শশাঙ্ক মণ্ডল
শীতলা ষষ্ঠী চণ্ডী ওলা দেবী প্রভৃতির পূজা একই জায়গায় বিভিন্ন সময়ে হয়ে থাকে। কোন গৃহস্থ বাড়িতে এসব পূজা হলে পূজার পর প্রতিমা এই বাস্তু তলায় এনে রাখা হয়। একই ‘থানে’ বিভিন্ন দেব দেবীর সহঅবস্থান লক্ষ করা যায়; ষষ্ঠীদেবী শিশুদের সর্ববিধ বিপদ থেকে রক্ষা করেন-তাই শিশুর জন্মের পরই ষষ্ঠীর পূজা হয়। শিশুদের মঙ্গল অমঙ্গলের সমস্ত দায় দায়িত্ব এই দেবীর ওপর। সুতরাং প্রতিটি হিন্দু বাড়িতে শিশুর জন্মের পর ষষ্ঠী পূজা অবশ্য করণীয় প্রথা, সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অরি দেবতা হিসাবে শিশুদের সর্ববিধ বিপদের হাত থেকে রক্ষার জন্য পেঁচো পাঁচী নামে যুগ্ম দেবতার প্রভাব বিশেষ ভাবে লক্ষ করা যায়।
অনেক সন্তান সম্ভবা মা সন্তানের মঙ্গল কামনায় জন্মের পূর্বে পেঁচো পাঁচীর নামে সন্তানকে উৎসর্গ করেন। অনেকে পেঁচো পাঁচীর মতে থাকেন এবং মানত করে সন্তান কামনায় পেঁচো পাঁচীর নামে অনেকে ঢিল বেঁধে রাখে। বর্তমানের বাংলাদেশের সাতক্ষীরার নিকটে লবসা গ্রামের পেঁচো পাঁচীর থান এবং মন্দির খুবই জাগ্রত স্থান হিসাবে বিস্তীর্ণ এলাকায় পরিচিত। পেঁচোপাঁচী নির্দিষ্ট স্থান বা মন্দির বাদ দিলেও অনেক পরিবারে মূর্তি বা ঘট স্থাপন করে এদের পূজা করা হয়। বাড়িতে পূজার সময় ঘরের ছাচের তলায় মূর্তি রেখে পূজা করা হয় প্রসাদ হিসাবে আট কড়াই ভাজা দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়।
সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বাটুলতলা আছে; এখানে গাছের গায়ে সন্তান কামনায়, নানান সাংসারিক মঙ্গল কামনায় ঢিল বেঁধে রাখতে দেখা যায় এবং বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় ভক্তরা নিজনিজ মানত শোধ করে থাকে। বাদুড়িয়া থানার পুড়া খোড়গাছি গ্রামের বাটুলতলায় এখনও হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়ে থাকে নিজেদের মানত শোধ করার জন্যে।
নারায়ণ পূজা, শীতলা পূজা গ্রামবাঁধা সরস্বতী পূজা ছোটনাগপুর রাঁচির আদিবাসীদের মধ্যে লক্ষ না করা গেলেও সুন্দরবনের আদিবাসীদের বৃহত্তর হিন্দু প্রতিবেশীদের পাশাপাশি বাস করতে গিয়ে এ সব উৎসব অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করছে। নারায়ণ সরস্বতী পূজার জন্য এখন তারা ব্রাহ্মণ পুরোহিতও নিয়োগ করছে। শীতলা পূজা করার জন্য আদিবাসী পুরোহিত পাহানকে ওরা ডেকে থাকে। পাহান থানের ওপর মুরগি রেখে সেই মুরগিকে আতপ চাল খেতে দেয়, তার পর মুরগি বলি দেওয়া হয়। বলির রক্ত চালের ওপর ফেলা হয়। পরে এই চাল ও মাংস রান্না করে তা দেবীর প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করে থাকে।
Leave a Reply