শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:২৮ পূর্বাহ্ন

নেতাদের স্মৃতি: ইতিহাস ও রাজনীতি

  • Update Time : শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২.১৩ এএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

সঞ্জয় গান্ধীর নামে দিল্লিতে একটি স্মৃতি-সৌধ আছেঅথচ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভি পি সিংয়ের নামে ভারতের কোথাও” কোনো স্মৃতি-সৌধ নেই। গত ২৬ ডিসেম্বর প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অন্তিম বিশ্রামের স্থান নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে যে বাদানুবাদ চলছেতাতে স্পষ্টকে স্মৃতি-সৌধ পাবে আর কোথায় পাবেতা অনেক সময়ই নির্ভর করে তখনকার ক্ষমতাসীন দলের ওপর।

কংগ্রেসের বক্তব্য, “ভারতের প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রীকে” অপমান করা হয়েছেকারণ মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত নিগমবোধ ঘাটে সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদি সরকার জানিয়েছেভারতের উদারীকরণের স্থপতিকে যথাযোগ্য সম্মান জানিয়ে শীঘ্রই একটি স্মৃতি-সৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

সূত্রমতেপ্রথমে এই উদ্দেশ্যে একটি ট্রাস্ট গঠন করা হবেযেখানে কংগ্রেস ও সরকারের প্রতিনিধিউভয়পক্ষের সদস্য থাকার সম্ভাবনা আছে। সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এই ট্রাস্টই স্মৃতি-সৌধের জন্য স্থান চিহ্নিত করবে। সূত্রে জানা গেছেসিংয়ের স্মৃতি-সৌধ possibly সঞ্জয় গান্ধীর স্মৃতি-সৌধের কাছেজওহরলাল নেহরুর শান্তি বন-এর পাশে হতে পারে। রাষ্ট্রীয় স্মৃতি স্থলযেখানে অন্যান্য নেতাদের সম্মানসূচক স্মৃতি-সৌধ রয়েছেএবং কিসান ঘাটযেখানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চরণ সিংয়ের স্মৃতি-সৌধ আছেএ দুটি জায়গাও অন্য বিকল্প হিসেবে আলোচনা করা হচ্ছে।

দিল্লিতে যমুনা নদীর ধারে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি-সৌধ রাজঘাট গড়ে তোলার পরে অন্যান্য নেতাদের জন্যও একই ধরন অনুসরণ করা হয়। একটি কালো মার্বেল পাটলা চিহ্নিত করে সেই স্থানযেখানে ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে গান্ধীজিকে হত্যা করা হয়েছিল।

নেহরু মারা গেলে১৯৬৪ সালের মে মাসেরাজঘাটের সংলগ্ন একটি স্থানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় এবং ওই স্মৃতি-সৌধের নাম হয় শান্তি বন। ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী (দায়িত্বকাল ১৯৬৪-৬৬)যিনি অল্পদিনই প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলেনতিনিও রাজঘাটের কাছেই একটি স্মৃতি-সৌধ পানযার নাম বিজয় ঘাট।

নেহরু ও শাস্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যুর পর অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলানো গুলজারিলাল নন্দার একটি স্মৃতি-সৌধ আহমেদাবাদে (যেখানে তিনি মারা যান)যার নাম অভয় ঘাট। ১৯৭১ সালের পর আর কোনো সরকারি পদে না থাকা নন্দা ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে মারা যান। সেই সময় কেন্দ্রে আই কে গুজরাল নেতৃত্বাধীন সরকার appena পড়ে গিয়েছিল এবং সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিল।

আহমেদাবাদেই রয়েছে ভারতের প্রথম অ-কংগ্রেস সরকার গঠনকারী প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের স্মৃতি-সৌধযার নাম নারায়ণ ঘাট। গুজরাটের বাসিন্দা দেশাই এমার্জেন্সির পরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীকে পরাজিত করে ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত জনতা পার্টির সরকার প্রধান ছিলেন। তিনি ১৯৯৫ সালে মারা যান। তখন কেন্দ্রে পি ভি নরসিমহা রাওয়ের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার ছিল।

চরণ সিংযিনি দেশাইকে সরিয়ে কংগ্রেসের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী হনযদিও মাত্র ১৯৭৯ সালের জুলাই থেকে ১৯৮০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেনতিনিও মৃত্যুর পর (মে ১৯৮৭) রাজঘাটের কাছে একটিই শেষকৃত্যস্থান পানযার নাম হয় কিসান ঘাট। তখন কেন্দ্রে রাজীব গান্ধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার ছিল।

১৯৮০ সালের জুন মাসে সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যু ঘটে দিল্লিতে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায়। তাঁর শেষকৃত্য স্মৃতি বন প্রাঙ্গণের মধ্যেই হয় এবং সেখানেই সঞ্জয়ের একটি সমাধি স্থাপন করা হয়। সে সময় কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাঁর মা ইন্দিরা গান্ধী।

১৯৮৪ সালের অক্টোবর মাসে ইন্দিরা গান্ধী নিহত হলেরাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইন্দিরার শেষকৃত্যও রাজঘাটের কাছে নির্দিষ্ট স্থানে সম্পন্ন হয়যার নাম হয় শক্তি স্থল। এরপরে ১৯৯১ সালের মে মাসে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে রাজীব গান্ধীর নিহত হওয়ার পররাজঘাটের লাগোয়া আরেকটি স্থানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় এবং ওই স্মৃতি-সৌধের নাম হয় বীর ভূমি। তখন সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণা চলছিলএবং সেই নির্বাচনে কংগ্রেসই ক্ষমতায় আসে। তবে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত কেন্দ্রে পূর্ণমেয়াদী কংগ্রেস সরকার পরিচালনা করা পি ভি নরসিমহা রাওয়ের নামে দিল্লিতে কোনো স্মৃতি-সৌধ হয়নি। ২০০৪ সালেযখন কেন্দ্রে মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার ছিলতখন রাও মারা যান। তাঁর মরদেহ দলীয় দপ্তরে শায়িত রাখতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাঁকে হায়দরাবাদে দাহ করা হয় (রাও তৎকালীন অখণ্ড অন্ধ্র প্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন)।

অবশেষে২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদির সরকার রাওয়ের নামে একটি স্মৃতি-সৌধ নির্মাণ করেযার নাম জ্ঞান ভূমি।

এর দুই বছর আগে২০১৩ সালেকেন্দ্রে মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার স্থির করেছিল যে ভবিষ্যতে নেতাদের জন্য আলাদা আলাদা স্মৃতি-সৌধ তৈরি না করেযমুনার তীরে একটি কমন কমপ্লেক্স—‘রাষ্ট্রীয় স্মৃতি স্থল’—গড়ে তোলা হবে। কারণAlready দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে প্রায় ২৪৫ একর জমি বিভিন্ন স্মৃতি-সৌধের দখলে। আসলে এই যৌথ স্মৃতি-সৌধ কমপ্লেক্স গড়ার কথা প্রথম ২০০০ সালেযখন অটল বিহারি বাজপেয়ী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায়তখন আলোচিত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভায় এটি অনুমোদিত হয়। রাওয়ের প্রতি নিবেদিত স্মৃতি-সৌধটি এই রাষ্ট্রীয় স্মৃতি স্থল কমপ্লেক্সের মধ্যেই অবস্থিত।

নভেম্বর ১৯৯০ থেকে জুন ১৯৯১ পর্যন্ত কংগ্রেস-সমর্থিত একটি সংখ্যালঘু সরকারের প্রধান ছিলেন চন্দ্রশেখর। তিনি ২০০৭ সালের জুলাইয়ে মারা গেলে তাঁর শেষকৃত্য একতা স্থল কমপ্লেক্সের মধ্যে হয়। ২০১৫ সালে মোদি সরকার তাঁর স্মৃতি-সৌধটির নামকরণ করে জননায়ক স্থল।

আই কে গুজরালযিনি ১৯৯৭ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৯৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেনতিনিও স্মৃতি স্থল কমপ্লেক্সে একটি সমাধি পেয়েছেন। দীর্ঘদিন কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত গুজরাল ২০১২ সালের নভেম্বরে মারা যান।

বিজেপির প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ীতিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী পদে বসেনতবে একবারই পূর্ণ মেয়াদ (১৯৯৯ থেকে ২০০৪) সম্পূর্ণ করেন। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে বাজপেয়ীর মৃত্যু হলে মোদি সরকার তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করে এবং তাঁর স্মৃতি-সৌধের নামকরণ করে সদৈব অটল।

ভি পি সিংযিনি ১৯৮৯ থেকে ১৯৯০ সালের স্বল্পমেয়াদি প্রধানমন্ত্রিত্বকালে মন্ডল কমিশন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভারতের রাজনীতিতে এক অদম্য আলোড়ন তোলেনতিনিই একমাত্র প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীযাঁর কোনো স্মৃতি-সৌধ নেই।

ভি পি সিংয়ের নামে কোনো স্মৃতি-সৌধ আছে কি না জানতে চাইলে তাঁর পুত্র অজেয় দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে জানিয়েছিলেন, “কোনো স্মৃতি-সৌধ নেই।” গত বছর চেন্নাইয়েতামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন যখন ভি পি সিংয়ের একটি মূর্তি উন্মোচন করেনতখনও তিনি একই কথা বলেছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024