বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:২৯ অপরাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১২১)

  • Update Time : শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২.০০ পিএম

শশাঙ্ক মণ্ডল

তাই আজ লুপ্তপ্রায় লোক- সংস্কৃতির সংরক্ষণে এবং গবেষণার প্রয়োজনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। উভয় বাংলার যুক্ত কার্যক্রম এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগী ভূমিকা নিতে পারে। পূর্ব বাংলায় বর্তমান বাংলাদেশে লোকসংস্কৃতি, লোকভাষাকে নিয়ে যে ব্যাপক গবেষণা বিশেষ করে প্রবাদ ছড়া গীতিকা সংগ্রহ ও পর্যালোচনা, আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে আলোচনা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য কাজ কিন্তু সংস্কৃতিতো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক ভূখণ্ডে বিশেষত তা যখন কৃত্রিম, বন্দী থাকতে পারে না। উভয় বাংলার সাংস্কৃতিক ঐক্যের স্বার্থেই এ ব্যাপারে যুক্ত উদ্যোগ গ্রহণের মধ্যদিয়ে যথার্থ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান সম্ভব এবং এটা সুন্দরবনের বর্তমান আলোচনার ক্ষেত্রেও সম্পূর্ণ যুক্তিসিদ্ধ।

গ্রাম দেবতা বাস্তুপূজা গ্রামঘেরা ছাঁদগা অনুষ্ঠান

সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সর্বত্র গ্রামের মানুষের আরাধ্য দেবতা গ্রাম দেবতা। নির্দিষ্ট ঐ গ্রামের মানুষদের বিবিধ অমঙ্গলের হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব এই দেবতার ওপর অর্পিত। গ্রাম্য-প্রধানের মত্রে এই দেবতার ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা। গ্রামের মানুষরা সমষ্টিগতভাবে এঁর পূজা করবে এবং বাস্তুদেবতা সমস্ত গ্রামবাসীর কল্যাণের দায়িত্বে।

গ্রামের বাইরে এঁর কিছু করণীয় নেই। কোন বিশেষ ব্যক্তির প্রার্থনা পূর্ণ করা নয়, সমগ্র গ্রামবাসীর প্রার্থনা তাঁর কাছে। প্রাচীন গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের স্মৃতি এ পূজার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে। হিন্দুর পূজার মধ্যে ব্যক্তিবিশেষের প্রার্থনা মঙ্গল কামনা প্রাধান্য পায় কিন্তু গ্রামদেবতার মধ্যে একটা গণতান্ত্রিক সাম্যবোধের ধারণা প্রকাশিত হয় ব্যক্তিমঙ্গল নয়, সমগ্র গ্রাম- সমাজের সকল মানুষের মঙ্গল প্রাধান্য পায়। গ্রাম-জীবনের সঙ্কট্, গো-মড়ক, মহামারী, অনাবৃষ্টি প্রভৃতি ব্যবহারিক জীবনের সাধারণ বিষয়ের জন্য এই দেবতার কাছে সমগ্র গ্রামের মানুষ প্রার্থনা জানায়। গ্রামদেবতা স্ত্রীদেবতা- প্রাচীন মাতৃতান্ত্রিক গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের স্মৃতিবাহী বলে মনে হয়।

গ্রামের মধ্যে কোন গাছতলায় (বিশেষকরে জিউলী গাছ) এর প্রতিষ্ঠা, বৎসরের নির্দিষ্ট দিনে সকল মানুষের চাঁদার মধ্য দিয়ে এঁর পূজা হয়। এই পূজায় ব্রাহ্মহ্মণরাও অংশ গ্রহণ করে। অনেক মিশ্র গ্রামেও গাছের নীচে গ্রামদেবতার থাণ প্রতিষ্ঠিত থাকে। সেই গাছগুলিকে গ্রামবাসীরা খুবই সমীহ করে। সেই গাছের পাতা কেউ ছিড়তে সাহস পায় না। ঐ গাছ বা তার ডাল গ্রামবাসীরা কাটে না গাছ মারা গেলে ঐ কাঠ কেউ আগুনে পোড়ায় না। অনেক সময় গ্রামদেবতার পূজায় প্রতীক পূজা করা হয়।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024