শশাঙ্ক মণ্ডল
ভূত প্রেত দেওতা দানো সাপ বিছা বেঙ মনসা বাসুকি বান্ধি। ইত্যাদি গ্রামে বন্ধন অনুষ্ঠান শেষে কালো মুবগিকে গ্রামের বাইরে ছেড়ে দেয় আবার অনেক সময় গলাটিপে মেরে গ্রামের বাইরে ফেলে দেয়। অশুভ আত্মার প্রতীক মনে করে। গ্রামের মধ্যে একটা বাঁশ পুঁতে তার মাথায় নতুন সাদা কাপড়ের টুকরো পতাকার মতো বেঁধে দেয়। গ্রামের সমস্ত লোক মিলে গ্রামের চার পাশ ঘুরে আসে আর তিনটি বাঁশ পতাকাসহ গ্রামের তিনদিকে পুঁতে দেয়।
তারপর হাড়িয়া খাওয়ার অনুষ্ঠান এবং গ্রামের সমস্ত মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে- সারা দিন ধরে এই উৎসব চলে। গ্রাম বাঁধা এই অনুষ্ঠান ছোটনাগপুরের ওরাংদের মধ্যে লক্ষ করা যায় না। সুন্দরবনের আদিবাসীরা তাদের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এই উৎসব গ্রহণ করেছে।
একশ বছরের ওপর সুন্দরবনে বসবাসের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশীদের আচার অনুষ্ঠানগুলি তারা এ ভাবে প্রতিনিয়ত গ্রহণ করে চলেছে অবিমিশ্র সংস্কৃতি কখনও টিকে থাকতে পারে না। প্রতিনিয়ত গ্রহণ বর্জনের মধ্য দিয়ে তা এগুতে থাকে।
মনসা চণ্ডী শীতলা ষষ্ঠী পেঁচোপাঁচী
জীবন জীবিকার সংকটে বিপর্যস্ত মানুষ শাস্ত্রের আদর্শে খুব একটা ভরসা রাখতে পারে না। আবার সংকট মুক্তি ও নিরাপত্তার জন্য মানুষ সহজ সমাধান খোঁজে; তাই সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে নতুন নতুন দেবতা সৃষ্টি করে মানুষ- সে দেবতা অপদেবতা হতে পারে আবার উপদেবতাও হতে পারে। সমাজ গ্রহণ করলে পরবর্তী কালের শাস্ত্রকারেরা তাকে শাস্ত্রসম্মত করার বিধান দেন- এ ভাবে আমাদের লৌকিক জীবনে অসংখ্য দেবতার আবির্ভাব ঘটেছে এবং তার প্রতীক হিসাবে অসংখ্য স্থান তৈরি হয়েছে।
অনেকে বিভিন্ন কারণে প্রতিমা পূজা করতে পারে না- সেজন্য নির্দিষ্ট একটা গাছ তলায় দেবতা থান তৈরি করে। প্রতিটি গ্রামে অসংখ্য দেবতার স্থান আমরা লক্ষ করি। পাশাপাশি তাদের অবস্থান একই গাছতলায়। জীবনের প্রোয়োজনে কল্পিত এসব দেবতায় তাই জাতিভেদ অস্পৃশ্যতার প্রশ্ন নেই; বিষ্ণু আর বিসমিল্লার মধ্যে কোন ভেদ নেই সকলে মিলে মিশে একাকার।
Leave a Reply