শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৩১)

  • Update Time : সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২.০০ পিএম

শশাঙ্ক মণ্ডল

চৈত্র সংক্রান্তির আগের কয়েকদিন সন্ন্যাসিরা পাথরের শিব মাথায় নিয়ে নানা রকম ধধ্বনি দিতে দিতে বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে বেড়াত। মূল সন্ন্যাসীর মাথায় শিব সঙ্গে অন্যান্য সন্ন্যাসীরা, বালাদার ঢাকী, বাজনদার চড়কের সহ্ নানা সাঝে সজ্জিত হয়ে এই দলের সাথে ঘুরে বেড়ায়। গৃহস্থরা ভক্তি ভরে শিব কে স্নান করান এবং শিবের চরণামৃত পান। করেন। সন্ন্যাসীদের নানারকম ফল, আতপ চাল ইত্যাদি গৃহস্থরা উপহার দিয়ে থাকে। বালাদার শিবগৌরীর কাহিনী ছড়ার ভঙ্গীতে বলে এবং ঢাকী বালার তালে তালে ঢাক বাজায়। এ ধরনের ছড়া তারা মুখে মুখে গেয়ে থাকে-

বড় প্যাঁচে পড়েছে এবার ভোলা দিগম্বর

বউ নিতে এসেছে এবার আপনি মহেশ্বর।।

কিংবা –

আমায় বড় দ্যায় দাগা

সারা রাত কি পাগলা নিয়ে

যায়গো মা জা’গা?

সার রাত মা সিদ্দি ঘুঁটি

ভূতে খায় মা বাটি

বাটি কেমন করে ঘর করি বল

নিয়ে এ ন্যাংটা নাগা?

সন্ধ্যার পর শ্মশানের চিতার আধপোড়া কাঠ দিয়ে শিবানুচর ভূত প্রেতের জন্য রান্নার ব্যবস্থা করে সেই সাথে শোল্, চ্যাঙ্ মাছ পোড়ান হয়। এসব খাদ্য শিবানুচরদের উৎসর্গ করার জন্য সন্ন্যাসীরা হাজরাতলায় যায়। সেখানে ছোট অনুষ্ঠান করার পরে ভূত প্রেতের জন্য খাদ্য নিবেদন করে এক মূহূর্তের জন্য পিছনে না ফিরে সন্ন্যাসীরা শিবের নাম স্মরণ করতে করতে সেই স্থান ত্যাগ করে চলে আসে।

চলে আসার সময় কখনও পিছনে ফিরে তাকায় না। পরের দিন সংক্রান্তি মূল চড়ক অনুষ্ঠানের দিন। সকালে পুকুর থেকে চড়ক দণ্ড উদ্ধার করা হয়। বিগত বৎসরে উৎসব শেষে সন্ন্যাসীরা এই চড়ক দণ্ড পুকুরে ডুবিয়ে রেখেছিল তা বর্তমান বৎসরের জন্য খুঁজে বের করার দায়িত্ব নেয় সন্ন্যাসীরা। সন্ন্যাসীরা সহজে চড়ক দণ্ড খুঁজে না পেলে তারা মনে করে দেবতার অসুন্তষ্ঠির কোন কারণ ঘটেছে। চড়কদণ্ড উদ্ধার করে এই দণ্ড মাটিতে পোঁতা হয় এবং দুপুরের পরেই মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। শিবের মাথায় ফুল চাপিয়ে সন্ন্যাসীরা দেবতার প্রসাদী ফুল পাবার জন্য প্রার্থনা করে।

জোর চিৎকারে সমগ্র পূজা মণ্ডপ সচকিত হয়ে ওঠে। শিবের মাথা থেকে সহজে ফুল পড়ে গেলে সন্ন্যাসীরা মনে করে দেবতা প্রসন্ন হয়েছেন। পরবর্তী ঝাপান উৎসবের জন্য তারা প্রস্তুতি নেয়। ফুল না পড়লে সন্ন্যাসী এবং উপস্থিত ভক্তরা মনে করে কোন অনাচার বা ত্রুটি ঘটেছে সেজন্য দেবতা অপ্রসন্ন হয়েছেন। সন্ন্যাসীদের কাতর প্রার্থনায় সমস্ত পূজামণ্ডপ করুণ হয়ে ওঠে। ফুল পড়লে তবে পরবর্তী ঝাপান অনুষ্ঠান শুরু করা যাবে। চড়কদণ্ডের সাথে কয়েকটি লম্বা বাঁশ পোতা হয়- মাচান তৈরি হয়।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024