শশাঙ্ক মণ্ডল
দেবীমূর্তি কিছু কিছু জায়গায় দেখা গেলেও অধিকাংশ স্থলে প্রতীক পূজা হয়; বসন্ত রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রোগমুক্তির ব্যাপারে মানত করা হয় এবং সেজন্য পাঁচ সিকে বা পাঁচ আনা এ ধরণের মানত করা হয়। সমাজের তলাকার মানুষদের মধ্যে এই পূজার প্রচলন সব চাইতে বেশি লক্ষ্য করা যায়। শীতলার জাগরণ গান সুন্দরবনের বিভিন্ন পল্লীতে মেয়েদের গাইতে দেখা যায়।
পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাজের মেয়েরা সন্দেশখালী গোসাবা ক্যানিং বারুইপুর প্রভৃতি এলাকায় শীতের শেষ থেকে শুরু করে গ্রীষ্ম কাল জুড়ে এই গান গেয়ে থাকে। এই সময় বসন্তের প্রাদুর্ভাবের সময় এবং এর হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য কিংবা মানত শোধ করার জন্য সারা রাত্রি ধরে গৃহস্থবাড়িতে বা শীতলাতলাতে জাগরণ গান করা হয়। শীতলার জাগরণ গানের মধ্যে পৌরাণিক কাহিনী এবং দেবীর মাহাত্ম্য প্রকাশ করা হয়।
অবশ্য সারা রাত ধরে এই গান চলে বলে অনেক সময় গায়কদের ভাণ্ডার কমে আসে তখন অন্য প্রসঙ্গ গানের মধ্যে ঢুকে যায়। একটি গানে লক্ষ করা যাচ্ছে শীতলার মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে হঠাৎ এসে যাচ্ছে ‘জাপান রাজা জার্মান রাজা আর এক রাজা বাঙালি’। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন ঘটনা গানের মধ্যে ঢুকে পড়ছে। এই দেবীর উদ্ভবের পেছনে নানা মত রয়েছে। কেউ মনে করেন বৌদ্ধদের হারীতি শীতলার মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে আবার অনেকে স্বাধীনভাবে শীতলার উদ্ভব ঘটেছে বলে মনে করেন।
বাংলার গ্রামীণ জীবনে বসন্তের পর ভয়ঙ্কর মহামারী রূপে দেখা যায় কলেরা। গ্রামের পর গ্রাম কলেরা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভয়ঙ্কর রোগের হাত থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় দেবী প্রতিষ্ঠা করেছে মানুষ। ওলাদেবী হিসাবে হিন্দুরা এর পূজা করে আর মুসলমানরা ওলা বিবি নামে এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। যদিও ইসলাম ধর্মে সব রকমের পূজা নিষিদ্ধ তবু নিরক্ষর গ্রামবাসীরা এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য শরীয়তের নীতিকে লঙ্ঘন করে এই দেবীর নামে সিন্নি দেয়।
মড়কের আকারে কলেরা ছড়িয়ে পড়লে দেবীর ক্রোধ প্রশমনের জন্য অনেকসময় পশু বলি দেওয়া হয়। ব্রাহ্মণরা এই দেবীর পূজায় সাধারণত অংশ গ্রহণ করে না। দেবীর প্রসাদ ঘরে নিয়ে যাবার ব্যাপারে নিষেধ থাকে। ২৪ পরগনা খুলনা যশোরের দক্ষিণে বিভিন্ন এলাকায় এই দেবীর পূজার বহুল প্রচলন লক্ষ করা যায়। মুসলমান প্রধান এলাকাগুলিতে ওলা বিবির সিন্নি দেবার জন্য পৃথক থান লক্ষ করা যায়। গ্রামের অনেক বাস্তু তলা আছে বিভিন্ন দেবদেবীর থান হিসাবে সেই সব জায়গা গ্রামবাসীদের কাছে পবিত্র স্থান।
Leave a Reply