শ্রী নিখিলনাথ রায়
এই সময়ে কান্ত বাবু কাশীমবাজার হইতে কলিকাতায় আসিয়া বাস করেন। প্রথমে তিনি বড়বাজারে একটি ক্ষুদ্র রাটীতে বাস করিতেন; পরে তথা হইতে ঘোড়াসাঁকোর বৃহৎ বাটীতে আসিয়া বাস করেন। যোড়া- সাঁকোর সে বাটী অদ্যাপি বিদ্যমান আছে; ঐ সকল মহাল ও জমিদারী হইতে তাঁহার প্রচুর ধনাগম হয়। কান্ত বাবুকে জমিদারী প্রভৃতি প্রদান করিবার জন্য হেষ্টিংস অনেক অসদুপায় অবলম্বন করিতে বাধ্য হন। তিনি প্রথমতঃ কর্তৃপক্ষগণের আদেশ অবহেলা করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এদেশের অনেক জমিদারের উপর ভীষণ অত্যাচার করিতে ত্রুটি করেন নাই।
গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ ও দেবীসিংহ প্রভৃতি কতকগুলি ভীষণ-প্রকৃতি লোকের সাহায্যে তিনি বাঙ্গলার জমিদার ও প্রজাবর্গের উপর নানা প্রকার অত্যাচার করিয়াছিলেন। এই দুই ব্যক্তির সাহায্যে হেষ্টিংস যাহাকে ইচ্ছা, তাহাকেই অনেক লাভকর জমিদারী প্রদান করিতেন সর্ব্বাপেক্ষা তাঁহার প্রিয় কান্ত বাবুই অধিক সুবিধা’ প্রাপ্ত হন। ১৭৭২ খৃঃ অব্দে রাজাসংক্রান্ত নিয়ম বিধিবদ্ধ হইলে, তাহার মধ্যে এইরূপ একটি বিধি থাকে যে, কোম্পানীর কর্মচারিগণের কোন পেস্কার, বেনিয়ান বা অনন্ত লোক, কিংবা তাহাদের কোন আত্মীয় কোন জমিদারী বা ফারম ইজারা লইতে পারিবে না; এইরূপ করিলে সেই কৰ্ম্মচারীকে পদচ্যুত হইতে হইবে।
এই নিয়ম বিধিবদ্ধ করিয়া কোম্পানীর কর্তৃপক্ষগণ এইরূপ মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, কোম্পানীর কর্মচারিগণ যদি ইজারা- দারদিগকে সাহায্য করেন, তাহা হইলে, কেহ তাঁহাদের সহিত প্রতি- স্বন্দ্বিতায় অগ্রসর হইবে না। কোম্পানী ইচ্ছা করেন না যে, তাঁহাদের স্বীয় কর্ম্মচারিগণের সহিত কোনরূপ বন্দোবস্ত হয়। কোম্পানীর কর্মচারীরা এইরূপ ইজারাদার হইলে, প্রজাগণ আপনাদিগের রক্ষার জার কাহাদের আশ্রয় গ্রহণ করিবে? সুতরাং তাঁহারা কোম্পানীর কৰ্ম্মচারীদিগকে ভূয়োভূয়ঃ এই বিধি-অনুসারে কার্য্য করিতে আদেশ করেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, গবর্ণর জেনারেলই তাহা লঙ্ঘন করিয়া, আপনার বেনিয়ানের অত্যন্ত সুবিধা করিয়া দেন এবং তজ্জন্য জমিদার ও প্রজাদিগের উপর যদিও অত্যাচার করিতে হইত, তাহাতেও তিনি পশ্চাৎপদ হইতেন না। নিয়মে স্পষ্টতঃ কলেক্টরগণ ও তাঁহাদের কর্ম্ম চারীরা নিষিদ্ধ হইয়াছিলেন বলিয়া, হেষ্টিংস চতুরতাপূর্ব্বক স্বীয় বেনি- রানের সুবিধার উপায় করিয়া দেন। এক সময়ে কান্ত বাবু তাঁহার বিশেষ উপকার করেন, এমন কি প্রাণরক্ষা করিয়াছিলেন বলিতে হইবে-সেই- জন্য, তিনি তাঁহার প্রত্যুপকার করিতে কৃতসঙ্কল্প হইয়াছিলেন।
Leave a Reply