শশাঙ্ক মণ্ডল
খুলনা বরিশালের বিভিন্ন এলাকাতে দক্ষিণ রামের পূজার প্রচলন আছে। অনেক উন্নত জনপদে দক্ষিণ রায়কে শাস্ত্রীয় এবং লৌকিক বিধানে পুরোহিতরা পূজা করেন; একে শিবপুত্র হিসাবে আবার কখনও বা গণেশের বিচ্ছিন্ন মুণ্ড হতে পূর্ণাকৃতি পেয়েছেন – এই হিসাবে পুজার রেওয়াজ চলে আসছে। পৌষ সংক্রান্তি অথবা পরের দিন ১লা মাঘে দেবতার মূর্তি, মুখচিত্রিত ঘট বা বারা হিসাবে ২৪ পরগনার বিভিন্ন অংশে পূজিত হন।
লোক সংগীত
বর্তমানের নাগরিক সভ্যতা মানুষকে পল্লীগীতির পরিমণ্ডল থেকে বের করে আনছে প্রতিদিন; যার ফলে লোকসংগীত লোকসংস্কৃতি দ্রুত লোপ পাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হয়েছে সুন্দরবনের ক্ষেত্রে বঙ্গবিভাগের মধ্য দিয়ে। সুন্দরবনের উভয়াংশের মানুষ তাদের দীর্ঘকালের বাসস্থান ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে বেরিয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছে এবং জীবিকার প্রয়োজনে নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে পুরানো জীবনের লোকসংগীত আজ হারিয়ে যাবার পথে। লোক সংস্কৃতিবিদরা উভয়দেশে লোকসংস্কৃতির উপাদান সংগ্রহের মধ্য দিয়ে আদিম প্রবাহকে উজ্জীবিত করে লোকজীবনকে সংহত করার কাজে নিয়োজিত।
লোকসংগীতের গুরুত্বের বিষয়টা আজ নৃতত্ববিদদের কাছে যথেষ্ট স্বীকৃতি পেয়েছে। লোক- কথার মধ্যে কল্পনার আধিক্য বাস্তব অস্বীকৃতি বেশি করে লক্ষ করা যায় কিন্তু লোক-সংগীতের মধ্যে মানুষের বাস্তব জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা সবটা বেশি বেশি করে ধরা পড়ে। মানবজীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা সবটাই লোকসংগীতের মধ্যে ধরা পড়ে। কিন্তু বর্তমান নাগরিক জীবনে তা দ্রুত অপসৃত হচ্ছে। সেজন্য অতীত ইতিহাস পর্যালোচনার ক্ষেত্রে লোকসংগীতের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থেকে যায়।
ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে লোকসংস্কৃতির প্রবল ধারা বহমান ছিল তা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না। পূর্বে বরিশাল থেকে পশ্চিমে হুগলীনদী পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে লোকসংস্কৃতি ও লোকসঙ্গীতের বিভিন্ন ধারা বেগবান ছিল এবং তাকে উদ্দীপিত করার ব্যাপারে অসংখ্য অখ্যাত পল্লীর গায়ক গান বেঁধেছেন, লোকশিল্পী নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা পালন করেছেন। লোকসঙ্গীতের ক্ষেত্রে বাউল ভাটিয়ালী সারি জারী কবিগান অষ্টক জাগরণী গীতি মনসা শীতলার ভাসান, বিভিন্ন পালা গান, পীর গাজীদের গান প্রধান ভূমিকায় ছিল।
Leave a Reply