ম্যাকসিম গোর্কী
একটি চিঠি
এর আগে এমন তিক্ত হতাশায়, এমন সান্ত্বনাহীন কান্নায় আমি কোনোদিন কাঁদি নি। জানি না, আমি তাঁকে ভালোবাসতাম কিনা; কিন্তু তাঁর প্রতি ভালোবাসা বা তাঁর প্রতি ঘৃণায় কি আসে যায়? তিনি আমার মধ্যে যে অনুভূতি, যে আন্দোলনের সৃষ্টি করতেন, তা ছিল বিপুল, তা ছিল দুর্বোধ্য, তা ছিল প্রহেলিকাময়। এমন কি তিনি যখন মনের মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর বিরুদ্ধ মনোভাব জাগিয়ে তুলতেন, তখনো তা আমার মধ্যে বোঝার মতো ভারী হ’য়ে নেবে আসতো না, দিতো আগুন ধরিয়ে আমার আত্মায়, তাকে ক’রে তুলতো আরো অনুভূতিশীল, আরো শক্তিমান।
যখন তিনি মাটির উপর বুটের খস্থস্ শব্দ করতে করতে-যেন মাটির অসাম্যটাকে তিনি শাসন ক’রে মসৃণ ক’রে দিতে চান-কোথাও থেকে এসে অকস্মাৎ আবির্ভূত হতেন, কোনো দরজার পেছন থেকে বা ঘরের কোনো কোণ থেকে, তারপর পৃথিবী ভ্রমণে সুঅভ্যস্ত কোনো মানুষের মতো দ্রুত, লঘু, ছোটো ছোটো পা ফেলে আসতেন এগিয়ে, সে ছিল দেখবার মতো।
তাঁর হাতের বুড়ো আঙুল দু’টোকে বেল্টের মধ্যে ঢুকিয়ে তিনি এক সেকেণ্ডের জন্যে থেমে দাঁড়াতেন, চারিদিকে একবার সর্বগ্রাহী দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে নিতেন চকিতে। সে দৃষ্টির কাছে যা কিছু নতুন তা মুহূর্তেই ধরা পড়ে যেতো, নিমেষেই সব কিছুর যথাযথ অর্থ তিনি হৃদয়ংগম করে নিতেন। প্রশ্ন করতেন, “তুমি কেমন আছো?”
কথাগুলোকে আমি প্রতিবারেই তর্জমা ক’রে নিতুমঃ “তুমি কেমন আছো? আমি একটি আনন্দ পেয়েছি-সে তুমি ভালো ক’রে বুঝবে না। তবু, তুমি কেমন আছো ?”
তিনি যখন বেরিয়ে আসেন, তখন তাঁকে কেমন যেন ছোটো লাগে। কিন্তু পরক্ষণেই তাঁর চারিদিকের সবাই যেন তাঁর পাশে আরো ছোটো হ’য়ে যায়। চাষার মতোন তাঁর দাড়ী। অমসৃণ, তবু অসামান্য দুটি হাত। নিতান্ত সাদাসিদে পোশাক। তাঁর এই বাইরেকার আরামপ্রদ গণতান্ত্রিকতাটা অনেক সময় মানুষকে ঠকাতো। আমি বহু রাশিয়ানকে লক্ষ্য করেছি, যারা মানুষের পোশাক দেখে মানুষকে বিচার করে- অবশ্য এ একটা পুরাতন গোলামী অভ্যাস। তারপর তারা ঢালতে শুরু ক’রে দিতো তাদের জঘন্য অকাপট্যের অনর্গল স্রোত-যাকে যথাযথভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, “অন্তরালের ঘনিষ্ঠতা।”
Leave a Reply