শ্রী নিখিলনাথ রায়
কিন্তু দহাদিগের মত পরস্বাপহরণ করিয়া প্রত্যুপকারের এই উপায়, কদাচ ঝারমতে সমর্থন করিতে পারা যায় না। সদুপায়ে সেই প্রত্যুপকার করিলে, উপকর্তা ও উপকৃত উভয়েরই পুণ্যলাভ হয়, অরুণা ইহাতে উভয়েরই প্রত্যবাহ আছে। হেষ্টিংস বলপূর্ব্বক কান্ত বাবুকে যে সমস্ত জমিদারী প্রদান করেন, তন্মধ্যে বাহারবন্দ পরগণাই সর্ব্বপ্রধান। বাহারবন্দ রঙ্গপুর জেলার অন্তর্গত, এবং একটি বিস্তৃত ও আয়কর জমিদারী। বাহারবন্দ আজিও কাশীমবাজার রাজবংশের অধীন আছে এবং ইহা তাঁহাদের সর্ব্বা- পেক্ষা প্রধান ও লাভকর জমিদারী।
বাহারবন্দ পরগণা পূর্ব্বে রাণী সত্যবতীর জমিদারীর অন্তর্গত ছিল; তিনি ধর্মোপার্জন মানসে সংসার পরিত্যাগ করিয়া যৎকালে পুণ্যভূমি তীর্থরাণী কাশীতে গমন করেন, সেই সময়ে স্বীয় আত্মীয়া হিন্দুবিধবার উচ্চ আদর্শ, বঙ্গভূমির জ্বলন্ত গৌরব; মূর্তিমতী পবিত্রতা সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণারূপিণী রাণী ভবানীকে বাহারবন্দ পরগণা প্রদান করিয়া যান এবং সরকারকর্তৃক তাহা গ্রাহ্যও হইয়াছিল। রাণী সত্যবতীর সুকীর্ত্তি আজিও বাহারবন্দ অলঙ্কৃত করিতেছে। তাঁহার স্থাপিত দেবমন্দির আজিও তাঁহার ধর্মানুরাগের পরিচয় প্রদান করিতেছে।
ধৰ্ম্মপালন যাঁহার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, সেই ধর্মপালন আরও সুচারুরূপে নির্ব্বাহিত হইবে বলিয়া, তিনি রাণী ভবানীকে স্বীয় জমিদারী প্রদান করিয়াছিলেন। রাণী ভবানীর ধর্মনিষ্ঠা বঙ্গদেশে প্রবাদবাক্যের ন্যায় প্রচলিত। শুধু বঙ্গদেশে কেন ভারতের অনেকস্থানে তাঁহার গৌরব বিঘোষিত হইয়া থাকে। বঙ্গদেশের ইতিহাসে তাঁহার দেবভক্তি ব্রাহ্মণপ্রতিপালন দীনচঃখীর প্রতি কৃপার তুলনা আর দ্বিতীয় নাই। কতদূর প্রবল, তাহা সহজে অনুমিত হইতে পারে। তাঁহার স্বধর্ম্মানুরাগ যাঁহাকে বাঙ্গালীরা ছদ্মবেশধারিণী ভবানী বলিয়া জানে, তাঁহাকে ব্যতীত অন্য কাহাকে রাণী সত্যবতী স্বীয় উদ্দেশ্য পালনের জন্য নিজ সম্পত্তি প্রদান করিতে পারেন?
রাণী ভবানী স্বীয় আত্মীয়ার নিকট হইতে বাহারবন্দ পাইয়া সত্যবতীর উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য যথেষ্ট যত্ন করিয়াছিলেন। বাহারবন্দ পরগণা অত্যন্ত লাভকর দেখিয়া, হেষ্টিংসের মন বিচলিত হইল। তিনি স্বীয় প্রতিপাল্য কান্তবাবুকে কিরূপে তাহা প্রদান করিবেন, তদ্বিষয়ে চিন্তা করিতে লাগিলেন। অবশেষে স্থির হইল যে, রাণী ভবানী স্ত্রীলোক; তিনি এইরূপ জমিদারী শাসন করিতে অসমর্থা; অতএব তাঁহার। হস্তে বাহারবন্দ থাকা যুক্তিযুক্ত নহে।
Leave a Reply