শশাঙ্ক মণ্ডল
সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য চণ্ডীতলার অস্তিত্ব আজও লক্ষ করা যাবে আর সেই সাথে অসংখ্য নাম, কেউ মঙ্গল চণ্ডী, কেউ শুভ চণ্ডী, ঢোলাই চণ্ডী এধরনের অসংখ্য চন্ডী দেবী এই এলাকায় রয়েছে। মানুষ তাদের মনস্কামনা পূর্ণ করতে থানে পূজা মানত করে থাকে। মঙ্গল চণ্ডী লৌকিক দেবী পরবর্তী কালে পৌরাণিকচণ্ডীর সাথে তার সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে।
অনুমান করতে অসুবিধা হয় না এক সময় নারী সমাজের মধ্যে এর পূজা সীমাবদ্ধ ছিল- পরবর্তীকালে তার প্রসার ঘটেছে। সন্তান কামনা সংসারের সুখশান্তি লাভের আশায় দেবীকে স্মরণ করা হত। বাংলার লৌকিক দেবীদের মধ্যে চণ্ডীদেবী সব চাইতে জটিল দেবতা, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের পরস্পর স্বতন্ত্র প্রকৃতির যে সব শক্তিদেবীর কল্পনা করা হয়েছিল তাদের সকলের সম্মিলিত রূপ চণ্ডীর মধ্যে এসে মিলেছে।
পুরাণে লক্ষ করা যায় সকল শক্তিদেবীই সাধারণভাবে শিবের একমাত্র পত্নী চণ্ডী রূপে পরিগণিত হয়েছে কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস পরস্পর স্বতন্ত্র। তাই চণ্ডীর নামে পরস্পর বিরুদ্ধ বিভিন্ন দেবী বাংলার অসংখ্য এলাকার মতো সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে পূজা লাভ করেছে। নাটাই চণ্ডী, কুলুই চণ্ডী, ঢলাই চণ্ডী, ঢোলাই চণ্ডী, জঙ্গল চণ্ডী ও মঙ্গল চণ্ডী, এদের বিভিন্ন নাম।
ঢোলাই চণ্ডীর অধিষ্টান খেজুর গাছে খেজুর গাছে ঢিল ছোড়া হয় আর পূজা উপাচার হিসাবে দুধ বাতসা ফল দেওয়া হয়। পূজার কোন নির্দিষ্ট দিন নেই। পুরোহিতের দরকার সাধারণত হয় না। বর্তমানে অনেক স্থলে পুরোহিত নিয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের দেবহাটা, কালীগঞ্জ প্রভৃতি এলাকা ছাড়াও ২৪ পরগণার স্বরূপনগর হাবড়া প্রভৃতি এলাকায় এই চণ্ডী পূজা হতে দেখা যায়। নৈহাটির নিকটে গোয়াল্ল কটক গ্রামে এই পুজোর কথা হর প্রসাদ শাস্ত্রী উল্লেখ করেছেন। পূজার নৈবেদ্য হিসাবে ঢিল ব্যবহার করা হয় বলে এর নাম হয়েছে ঢোলাই চণ্ডী।
জঙ্গল চণ্ডী সম্ভবত বন কাটার সময় বন্য জীব জন্তুর হাত থেকে রেহাই পাবার বাসনায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। চণ্ডীতলায় গাছের নীচে সাধারণত জিউলী, কেওড়া, বানগাছতলায় এই দেবীর স্থান লক্ষ করা যায়। পূজার সময় পুরোহিত দরকার হয় না।
Leave a Reply