বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:১৫ পূর্বাহ্ন

ভারতের স্পাডেক্সঃ স্যাটেলাইট যুগের নতুন শক্তি

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৬.২৯ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) ২০২৪ সাল শেষ করল এক বড় সাফল্যের মাধ্যমেযখন স্পাডেক্স (Space Docking Experiment) নামের মিশন সোমবার রাতে শুরু হয়। শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে পিএসএলভি-সি৬০ উৎক্ষেপণযান উৎক্ষেপিত হয়ে নিচু পৃথিবী কক্ষপথে সাফল্যের সঙ্গে দুটি স্যাটেলাইট স্থাপন করে।

ইসরো-র চেয়ারপারসন এস সোমনাথ জানিয়েছেনপ্রায় ৭ জানুয়ারি ডকিং সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, “নতুন বছরে আমাদের কাজ রয়েছে ডকিং প্রদর্শন করা এবং পিএস৪ অরবিটাল এক্সপেরিমেন্ট মডিউল (পিওইএম) সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো। ২০২৫ সালে আমাদের আরও অনেক মিশন রয়েছে। প্রথমে আমরা জিএসএলভি দিয়ে এনভিএস-০২ (ন্যাভিক কনস্টেলেশনের একটি স্যাটেলাইট) উৎক্ষেপণ করব। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

স্পাডেক্স বা স্পেস ডকিং এক্সপেরিমেন্ট ইসরো-র ভবিষ্যৎ অনেক মিশনের মূল চাবিকাঠিচাঁদ থেকে নমুনা নিয়ে আসাএকজন ভারতীয়কে চাঁদে পাঠানোকিংবা ভারতীয় অন্তরীক্ষ স্টেশন (বিএএস) নির্মাণ ও পরিচালনা করা।

এই মিশনের সাফল্যের মাধ্যমে ভারত বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে স্পেস ডকিং প্রযুক্তি অর্জন করবেরাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন)যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর।

উৎক্ষেপণের পর ৪৭৫ কিমি বৃত্তাকার কক্ষপথে স্থাপিত দুটি ছোট স্যাটেলাইট ডকিং প্রদর্শন করবে। প্রায় ২০ কিমি দূরত্ব প্রথমে তৈরি করা হবে স্যাটেলাইট দুটিরএসডিএক্স০১ চেইসার ও এসডিএক্স০২ টার্গেটেরমধ্যে।

এক দিনের মধ্যে এই প্রয়োজনীয় দূরত্ব অর্জিত হলেটার্গেট স্যাটেলাইটের প্রপালশন ব্যবস্থা চালু করে আপেক্ষিক বেগকে সমন্বয় করা হবেএর ফলে স্যাটেলাইট দুটি আর দূরে সরে যাবে না এবং স্থির দূরত্ব বজায় রাখবে।

ইসরো-র এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “উৎক্ষেপণের ৭ থেকে ৮ দিন পর চূড়ান্ত ডকিং প্রক্রিয়া শুরু হবে।

ডকিংয়ের জন্য চেইসার স্যাটেলাইট ধীরে ধীরে দূরত্ব কমিয়ে ৫ কিমি১.৫ কিমি৫০০ মিটার২২৫ মিটার১৫ মিটার৩ মিটার করে শেষমেশ টার্গেট স্যাটেলাইটের সঙ্গে যুক্ত হবে। যুক্ত হওয়ার পর স্যাটেলাইট দুটি একে অপরকে বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ করতে পারবে। পরে আবার পৃথক হয়ে পরবর্তী দুই বছর তারা নিজ নিজ কাজ চালিয়ে যাবে।

চেইসার স্যাটেলাইটে একটি হাই-রেজোলিউশন ক্যামেরা রয়েছেযা মূলত একটি ছোট আকারের নজরদারি ক্যামেরার অনুরূপ। টার্গেট স্যাটেলাইট বহন করছে একটি মাল্টিস্পেকট্রাল পেলোডযা প্রাকৃতিক সম্পদ ও উদ্ভিদ পরিসর পর্যবেক্ষণে ব্যবহার হবে। এ ছাড়া একটি রেডিয়েশন মনিটর থাকবেযা মহাকাশের রেডিয়েশন পর্যবেক্ষণ ও তথ্যভান্ডার তৈরি করবে।

আগামী দিনে ভারী পেলোড বহনের জন্যযা একবারে উৎক্ষেপণ করা সম্ভব নয়ডকিং-আনডকিং ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্টেশন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন মডিউল মহাকাশে গিয়ে যুক্ত হবেভারতীয় অন্তরীক্ষ স্টেশনের (বিএএস) জন্য পাঁচটি মডিউল পরিকল্পিতযেগুলো মহাকাশে সংযুক্ত হবে। প্রথম মডিউল ২০২৮ সালে উৎক্ষেপণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

পরিকল্পিত চন্দ্রযান-৪ অভিযানের জন্যও ডকিং ক্ষমতা দরকার হবেকারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের তাপ সামলানোর মতো সক্ষম একটি পুনঃপ্রবেশ মডিউল আলাদাভাবে উৎক্ষেপণ করা হবে। চাঁদ থেকে নমুনা নিয়ে আসার জন্য ব্যবহৃত ট্রান্সফার মডিউল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এসে পুনঃপ্রবেশ মডিউলের সঙ্গে ডক করবে।

উৎক্ষেপণযানের চতুর্থ ধাপকে পিওইএম (পিএস৪ অরবিটাল এক্সপেরিমেন্ট মডিউল) হিসেবে ব্যবহার করা হবেযেখানে ২৪টি প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হবে। এর মধ্যে ১০টি প্রযুক্তি স্টার্ট-আপ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। এই প্রথম ইসরো-র কোনো মিশনে একটি জীববৈজ্ঞানিক পরীক্ষা থাকছে। ক্রপস (কমপ্যাক্ট রিসার্চ মডিউল ফর অরবিটাল প্ল্যান্ট স্টাডিজ) পরীক্ষায় বীজ অঙ্কুরোদগম থেকে দুটি পাতা পর্যন্ত গাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। ইসরো-র অন্যান্য পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে ডেব্রিস ধরার জন্য একটি রোবোটিক বাহুযা দৃশ্যমান ডেটা ও বস্তুগত গতির পূর্ভাবাস ব্যবহার করে ডেব্রিস সংগ্রহ করবেএ ছাড়া আরেকটি চলনক্ষম রোবোটিক বাহু থাকবেযা ভবিষ্যতে মহাকাশে স্যাটেলাইট রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করতে পারে।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে ও পৃথিবীর অভিকর্ষে উদ্ভিদ কোষের তুলনামূলক গবেষণাবেঙ্গালুরুর আরভি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং কর্তৃক অণু-জীবাণু (গাট ব্যাকটেরিয়া) নিয়ে মহাকাশে বৃদ্ধির গতিপ্রকৃতি পরিমাপদুটি সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার এবং একটি সবুজ প্রপালশন ব্যবস্থা ইত্যাদি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024