শশাঙ্ক মণ্ডল
কর্মানুসারে এ সব গানের নানা রকম নামকরণ করা হয়েছে। ধান কাটার গান, পাট নিড়ানো ও পাট কাটার গান, ধান ভানার গান, ছাদ পেটানো গান, সাঁওতাল আদিবাসীদের মাটি কাটার সময় সমবেত ভাবে গান গাওয়া দশই গান বলা হয়। কর্মসঙ্গীত শ্রমজীবী মানুষের শ্রম লাঘব করে মনে স্ফূর্তি এনে দেয় এবং কাজের একঘেয়েমি থেকে মানুষকে মুক্ত করে। নদীবহুল দেশে পরিবহণের একমাত্র বাহন নৌকা। সুন্দরবনের নদীতীরবর্তী প্রতিটি গৃহস্থের নৌকার প্রয়োজন হয়। প্রতাপাদিত্য চাঁদ রায় ঈশা খাঁর বিশাল নৌবহর ছিল।
\৫০/৬০ হাত লম্বা নৌকায় ৩০/৪০ জন সশস্ত্র মাঝি দ্রুত গতিতে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই এ যোগ দিত। আবার এরাই শান্তির সময়ে উৎসব আনন্দের দিনে এসব নৌকা নিয়ে নৌকা বাইচে অংশ গ্রহণ করত। সাধারণ মানুষের মুখের সারিগানের অনেক লাইন অশ্লীল মনে হতে পারে, গ্রামের মানুষ নির্বিবাদে এসব গান গেয়ে যেত; শ্লীল অশ্লীল কাল ও পরিবেশের ওপর নির্ভর করে তা মনে রাখতে হবে। সারিগানের বিষয়বস্তু অনেকক্ষেত্রে রাধাকৃষ্ণের কাহিনী তা বৈষ্ণবতত্ত্বের খোলস পালটিয়ে সাধারণ নরনারী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে।
তুমিতো সুন্দর কানাই তোমার ভাঙা না
কোথায় রাখব দইয়ের পশরা কোথায় রাখব পা
শুনে কানাই বলে তখন শুন রসবতী ভ
রা কালে ভরাগাঙে কেন এলে যুবতী।
নৌকা বাইচে জয়লাভ করে উপহার দ্রব্যাদি সঙ্গে নিয়ে বীরের বেশে নৌকা নিয়ে গ্রামে ফিরত, সে সময়ে তারা গেয়ে উঠত ‘জয়দে লো, রামের মা তোর গোপাল আইল ঘরে।’ এ ধরনের অনেক গান খুলনা, বরিশাল ২৪ পরগণার মানুষের মুখে মুখে সে যুগে ব্যাপকভাবে চলত।
ছাদপেটানো গান –
নাগরিক পরিবেশের গান; নদীর উন্মুক্ত জলরাশির উল্লাস এখানে নেই। মাথার ওপর খরসূর্য, কখনও বা বৃষ্টি কাজের গতিকে মন্থর করে তোলে। একঘেয়েমি কাজের ক্লান্তিতে মন নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ঘুম ঘুম একটা ভাব মনের ওপর চেপে বসে, দেহ এলিয়ে পড়তে চায়। একে সজীব ও সচল করে তোলার জন্য গান গেয়ে ওঠে কোন শ্রমিক সঙ্গে সঙ্গে অন্য শ্রমিকেরা গলা মেলায়। স্বাভাবিক ভাবে গানের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়, অনেক সময় এটা করার জন্য শ্লীল অশ্লীল পরিবেশের মধ্যে লুকোচুরি খেলা চলে।
Leave a Reply