শশাঙ্ক মণ্ডল
পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই পূজা করে থাকে। বাংলাদেশের শ্যামনগর, পাইক গাছার বিভিন্ন গ্রামে, ২৪ পরগণায় হিঙ্গলগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে জঙ্গল চণ্ডীর স্থান লক্ষ করা যাবে। আশ্বিন মাসের মঙ্গলবার এ পূজা হয় পশুবলি দেবার রীতি লক্ষ করা যায়- গ্রামের একজন বয়স্ক লোক পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন; মন্ত্রতন্ত্র তেমন কিছু নেই। অনেক সময় পূজা উপলক্ষে দেব-মাহাত্ম্য-মূলক পাঁচালী গান করা হয়। ২৪ পরগণায় টাকীর অনতিদূরে শাকচূড়ার নিকটে জঙ্গলআটিতে কালকেতু সম্প্রদায় নামে ৮০/৯০ জন মানুষের একটি গোষ্ঠী বাস করে; এরা জঙ্গল চণ্ডীকে নিজেদের উপাস্য দেবী হিসাবে মানে এবং নিজেদের কালকেতুর বংশধর বলে পরিচয় দেয়।
এদের হিন্দি বাংলা মিশ্রিত এক ধরণের মিশ্র ভাষা অবশ্য বর্তমান প্রজন্ম বাংলায় কথা বলে। এদের সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ নদীয়া এবং বনগ্রামের নিকট বাস করে এদের মধ্যেই বিবাহ চলে। গোষ্ঠীটি খুব অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ; এই সম্প্রদায়টি আদিম জনগোষ্ঠীর একটি শাখা হিসাবে নৃতত্ববিদদের অনুসন্ধানের বিষয় হতে পারে।
মনসা-
মনসা সাপের দেবী হিসাবে সুন্দরবনে বিশেষ ভাবে পূজিত। ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে মনসা পূজা প্রতি গ্রামে হয় অনেক বাড়িতে আলাদা ভাবে করা হয়। অসংখ্য মনসার থানে দুধ কলা নৈবেদ্য প্রদান করা হয়। দক্ষিণবঙ্গের জলাভূমিতে সাপের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য এই দেবীর বহুল পূজার প্রচলন লক্ষ করা যাবে। অনেকস্থানে মনসার ভাসান গান বা জাগরণ গীতিতে মেয়েরাই প্রধান ভূমিকা নিয়ে থাকে। মনসার ঘটপূজাও হয়; ঘটের গায়ে অঙ্কিত গর্ভবতী নারীমূর্তিতে দেবী বিরাজিতা।
মনসার ঘটের সঙ্গেও অনেক স্থানে প্রতিমা পূজাও হয়। গর্ভবতী নারী উর্বরাতন্ত্রের প্রতীক হিসাবে কল্পিত হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। সাপের দেবী মনসা, সাপের স্বপ্ন নারীর কাছে সন্তান সম্ভাবনা, সাপের শঙ্ক লাগা শুভ সূচনা এসবই নতুন প্রাণ ও শুভ সম্ভাবনার সাথে যুক্ত। সাপ কেবলমাত্র যৌন প্রতীক নয় ভূমির উর্বরতার সাথেও এর সম্পর্ক রয়েছে। মনসামঙ্গ লের কাহিনীতেও রয়েছে দেবীর পূজা করলে নিঃসন্তান পুরুষ ও নারী সন্তান লাভে সমর্থ হয়। চাঁদ সদাগর পত্নী সনকা বাল্যকাল থেকে মনসাকে ভক্তিভরে পূজা করে এবং তারই কৃপায় ছয় পুত্র লাভ করে-
শিশু হতে একমনে পূজে পদ্মাবতী
সোনেকারে দয়াকরি পদ্মাবতী দিলেন বর
ছয় পুত্র হইল তার যেন বিদ্যাধর।
Leave a Reply