বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৪৫)

  • Update Time : শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

হেষ্টিংস পূর্ব্ব হইতে কান্ত বাবুর উপকারের জন্য সচেষ্ট ছিলেন; কিন্তু সেরূপ উচ্চপদ না পাওয়ায়, সম্যরূপে কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই; এক্ষণে অপেক্ষাকৃত উচ্চপদ প্রাপ্ত হইয়া, তাহার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। ইহার পর ১৭৬১০ খৃঃ অব্দে তিনি কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত হন। এই সময় হইতে কোম্পানীর কর্মচারিগণ, নিজ নিজ ব্যবসায়ের পরিচালনা করিতেন। মীর জাফরের রাজত্ব হইতে তাহার সূচনা হয়। ১৭৬০ খৃঃ অব্দে মীর কাশেমের রাজ্যাভিষেক হইলে, ইহার আরও বিস্তার ঘটে। গবর্ণর হইতে কোম্পানীর সামান্য কর্মচারী পর্য্যন্ত আপন আপন ব্যবসায় চালাইতে প্রবৃত্ত হন।

এতদ্ভিন্ন বে-সরকারী ইংরেজগণও যথেষ্ট পরিমাণে ব্যবসায়বাণিজ্যে সুবিধা করিয়া লন। গবর্ণর ভান্সিটার্ট ও হেষ্টিংস প্রভৃতিও সুযোগ পরিত্যাগ করেন নাই। হেষ্টিংস এই সময় কান্ত বাবুকে আপনার মুৎসুদ্দী বা বেনিয়ান্ নিযুক্ত করেন; কান্ত বাবু ও তাঁহার ভ্রাতা নৃসিংহ হেষ্টিংসের ব্যবসায়ের পরিচালন করিতেন। কথিত আছে, হেষ্টিংস ও ভান্সিটার্ট এই সমস্ত ব্যবসায়নির্ব্বাহের অর্থ নবাব মীর কাশেমের নিকট হইতে লাভ করিয়াছিলেন।

যখন মীর কাশেমের নিকট তাঁহারা মুর্শিদাবাদের সিংহাসন বিক্রয় করেন, তখন তাঁহার নিকট উৎকোচস্বরূপ প্রচুর অর্থ প্রাপ্ত হন। যেরূপেই ‘হউক, তাঁহারা বাণিজ্য আরম্ভ করিয়া লাভবান হইতে থাকেন। ১৭৬৪ খৃঃ অব্দে হেষ্টিংস ইংলণ্ড যাত্রা করেন; তথায় তিনি স্বীয় আত্মীয়দিগের সাহায্যার্থে ভারতবর্ষ হইতে সঞ্চিত সমস্ত অর্থ ব্যয় করিয়া ফেলেন; এমন কি, তাঁহার নিজ ব্যবসায়ের অর্থ পর্যন্ত নিঃশেষ হইয়া যায়। তিনি অত্যন্ত বিপদে পতিত হইলেন। অবশেষে কান্ত বাবুকে ১২,০০০ টাকার: জন্য লিখিয়া পাঠাইতে বাধ্য হন। কান্ত বাবু যদিও তাঁহার মুৎসুদ্দী ছিলেন, তথাপি তাঁহার দ্বারা সে সময়ে প্রচুর অর্থাগম হইতে পারে নাই; কাজেই তিনি স্বীয় প্রভুকে ১২,০০০ টাকা দিতে সমর্থ হইলেন না।

অনন্তোপায় হইয়া, অবশেষে হেষ্টিংসকে খাজা পিক্রসের। নিফট হইতে সেই টাকা লইতে হয় এবং যখন তিনি দ্বিতীয়বার মান্দ্রাজে আগমন করেন, সেই সময়ে উক্ত অর্থ পরিশোধ করিয়াছিলেন। হেষ্টিংস জানি- তেন যে, কান্ত বাবু এরূপ ধনী ছিলেন না যে, তাঁহাকে সাহায্য করিতে পারেন; তজ্জন্ত নিজের বিপদের সময় কান্তবাবুর সাহায্য না পাইয়াও, তিনি তাঁহার উপর বিরক্ত হন নাই; তাহার পরও তাঁহাকে চিরদিনই -স্নেহের দৃষ্টিতে দেখিয়াছিলেন, এবং তাঁহার উন্নতির জন্য সাধ্যানুসারে চেষ্টা করিতে ত্রুটি করেন নাই।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024