কিরা নাইটলির চমকপ্রদ অ্যাকশন থ্রিলার, কিংবা টেড ড্যানসনের সর্বশেষ কমেডি বা নৃশংসতায় ভরা জাপানি মহাকাব্য– এরকম সিরিজ যারা দেখেন বা যাদের বলা চলে সিরিজের পোকা তারা হয়তো বছর শেষে জানতে চাইতেই পারেন, কোন কোন সিরিজ দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছে এবার!
বিবিসি নিউজের বিনোদন সংবাদদাতা ক্যারিন জেমস এবং হিউ মন্টগোমারি বেছে নিয়েছেন ২০২৪ সালের সেরা ২০টি সিরিজকে।
(এখানে সিরিজগুলোর ক্রমাঙ্ক দর্শকদের গ্রহণযোগ্যতা বা অন্য কোনো দিক থেকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ইত্যাদি স্থানকে নির্দেশ করছে না।)
গল্পের কার্যত অস্পষ্ট চরিত্রগুলোকে একেবারে সীমানায় ঠেলে দিয়েছে এই সিরিজের তৃতীয় সিজন। যৌন নির্যাতন এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ একাধিক সময়োপযোগী বিষয় এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
ইয়াসমিন ও রবার্টের চরিত্রে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন অভিনেতী মারিসা আবেলা এবং অভিনেতা হ্যারি লটে।
তৃতীয় সিজনে উল্লেখযোগ্য সংযোজন হলেন অভিনেত্রী কিট হ্যারিংটন। তাকে একজন মনোমুগ্ধকারী অভিজাত নারীর চরিত্রে দেখেছেন দর্শকরা যিনি একটি গ্রিন স্টার্টআপ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। এই চরিত্রের উপস্থিতি ইয়াসমিন এবং রবার্ট দুজনকেই অস্থির করে তোলে।
একটি চরিত্রের মৃত্যু এবং চরিত্রগুলোর মধ্যে সম্পর্কের নতুন মোড়ের কারণে শেষ এপিসোডটিকে সিরিজের সমাপ্তি বলে মনে হতে পারে।
তবে না, এত দ্রুতও শেষ হচ্ছে না ‘ইন্ডাস্ট্রি।’ আরও একটি সিজনের কাজ চলছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাক্স এবং যুক্তরাজ্যে বিবিসি আইপ্লেয়ারে দেখা যাবে এই সিরিজ।
‘আ ম্যান অন দ্য ইনসাইড’ এই তালিকায় থাকা সিরিজগুলোর মধ্যে হয়ত সবচেয়ে ‘হাল্কা চালের’ শো। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে এটা অন্যগুলোর তুলনায় কোনও অংশে কম শক্তিশালী।
‘দ্য গুড প্লেস’-এর স্রষ্টা মাইকেল শুর তার সর্বশেষ কৌতুকধর্মী সিরিজের জন্য তারকা টেড ড্যানসনের সঙ্গে আরও একবার হাত মিলিয়েছেন।
চার্লস নামক একজন অবসরপ্রাপ্ত স্থপতির চরিত্রে অভিনয় করেছেন মি. ড্যানসন। চিত্রনাট্য অনুযায়ী, শেষের দিকে আলঝেইমার্স রোগে আক্রান্ত স্ত্রীকে হারিয়ে ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষতির সঙ্গে লড়াই করছেন চার্লস।
সেই সময় এক বেসরকারি গোয়েন্দা তাকে একটি কেয়ার হোমে বসবাসকারী এক প্রবীণ নারীর গয়না চুরির কেসের তদন্তের জন্য নিযুক্ত করেন।
কেয়ার হোমের আবাসিকের ছদ্মবেশ নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে জীবনের একটা নতুন মানে খুঁজে পান তিনি, একইসঙ্গে বন্ধুও।
এই সিরিজ দর্শকদের মনোরঞ্জন ছাড়াও আরো একটা কাজ করে বৈকি। আমাদের এই বিশ্বে যেখানে সকলেই তারুণ্যের আবেশে মজে থাকতে চায়, সেখানে ‘প্রবীণ একজন আন্ডারকভার ব্যক্তির’ (চার্লসের) সাফল্য সমস্ত প্রযোজক এবং নির্বাহীদের মনে করিয়ে দেবে যে প্রবীণ তারকাদের অভিনীত সিরিজ দেখার খিদে আজও রয়েছে।
নেটফ্লিক্সে দেখা যেতে পারে এই সিরিজ।
দর্শকদের বিনোদনের জন্য ‘স্পাই’ শোয়ের অভাব নেই। কিন্তু অভিনেত্রী কিরা নাইটলি ও অভিনেতা বেন হুইশোর যা করেছেন তা অনেকের পক্ষেই হয়তো সম্ভব নয়।
গল্প অনুযায়ী, হেলেন (কিরা নাইটলি) ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর স্ত্রী। তবে হেলেন আসলে একজন গুপ্তচর। এক দশক ধরে ‘ব্ল্যাক ডাভস’ নামে একটি ভাড়াটে সংস্থার হয়ে তারই স্বামীর ওপর নজর রাখছেন।
হেলেনের প্রেমিককে খুন করা হলে তার পুরানো সহকর্মী স্যামকে (বেঙ হুইশো) ডেকে আনা হয় তাকে (হেলেনকে) রক্ষা করার জন্য।
শ্যাম ও হেলেন কীভাবে বন্ধু হয়েছিলেন তার নেপথ্যের মর্মস্পর্শী গল্পের সঙ্গে বর্তমানের ঘটনাগুলোকে বুনে তৈরি করা হয়েছে চিত্রনাট্য।
এই বুনোট এতটাই পোক্ত যে গল্প থেকে এক মুহূর্তের জন্যও ফোকাস সরে না। মনে হয় প্রতি পদে একজন ঘাতক লুকিয়ে রয়েছে।
শুধু সাসপেন্স নয়, প্রেম, আনুগত্য, নকল পরিচয় ও বৈশ্বিক রাজনীতির ছোঁয়াও রয়েছে ব্ল্যাক ডোভসে।
নেটফ্লিক্সে এই সিরিজটি দেখা যাবে।
এই নিয়ে টানা দ্বিতীয় বছর এই অস্ট্রেলিয়ান রম-কম (রোম্যান্টিক কমেডি) ‘সেরা’র তালিকায় এসেছে। বলা যেতে পারে আরও পোক্ত হয়েছে ‘কলিন ফ্রম অ্যাকাউন্টস’।
এখানে গল্পের মজটা হলো বাস্তবতার সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে যেভাবে সম্পর্কগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে। সম্পর্কের টানাপড়েন থেকে শুরু করে শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপস, সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ- সব পরিস্থিতিতেই বাস্তবের ছোঁয়া। একমাত্র হাস্যরসের সময়েই কেবল একটু অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে দর্শকদের।
পিকক এবং বিবিসি আইপ্লেয়ারে দেখা যেতে পারে এই অস্ট্রেলিয়ান সিরিজ।
প্যাট্রিক রেডেন কিফের ২০১৮ সালে লেখা বইয়ের ওপর ভিত্তি করে এই অসাধারণ সিরিজটি নির্মিত।
‘সে নাথিং’ ১৯৭০ এর দশকের উত্তর আয়ারল্যান্ডের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার আইআরএ সদস্যদের মনের গভীরে থাকা চিন্তা-ভাবনার মধ্যে দিয়ে দর্শকদের নিয়ে যাওয়ার ‘সাহস’ দেখায়।
এই সদস্যরা সন্ত্রাস ও হত্যাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে সেটা ন্যায্য বলেও দাবি করতেন।
বাস্তব ঘটনার ওপর আধারিত এই সিরিজের গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে ডলোরস প্রাইস। তিনি ও তার বোন মেরিয়ান লন্ডনের গাড়ি বোমা হামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন।
এই সিরিজে অভিনেতারা আবেগের সঙ্গে প্রতিটি চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছেন।
হুলু এবং ডিজনি প্লাসে দেখা যাবে এই সিরিজ।
‘অ্যাপল’ চলতি বছরেও বিনোদন জগতের সামনের সারিতে থাকা তারকাদের নিয়ে গ্ল্যামারাস শোতে প্রচুর অর্থ ঢালার প্রবণতাকে অব্যাহত রেখেছে। সেটা যে খুব সাড়া ফেলতে পেরেছে তেমন নয়। তবে ওই চ্যানেলের সেরা সিরিজ হিসেবে উঠে এসেছে এই ব্রিটিশ গুপ্তচরের কাহিনী।
মিক হেরনের লেখা বইয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই সিরিজের গল্প এমন একদল ব্যক্তিকে ঘিরে যারা এমআই-৫ হিসেবে ‘ব্যর্থদের’ তালিকায় রয়েছেন।
সিরিজের চতুর্থ সিজন মুক্তি পেয়েছে। কৌতুকরস ও অ্যাকশনের যথাযথ মিশ্রণ আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে এই সিজনকে। আরও দুটো সিজন আসার কথা রয়েছে।
অ্যাপল টিভি প্লাসে এ দেখা যেতে পারে এই সিরিজ।
কাল্পনিক ইংলিশ কাউন্টি রুথশায়ারের প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠে ‘রাইভালস’ এর কাহিনী। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত জিলি কুপারের উপন্যাস এই গল্পের মূল ভিত।
সিরিজটি চিত্তাকর্ষক হয়ে ওঠার কারণ অভিনয়। অভিনেতারা আশির দশকের অতিরঞ্জিত চরিত্রগুলোকে নিজস্ব মহিমায় মূর্ত করে তুলেছেন।
অভিনেতা ডেভিড টেন্যান্ট একজন টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মালিকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। আইডান টার্নারকে দেখা গিয়েছে এমন এক টিভি উপস্থাপক হিসেবে যিনি প্রচুর টাকা বেতন পান বটে কিন্তু একেবারেই সন্তুষ্ট নন। অ্যালেক্স হ্যাসেল মার্গারেট থ্যাচার-যুগের এমন এক ক্রীড়ামন্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন যার সঙ্গে একাধিক নারীর সম্পর্ক রয়েছে।
প্রেম, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক, যৌনতায় মোড়া এই সিরিজ।
হুলু এবং ডিজনি প্লাস প্ল্যাটফর্মে এই সিরিজ দেখতে পারেন।
১৯৭১-এ প্রকাশিত ফ্রেডরিক ফোরসিথের উপন্যাসকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই সিরিজ দশটি এপিসোডে বিভক্ত। অভিনেতা এডি রেডমেইন একজন হিটম্যান বা ভাড়াটে খুনির চরিত্রে অভিনয় করেছেন। দ্য জ্যাকলকে একজন রহস্যময় ব্যক্তি হিসাবে নিপুণতার সঙ্গে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।
একজন কোমল স্বভাবের আপাতদৃষ্টিতে পারিবারকেন্দ্রিক মানুষ থেকে ঠান্ডা রক্তের হত্যাকারী হয়ে ওঠা পারদর্শিতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন এডি রেডমেইন। চরিত্রের খাতিরে তাকে একাধিক ছদ্মবেশ ধারণ করতে হয়েছে।
স্প্যানিশ অভিনেত্রী উরসুলা কর্বেরো জ্যাকলের সন্দেহপ্রবণ ও দ্বান্দ্বিক স্ত্রীর চরিত্রে যথাযথ।
রোনান বেনেট (যিনি নেটফ্লিক্সের টপ বয় সিরিজের নেপথ্যে রয়েছেন) এই সিরিজটিকে একটি স্বতন্ত্র বন্ড মুভির অনুভূতি দিয়েছেন যেখানে জ্যাজি থিম টিউন থেকে শুরু করে দক্ষতার সঙ্গে চিত্রায়িত অ্যাকশনের দৃশ্য রয়েছে।
(হিউ মন্টগোমারির অভিমত।)
‘পিকক’ এবং ‘নাও’ প্ল্যাটফর্মে দেখা যেতে পারে এই সিরিজ।
তীক্ষ্ণ লেখনী সিরিজের দ্বিতীয় মৌসুমকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। দক্ষতার সঙ্গে বিশ্ব রাজনীতি আর ব্যক্তিগত জীবনের গল্পকে মেলানো হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে একের পর এক টুইস্ট যা দর্শকদের অবাক করতে বাধ্য।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ‘অনাগ্রহী’ মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেট ওয়াইলারকে (কেরি রাসেল) যে কোনো কক্ষে সবচেয়ে স্মার্ট ব্যক্তি বলে মনে হলেও বেশ কয়েকটি ছোট ছোট জিনিস বিচার করতে তার ভুল হয়েছিল। যেমন কে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজে বোমা ফেলেছে, তার নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা কতখানি বা তিনি স্বামী (যিনি প্রায় ছেড়েই চলে গিয়েছিলেন) হ্যাল (রুফাস সিওয়েল)-এর ওপর কতটা নির্ভরশীল।
গল্পে বর্ণিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রটি ‘লঘু’ হলেও বিস্ফোরক, কারণ কেট জানতে পেরেছেন ওই বোমা হামলার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক খেলোয়াড়রা জড়িত।
দর্শকদের জন্য সুখবর হলো শিগগিরই ডিপ্লোম্যাটের তৃতীয় মৌসুম আসতে চলেছে। এখানে সামনে রাজনীতি কোনদিকে মোড় নেয় এখন সেটাই দেখার।
দর্শকরা নেটফ্লিক্সে উপভোগ করতে পারেন এই সিরিজ।
নামি প্রযোজক রায়ান মারফির টেলিভিশন সাম্রাজ্য বেশ কিছুদিন ধরেই ‘নিম্নমুখী’।
তবে চলতি বছরের শুরুতে মি. মারফিন আবার প্রমাণ করেছিলেন প্রযোজক হিসেবে তার দক্ষতা। লেখক ট্রুম্যান কাপোট এবং তার সোশ্যালাইট বন্ধুদের জীবন অধ্যয়নের মাধ্যমে স্মার্ট, একটি অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ নাটক তৈরি করেছেন তিনি।
জন রবিন বাইটজের চিত্রনাট্য ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ‘আন অ্যান্সারড প্রেয়ারস’ উপন্যাস প্রকাশের পর থেকে কাপোটের পতনকে কেন্দ্র করে তৈরি। ট্রুম্যান কাপোট ওই উপন্যাসে তার নিকটতম বন্ধুদের ব্যক্তিগত জীবনের কেলেঙ্কারির কথা ফাঁস করে দিয়েছিলেন।
কাপোটের ভূমিকায় টম হল্যান্ডার এককথায় অসাধারণ। অন্যদিকে নাওমি ওয়াটস, ক্লো সেভিগনি, ক্যালিস্টা ফ্লকহার্ট এবং ডায়ান লেন ‘সওয়ানস’-এর ভূমিকায় চমৎকারভাবে অভিনয় করেছেন।
হুলুতে এবং ডিসনি প্লাসে দেখা যেতে পারে।
সাসপেন্সে পূর্ণ এই সিরিজের চতুর্থ সিজন দেখানো হলো। বরফে হিমায়িত করে হত্যার কাজে ব্যবহৃত অবিস্মরণীয় শব্দ ‘ক্রপসিকলস’-এটিই হয়তো যথেষ্ট ছিল। তবে দর্শকদের বেঁধে রাখার জন্য ‘ট্রু ডিটেক্টিভ: নাইট কান্ট্রি’তে অনেক উপাদানই মজুত রেখেছেন নির্মাতারা।
চিত্রনাট্য অনুযায়ী, জোডি ফস্টার আলাস্কার ছোট একটি শহরের পুলিশ প্রধান হিসাবে পরপর ঘটে চলা ভয়ঙ্কর হত্যা মামলার তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বছরের এমন একটি সময়ের প্রেক্ষাপটে এই গল্পটি বোনা হয়েছে যখন সেখানে পনেরো দিনের জন্য সূর্য ওঠে না।
মধ্যরাতে শ্যুট করা হয়েছে এই সিরিজ যা দর্শকদের একটা শীতল অনুভূতি দিতে বাধ্য।
ম্যাক্স এবং নাও প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ রয়েছে এই সিরিজ।
জেমস ক্লেভেলের ঐতিহাসিক উপন্যাস শোগুন অবলম্বনে ১৯৮০ এর দশকে একটি ব্লকবাস্টার মিনিসিরিজ তৈরি করা হয়েছিল।
জন ব্ল্যাকথর্ন নামে এক ব্রিটিশ নাবিককে কেন্দ্র করে ঘোরাফেরা করে এই গল্প। জাপানের উপকূলে জাহাজ ভেঙে পড়ায় জাপানের এক সমুদ্র তটে আটকে পড়েছিলেন তিনি। ক্রমে সে দেশের ক্ষমতাসীন কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন।
গল্প ছাড়াও দর্শকদের জন্য যা রয়েছে তা হলো চমৎকার চিত্রগ্রহণ, দুর্দান্ত অভিনয় এবং চরিত্রগুলোর নানা ষড়যন্ত্রের মাঝে পড়ে হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ।
হিরোয়ুকি সানাদা থেকে শুরু করে আন্না সাওয়াই- এই সিরিজের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করা তারকারা তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নজর কেড়েছেন।
এটি মূলত সংক্ষিপ্ত সিরিজ হলেও শোগুনের সাফল্য নির্মাতাদের আরও দুটি সিজনের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করতে বাধ্য করেছে।
হুলু এবং ডিজনি প্লাসে এই সিরিজ দেখা যাবে।
রিচার্ড গ্যাডের আত্মজীবনীমূলক এই গল্প বছরের অন্যতম আলোচিত ও হিট সিরিজগুলোর একটি।
মি. গ্যাড একজন উঠতি কৌতুক অভিনেতার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যার নাম ডনি ডান। মার্থা নামে এক নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
ডনি যে বারে কাজ করতেন মার্থা সেখানে এসে উপস্থিত হন। ক্রমে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে এমনটা কল্পনা করতে থাকেন মার্থা। এরপর ধীরে ধীরে বিষয়টা অন্যদিকে মোড় নেয়।
ডনিকে বিরক্ত করতে থাকেন তিনি। তাকে একের পর এক ইমেল পাঠান, পিছু করেন। ডনির জীবনকে প্রায় শেষ করে দেয় মার্থার উপস্থিতি।
মার্থার ভূমিকায় অভিনেত্রী জেসিকা গানিং অবিশ্বাস্য। তিনি ওই চরিত্রটিকে একদিকে ভয়ঙ্করভাবে বিভ্রান্তিমূলক এবং অন্যদিকে করুণার পাত্র- দুই ভাবেই উপস্থাপনা করেছেন। পুরো সিরিজ জুড়েই উত্তেজনা এক অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়।
এই সিরিজ নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। দর্শকরা ইন্টারনেট ঘেঁটে ফিওনা হার্ভে নামে এক নারীকে খুঁজে বার করেন। তাকে বাস্তব জীবনের মার্থা বলে মনে করতে থাকেন। এরপর মিজ হার্ভে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন এবং মানহানি, অবহেলা ও গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
তবে এই সমস্ত বিষয়কে একপাশে সরিয়ে রাখলে বলা যায় যে ‘বেবি রেনডিয়ার’ চিত্তাকর্ষক স্বীকারোক্তিমূলক সিরিজের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
নেটফ্লিক্সে দেখা যেতে পারে এই সিরিজ।
ফলআউট একটি পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপটিক ভিডিও গেম ফ্র্যাঞ্চাইজির অংশ। এখানে এমন একটি বিশ্বকে কল্পনা করা হয়েছে যা পারমাণবিক যুদ্ধে বিধ্বস্ত এবং মানুষ যেখানে মাটির নিচের ভল্টে বাস করে।
গল্প অনুযায়ী, ব্রিটিশ অভিনেত্রী এলা পার্নেল ভল্ট ৩৩ এর বাসিন্দা। তার অপহৃত বাবাকে উদ্ধার করার জন্য পৃথিবীর পৃষ্ঠে একটি অভিযান শুরু করেন তিনি।
লিসা জয় এবং জোনাথন নোলান দ্বারা সহ-প্রযোজিত এই সিরিজের নিজস্ব আখ্যানের একটি ছন্দ রয়েছে যা ফলআউটকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
অ্যামাজন প্রাইমে দেখা যাবে এই সিরিজ।
প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথের উপন্যাস ‘দ্য ট্যালেন্টেড মি. রিপলি’ উপন্যাসের এই হিচককিয়ান সংস্করণে অ্যান্ড্রু স্কট অসাধারণ। প্রাণঘাতী ‘কন ম্যান’ (ঠগ) টম রিপলি হিসেবে তিনি মন জয় করেছেন।
৬০-এর দশকে নেপলস ও রোমের প্রেক্ষাপটে বোনা এই গল্পে অস্কারজয়ী চিত্রগ্রাহক রবার্টের নাটকীয় কালো-সাদা ফ্রেমগুলো অন্য মাত্রা যোগ করেছে। সিরিজটি নিউইয়র্কের এক ছোটখাটো ঠগ থেকে লা ডলচে ভিটার বাসিন্দা হয়ে ওঠা রিপলির অন্ধকার বিশ্বে অবাধ যাতায়াতকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে সাদা-কালো এই সিরিজ।
এই সিরিজ স্টিভেন জাইলিয়ানের ১৯৯৯ সালের স্মরণীয় চলচ্চিত্র থেকে একেবারে আলাদা। আকর্ষণীয় সিরিজটি লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন তিনি।
নেটফ্লিক্সে দেখা যেতে পারে এই সিরিজ।
চলতি বছরে ডেভিড নিকোলস নির্মিত এই ব্রিটিশ রোমান্সের চাইতে বোধহয় অন্য কোনও সিরিজ আবেগকে এত বেশি আলোড়িত করেনি। ডেক্সটার এবং এমা নামে দুই চরিত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরাফেরা করে সিরিজের গল্প।
ডেক্সটার ও এমা বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় থেকে বন্ধু। ‘ওয়ান ডে’ তাদের সম্পর্কের উত্থান-পতনকে অনুসরণ করে। ২০ বছর ধরে প্রতি বছরের ১৫ই জুলাই তারিখে তাদের সম্পর্ককে দেখানো হয়েছে।
গল্পের শুরু ১৯৮০-র দশকে যা একটি নির্দিষ্ট বয়সের দর্শকদের স্মৃতিমেদুর এক সফরে নিয়ে যায়। সময় উপযুক্ত পপ গানের ব্যবহার এই সিরিজের উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিও উডল (ডেক্সটারের চরিত্রে) এবং অম্বিকা মড (এমা)। তারা পর্দায় একা আসুন বা জুটিতে, প্রতিবারই দর্শককে মুগ্ধ করেছেন।
তবে যারা এই সিরিজ এখনও দেখেননি, তাদের বলে দেওয়া ভালো, ‘ওয়ান ডে’ কিন্তু আপনার চোখ ভিজিয়ে দিতে পারে।
দর্শকরা নেটফ্লিক্সে দেখতে পারেন এই সিরিজটি।
চলতি বছরের সবচেয়ে আনন্দদায়ক চমক রয়েছে ‘মঁসিয়ে স্পেড’ সিরিজে। ডিটেকটিভ স্যাম স্পেডের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা ক্লাইভ ওয়েন।
লেখক ড্যাশিয়েল হ্যামেটের লেখা প্রাইভেট ডিডেক্টিভ স্পেডের গল্প ১৯৪০-এর দশকের সান ফ্রান্সিসকোর প্রেক্ষাপটে হলেও এই সিরিজের গল্পটি বোনা হয়েছে ১৯৬০-এর দশকের ফ্রান্সের প্রেক্ষাপটে।
দ্য মাল্টিজ ফ্যালকন (১৯৪১) চলচ্চিত্রের হামফ্রে বোগার্ট অভিনীত কঠিন ধাঁচের ব্যক্তিত্ব ডিটেক্টিভ স্পেডকে নকল করার পরিবর্তে অভিনেতা ক্লাইভ ওয়েন ওই চরিত্রে তার নিজস্ব ছোঁয়া এনেছেন।
ডিটেক্টিভ স্পেডের চরিত্রকে তিনি একজন চতুর ও আবেগের দিক থেকে শীতল ব্যক্তি হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছেন যিনি কখনও কখনও বিভ্রান্তও হন, বিশেষত যখন ফরাসি ভাষা আয়ত্ত করার চেষ্টা করেন।
দুই নারীকে ঘিরে তার জীবনে জটিল ব্যক্তিগত সম্পর্কও রয়েছে। তাদের একজন হলেন ডিটেক্টিভ স্পেডের লাস্যময়ী প্রেমিকা এবং অন্যজন হলেন এক তরুণী যিনি স্পেডের সহকারী হয়ে ওঠেন।
একটি মনোরম শহরে হত্যা, নাৎসিদের ষড়যন্ত্র ও স্পেডের নিজস্ব তদন্ত কৌশল এই সিরিজকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। সাসপেন্সে ঠাঁসা এই সিরিজ পরিচালনা করেছেন পরিচালক স্কট ফ্রাঙ্ক যিনি এর আগে দ্য কুইনস গ্যাম্বিট পরিচালনা করেছিলেন।
তবে একথা বলতেই হয় যে অভিনেতা ক্লাইভ ওয়েন ডিটেক্টিভ স্পেডের চরিত্রে নিজস্বতা এনে একটা আলাদা মাত্রা যোগ করেছেন।
এএমসি প্লাসে দেখা যাবে এই সিরিজ।
বাস্তবে সরকারি বিষয়ের ওপর কোনও টেলিভিশন শো প্রভাব ফেলেছে এমন ঘটনা একেবারে বিরল। তবে এমনটাই ঘটেছে চলতি বছরের শুরুতে। এই ব্রিটিশ মিনিসিরিজটি জাতীয় ডাকঘর কেলেঙ্কারির ওপর ফোকাস করে তৈরি।
৭০০টিরও বেশি পোস্ট অফিসের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, যা সঠিক নয়। এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকাউন্টিং-এ হেরফের, চুরি এবং জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হয়েছিল। অথচ এর জন্য দায়ী ছিল কম্পিউটার সিস্টেমের ব্যর্থতা।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যখন এই ‘মি. বেটস ভার্সেস পোস্ট অফিস’ যুক্তরাজ্যে সম্প্রচারিত হয়, তখন ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছিল। সেই সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে ‘ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত মুক্তি ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য’ একটি নতুন আইন আনার বিষয়ে ঘোষণা করতেও প্ররোচিত করেছিল সিরিজটি।
গুয়েনেথ হিউজের চার পর্বের এই শো চমৎকারভাবে ভুক্তভোগীদের গল্পগুলোকে একত্রিত করেছে যা খুবই মর্মস্পর্শী। এর পরতে পরতে রয়েছে মানবিকতার ছোঁয়া।
এর মধ্যে নাম ভূমিকায় থাকা অ্যালান বেটস (অভিনেতা টবি জোনস) এক কথায় অনবদ্য। অ্যালান বেটস ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে পোস্টমাস্টারদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং অমানবিক আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
এই অনুষ্ঠানটির প্রভাব প্রমাণ করে যে কখনও কখনও একটি গল্প সাংস্কৃতিক চেতনা সৃষ্টি করতে পারে।
পিবিএস এবং আইটিভিএক্সে দেখা যেতে পারে ‘মি. বেটস ভার্সেস পোস্ট অফিস’।
কাল্পনিক মধ্য ইউরোপীয় দেশের একনায়ক এলেনা ভার্নহ্যাম, এই নারীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট।
ডার্ক পলিটিক্যাল ঘরানার এই কমেডিতে উদ্ভট ও শীতল একনায়কের চরিত্রে প্রাণসঞ্চার করেছেন তিনি।
এলেনার চরিত্রে কৌতুকপূর্ণ দিক রয়েছে, আবার রয়েছে নির্মম দিকও। ক্রিসমাস উপলক্ষে জাতির প্রতি ভাষণ দিতে গিয়ে সবাইকে “আমার ভালোবাসা” বলে সম্বোধন করতে দেখা যায় তাকে। আবার ‘সান্তা বেবি’ গানটিও গাইতে শোনা যায়।
তবে ক্ষমতা ধরে রাখার সংকল্পে এলেনা নির্মম। নিকটবর্তী দেশে আক্রমণ করে সেখানকার রাজনৈতিক বিরোধীদের কারাগারে বন্দি করেন তিনি। মিজ উইন্সলেট তার চরিত্রের কৌতুকপূর্ণ ও মন্দ দিকের মধ্যে সুন্দরভাবে ভারসাম্য রক্ষা করেছেন।
অভিনেতা ম্যাথিয়াস শোয়েনার্টসকে দেখা যায় একজন সৈনিক হিসেবে যিনি এলেনার প্রেমিক হয়ে ওঠেন।
রেজিমের সুর যতটা না তীক্ষ্ণ, তার চেয়ে বেশি অযৌক্তিক। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটা রাজনৈতিকভাবে টালমাটাল জগতের প্রতিফলন হয়ে দাঁড়ায়।
ম্যাক্স এবং নাও প্লাটফর্মে দেখা যাবে এই সিরিজ।
‘গেম অফ থ্রোনসের’ স্রষ্টা ডেভিড বেনিওফ এবং ডিবি ওয়েইসের পরবর্তী প্রকল্প হিসেবে ‘থ্রি বডি প্রব্লেম’ নিয়ে বেশ আলোচনা দেখা গিয়েছিল।
চীনা উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি থ্রি বডি প্রব্লেম-এর গল্প একদল বিজ্ঞানী বন্ধুদের নিয়ে। এটি এমন একটা সময়ের ছবি আঁকে যখন এই বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করছিলেন তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মহত্যার যে প্রবণতা দেখা দিয়েছে তার নেপথ্যে কী কারণ থাকতে পারে।
গল্পে চীনা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফ্ল্যাশব্যাক থেকে শুরু করে রহস্যময় ভার্চুয়াল রিয়ালিটি গেম-সহ একাধিক উপাদান রয়েছে।
এই গল্প মূলত মনোরঞ্জনমূলক হলেও তা সময়োপযোগী একটা প্রশ্নের ওপর আলোকপাত করে। আর সেই প্রশ্ন হলো–– যদি আমরা জানতে পারি যে মানব জাতি ধ্বংস হতে চলেছে (কিন্তু তা আগামী ৪০০ বছরে হবে না)- তাহলে আমরা কী করব?
নেটফ্লিক্সে দেখা যাবে থ্রি বডি প্রব্লেম।
বিবিসি বাংলা
Leave a Reply