শশাঙ্ক মণ্ডল
লৌকিক দেবদেবী পীর গাজীদের কথা
বিভিন্ন সময়ে নানা ধর্ম সংস্কৃতি বাঙালির জীবনে প্রভাব ফেললেও প্রাআর্য প্রভাবকে কখনও স্নান করা সম্ভব হয়নি। ব্রাহ্মহ্মণ্য সংস্কৃতি গুপ্ত যুগে বাংলায় প্রচলনের চেষ্টা হলেও সর্বত্র তা সমান কার্যকরী হয়নি। নিম্নবঙ্গের মানুষদের মধ্যে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি কোনদিন বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেনি। সেজন্য আর্য দেবদেবীর তুলনায় লৌকিক দেবদেবী, প্রাচীন আচার অনুষ্ঠান এই অঞ্চলের মানুষের জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে।
সামাজিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ নিয়ে সমাজ এ সব দেবদেবী সৃষ্টি করেছে। ইসলাম বিজয়ের পরবর্তীকালে পঞ্চদশ ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যে পীর গাজী ও সুফী ধর্মীয়মত দক্ষিণ বাংলার মানুষের জীবনকে নতুন ভাবে প্রভাবিত করল এবং বিভিন্ন ধর্মীয় মত ও পথ একাকার হয়ে গেল বাঙলার এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ডঃ নীহার রায় এ প্রসঙ্গে বাঙালির ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে মন্তব্য করেছিলেন-
-‘আর্য ব্রাহ্মণ্য ধর্ম লোকায়ত অনার্য ধর্মকর্মের অনেক আচার অনুষ্ঠান দেবদেবী ধীরে ধীরে আজও কুক্ষিগত করিতেছে, কোথাও তাহাদের চেহারার আমূল পরিবর্তন করিয়া কোথাও একেবারে অবিকৃত রূপে। বাঙলাদেশে মোটামুটি খ্রীষ্টোত্তর ৫ম ৬ষ্ঠ শতকে আর্যধর্মের প্রবাহ প্রবলতর হওয়ার সময় হইতেই সামাজিক চেতনার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং আজও তাহা চলিতেছে লোকচক্ষুর আগোচরে।’
সুন্দরবনের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে এই সব পীর গাজী লৌকিক দেবদেবী আচার অনুষ্ঠান উৎসব মেলাগুলির আলোচনা অবশ্যই প্রয়োজন। আচার অনুষ্ঠান পুজো পার্বণগুলির সাথে গ্রামীণ জীবনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অতীত ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী হিসাবে এখনও অস্তিত্ব রক্ষা করে চলেছে। জীবিকার প্রয়োজনে সুন্দরবনের মানুষ ধর্মীয় গোড়ামিকে অস্বীকার করেছে এবং বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে একটা সমন্বয় প্রবণতা এই অঞ্চলে লক্ষ করা যায় এবং তা বাংলার অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি বলেই মনে হয়।
Leave a Reply