শ্রী নিখিলনাথ রায়
ত্যাগ করিলেন। কাশীমবাজার পরিত্যাগসময়ে, তিনি অশ্রুপূর্ণলোচনে, কান্তবাবুর নিকট হইতে বিদায় গ্রহণ করিলেন এবং তাঁহাকে এক নিদর্শনপত্র দিয়া বলিলেন যে, ঈশ্বর যদি কখন দিন দেন, তাহা হইলে, তিনি যথাসাধ্য তাঁহার প্রত্যুপকার করিবেন। হেষ্টিংস এই অঙ্গীকার সর্ব্বতোভাবে পালন করিয়াছিলেন। চতুদিকে বিভীষিকার মধ্য হইতে যে উপকারী বন্ধু আপনার প্রাণকে তুচ্ছ জ্ঞান করিয়া, বিপদস্তূপ মস্তকে লইতে অগ্রসর হয়, যাহার হৃদয়ে কণামাত্র মনুষ্যরক্ত আছে, সে তাহার প্রত্যুপকার না করিয়াই থাকিতে পারে না।
কান্ত বাবু আশ্রয় না দিলে, হয় ত, হেষ্টিংস ধৃত হইয়া অশেষ কষ্ট ভোগ করিতে বাধ্য হইতেন; এমন কি, তাঁহার জীবননাশের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা ছিল। এজন্য তিনি কান্ত- বাবুর উপকার জীবনেও বিস্তৃত হইতে পারেন নাই। ক্রমে ক্রমে তাঁহার যেরূপ পদোন্নতি ঘটিয়াছে, তিনিও তদনুযায়ী কান্ত বাবুর উপকার করিয়া- ছেন। কান্ত বাবুর জন্য তিনি মস্তক পাতিয়া অম্লানবদনে কর্তৃপক্ষের তিরস্কার পর্যন্তও গ্রহণ করিয়াছেন, আমরা যথাস্থানে তাহাও দেখাইব।
পলাশীযুদ্ধের পর, যখন মীর জাফর ক্লাইবের সাহায্যে মুর্শিদাবাদের সিংহাসনে অধিরূঢ় হন, সেই সময় হইতে বাঙ্গলায় ইংরেজদিগের প্রাধান্য স্থাপিত হয়। মীর জাফর ও অন্যান্য নবাবগণ ইংরেজদিগের বিনা পরামর্শে কোন কার্য্য করিতে সমর্থ হইতেন না। এই সময়ে নবাব-দরবারের অবস্থা সম্যরূপে অবগত হইবার জন্য একজন করিয়া ইংরেজ রেসিডেন্টের মুর্শিদাবাদে থাকা আবশ্যক হয়।
পূর্ব্বে কাশীমবাজার কুঠার অধ্যক্ষ নবাব-দরবারে ইংরেজদের আর্জী পেশ করিতেন ও হুকুম আদি লইতেন। এক্ষণে তদ্বিপরীত অর্থাৎ নবাবকে কোন পরামর্শ ও তাঁহাকে কোন বিষয় হইতে নিরস্ত করিবার জন্য, মুর্শিদাবাদে সর্ব্বদা একজন রেসিডেন্ট থাকিতেন। মোরাদবাগ তাঁহার বাসস্থান নিদ্দিষ্ট হয়। প্রথমে স্কাফটন ‘সাহেব এই পদে নিযুক্ত হন। হেষ্টিংসের বিচক্ষণতায় সন্তুষ্ট হইয়া, পরে ক্রাইব ‘১৭৫৮ খৃঃ অব্দে তাঁহাকে উক্ত পদ প্রদান করেন।
Leave a Reply