাচক অভিজ্ঞতা। তবে নেতিবাচক দিক সম্পর্কে তিনি বলেনপ্রচারমাধ্যমের অনেক এআই-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রায়ই প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম নির্ভুল বা তথ্যসমৃদ্ধ হয়।

এই প্রযুক্তি কী করতে পারে আর কী করতে পারে নাসে সম্পর্কে অনেক সময় বাড়াবাড়ি বা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হয়,” বলছেন মিস হেইকিলা। এতে বিব্রতকর ভুল হতে পারেআবার সাংবাদিকরা কখনো কখনো এসব অতিরঞ্জিত প্রচারণায় ইন্ধন দেনউদাহরণ হিসেবে বলা যায়এআই প্রযুক্তিকে মানুষরূপে কল্পনা করা বা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিকে কোনো মিথিক্যাল’ সম্মান দেওয়া।

২০২২ সালের শুরুর দিকে গুগলে এআই”–এর অনুসন্ধান ছিল খুবই সীমিত। তখন এর গুগল ট্রেন্ড স্কোর ছিল মাত্র ১১ (০ মানে একেবারেই অনুসন্ধান করা হয় নাআর ১০০ মানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়)।

কিন্তু গত বছর থেকে এআই-সংক্রান্ত অনুসন্ধান গুগল ট্রেন্ডসে সর্বোচ্চ ১০০-এ পৌঁছায়। বিবিসির প্রযুক্তি সম্পাদক জোয়ি ক্লেইনম্যান বলছেনএআই নিয়ে এখন এত আলোচনা হওয়া স্বাভাবিকতবে এর ফলে গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি সঠিকভাবে তুলে ধরার বাড়তি দায়িত্বও তৈরি হয়েছে।

জোয়ি ক্লেইনম্যান বলছেনসাংবাদিকরা প্রায়ই এআই-এর নেতিবাচক দিকগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেনএআই খুব দ্রুতই আমাদের সবার জীবনে প্রভাব ফেলবেকিছু ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই ফেলেছেতাই এআই অবশ্যই গণমাধ্যমের নজরের দাবিদার,” তিনি বলেন। আমার মনে হয়গণমাধ্যম অনেক সময় এআই’ শব্দটিকে একটি বড় ছাতার মতো ব্যবহার করেযার আওতায় অনেক আলাদা আলাদা প্রযুক্তি এসে পড়ে।

তাছাড়া আমার ধারণাসাম্প্রতিক সময়ের বেশির ভাগ আলোচনা জেনারেটিভ এআই নিয়েইযে এআই লেখাছবিভিডিও ও অডিও তৈরি করতে পারে। ChatGPT আসলে এখানে বড় ভূমিকা রেখেছে।

সাংবাদিকদের নেতিবাচক দিকগুলোতে খুব বেশি জোর দেওয়ার প্রবণতা আছে বলে আমি মনে করি। আমি চাই এআই-এর ইতিবাচক দিকগুলোযেমন নতুন ওষুধ তৈরির গবেষণা বা নিউক্লিয়ার ফিউশন নিয়ে অগ্রগতির মতো উদাহরণও বেশি করে শিরোনামে আসুকপাশাপাশি ঝুঁকিগুলোও তুলে ধরা হোক।

ফিনল্যান্ডের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান রিয়াক্টর বিভিন্ন কোম্পানিকে এআই ব্যবহার করে কাজের গতি বাড়ানো বা পণ্য-পরিষেবা ডিজাইন করতে সহায়তা করে। এডিডাসকার্লসবার্গভার্জিন আটলান্টিকসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড তাদের গ্রাহক।

রিয়াক্টরের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মিকায়েল কোপ্টেফ মনে করেনএআই নিয়ে অতিরিক্ত নেতিবাচক আলোচনার ক্ষেত্রে সাংবাদিকরাই অনেক সময় দায়ী থাকেন।
সাংবাদিকদের সাধারণ মানুষকে এআই সম্পর্কে জানানো ও সচেতন করা উচিত,” তিনি বলেন। কিন্তু এখন যেভাবে অতিরঞ্জন ও ভয়ভীতির বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছেতাতে তারা ঠিক সেই কাজটি করছে না।

তিনি বলেনকিছু সাংবাদিক মনে করেন এআই বুঝি বিজ্ঞান কল্পকাহিনির মতোই মানুষ-সদৃশ চিন্তা করতে পারে এবং মানুষ যেসব কাজ করে তার সবই করতে পারে।আসল কথা হলোএআই খুব নির্দিষ্ট কিছু কাজে দক্ষসবকিছুতে নয়।

ভবিষ্যতে এআই-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের মান উন্নত হবে বলে মিস্টার কোপ্টেফ আশাবাদীকারণ এআই হয়তো ধীরে ধীরে আমাদের প্রতিদিনের জীবনের স্বাভাবিক অংশে পরিণত হবে। তখন সাংবাদিকরাও এ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বেশি জ্ঞানী হয়ে উঠবেন।তার মতেএই সময়ে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোরও ভূমিকা রয়েছেযাতে তারা নতুন এআই প্রযুক্তি সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমকে যথাযথভাবে অবহিত করতে পারে।

নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া জার্নালিজম স্কুলের টাও সেন্টার ফর ডিজিটাল জার্নালিজমের পরিচালক এমিলি বেল বলছেনএআই নিয়ে সংবাদ প্রকাশ এখন আগের যুগের ইন্টারনেট বা ২০০৭ সাল থেকে স্মার্টফোনের উত্থান কাভার করার চেয়ে জটিলকারণ এখন সংবাদ প্রবাহ অনেক দ্রুত।

এখনকার পার্থক্য হলোপ্রতিনিয়ত এআই-সম্পর্কিত পণ্য ঘোষণার খবর আসছেআর সোশ্যাল মিডিয়ায় তার প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে,” তিনি বলছেন। ওপেনএআই-এর স্যাম অল্টম্যানইলন মাস্কের মতো ব্যক্তিত্বেরা ঘন ঘন মতামত প্রকাশ করছেনআবার এ ধরনের পণ্য ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিশেষজ্ঞদের সমালোচনা-প্রতিক্রিয়াও আসছে। ফলে পুরো প্রক্রিয়াই খুব দ্রুত এগোচ্ছে।

মিস বেল যোগ করেন যেএআই নিয়ে অসীম সম্ভাবনার” প্রতিবেদন লেখা সম্ভব।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের ডক্টরাল গবেষক ফেলিক্স সাইমন সংবাদ সংস্থাগুলো কীভাবে এআই নিয়ে কাজ করে এবং নিজেরাও কীভাবে এআই ব্যবহার করেসে বিষয়ে গবেষণা করছেন। তার মতেঅভিজ্ঞ প্রযুক্তি-সাংবাদিকরা এআই-এর জটিলতা দূর করতে ভালো কাজ করছেন।

ফেলিক্স সাইমন বলছেনএআই ফার্মগুলোর সম্ভাব্য অতিরঞ্জিত প্রচারণা ঠেকানোর দায়িত্ব রয়েছে প্রযুক্তি প্রতিবেদকদেরই।অনেক প্রতিবেদক আছেনযাদের এই ক্ষেত্রের ওপর দৃঢ় ধারণা রয়েছে। আমি খুশি যে এখন আর সবকিছুকেই এআই-নির্ভর মারাত্মক প্রযুক্তি’ বলে অভিহিত করা হয় নাবরং সাংবাদিকেরা অনেক বেশি সমালোচনামূলক দৃষ্টিতে এ বিষয়ে লিখছেন।

তিনি যোগ করেনসাংবাদিকদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নিয়ে খবর করতে গিয়ে যেন শিল্পের নিজস্ব বর্ণনার ফাঁদে পা না দিইএটা সবসময়ই কঠিন ছিলএখনও আছে।লিভারপুল হোপ বিশ্ববিদ্যালয়ের এআই বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডেভিড রিড সংবাদমাধ্যমের এআই কভারেজ নিয়ে সমালোচনা করে বলেন যে, “বেশিরভাগ প্রতিবেদনে আমি হতাশ।

আমি বলবএআই নিয়ে প্রচারমাধ্যমের প্রতিবেদনের মান ১০-এর মধ্যে মাত্র ২। যখন মিডিয়া এআই নিয়ে কথা বলেতারা মনে করে এটা একটা একক সত্তাকিন্তু সেটা ঠিক নয়।”“আর মানুষ যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করে এআই ভালো না খারাপআমি সবসময় বলি দুটোই। তাই আমি চাই সংবাদমাধ্যম এ বিষয়ে আরো সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি রাখুক।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024