শশাঙ্ক মণ্ডল
বল বল অহিরে ছাপেরা তো
গেলায় গঙ্গা পারেরে।
খোঁজাতে খোঁজাতে আলি
পুছাতে পুছাতে আলি
হামে আলি লছুমানকে ঘারেরে
এতই হামে নাচলি এতই হামে ডেগলি
আঙ্গনাকের ধূলা উড়ি গেলায় রে
নাহি তোর পিয়ে আলি
হামে আলি লছুমানকের সেবায়রে।
ও বল বল আহিরে
ছাপেরা তো গেলায় গঙ্গা পারে রে।
পীর গাজীদের কথা
সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে লৌকিক দেবদেবীদের পাশাপাশি পীর গাজীদের বিশেষ প্রভাব লক্ষ করা যায়। খ্রীষ্টীয় চতুর্দশ পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে দক্ষিণ বাংলার এক বিশাল অংশের মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং এই ধর্মান্তকরণের পিছনে পীর গাজীদের এক ব্যাপক ভূমিকা ছিল। পীর গাজীদের মধ্যে অনেকে ঐতিহাসিক চরিত্র হিসাবে পরিচিত। এ সব পীর গাজীদের অলৌকিক ক্ষমতা মানুষের প্রতি ভালোবাসা সহানুভূতি তৎকালীন বর্ণ হিন্দু সামন্ত প্রভুদের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে পীর গাজীদের নেতৃত্ব অন্তজ মানুষগুলির মনে উৎসাহের সৃষ্টি করে।
অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সংগ্রামের পাশাপাশি তারা সেদিন ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ছিলেন। হাড়োয়ার পীর গোরাচাঁদ, ঘুটিয়ারি শরিফের মোবারক গাজী, খাড়ির বড় খাঁ গাজীরা আঞ্চলিক মুসলমান নেতা হিসাবে স্থানীয় হিন্দু শাসকদের অত্যাচারের বিরোধিতা করে তলাকার মানুষদের সহানুভূতি আদায় করেছিলেন। অনেকে হাকিমি চিকিৎসাও কবিরাজিতে দক্ষ ছিলেন সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবনে বিপদের দিনে এদের সাহায্য গ্রহণ করত এবং এরা সকলের কাছে বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র হিসাবে দেবতার আসনে উন্নীত হন।
তাছাড়া ইসলাম ধর্মের সাম্য ভ্রাতৃত্ব পেশা গ্রহণে স্বাধীনতা এবং ধর্মের মধ্যে দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ নিম্ন শ্রেণীর হিন্দু মনে বিশেষ প্রভাব ফেলে। এই ব্যাপক ধর্মান্তকরণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হিন্দ সমাজ নেতা স্মার্ত রঘুনন্দন, রঘুনাথ শিরোমণি প্রমুখ হিন্দু সমাজের ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করেন কিন্তু তা খুব একটা সফল হয়নি। চৈতন্যদেব তার উদার ধর্মমতের মধ্য দিয়ে হিন্দু সমাজের তলাকার মানুষদের যুগ যুগ সঞ্চিত ক্ষোভ দূর করার চেষ্টা করেন ‘দ্বিজোহপি চন্ডাল শ্রেষ্ঠ: হরিভক্তি পরায়ণঃ’ এ ধরনের যুগোপযোগী বিধানের মধ্য দিয়ে।
ইসলাম ধর্মের দুর্বার অগ্রগতি কিছুটা রুদ্ধ হল সমাজের মধ্যে একতার রাখী বন্ধন সৃষ্টি হল। চৈতন্যধর্মের সঙ্গে সুফি ধর্মের অনেক সাদৃশ্য লক্ষ্য করে ডঃ আহমদ শরীফ মন্তব্য করেছেন সামা (কীর্তন), যিকর, বিনয়, আর্তের সেবা, সহিষ্ণুতা, ক্ষমা, বর্ণহীন সমাজ, তালাক, নারীর পুনর্বিবাহ প্রভৃতি বাহ্য আচার আচরণে সুফিও বৈষ্ণবের মধ্যে মিল অনেক।’
Leave a Reply