শ্রী নিখিলনাথ রায়
যে রাণী ভবানী ৩২ বৎসর বয়সে বিধবা হইয়া দেড়কোটি টাকা রাজস্বের জমিদারী অবাধে এত দিন শাসন করিয়া আসিতেছিলেন, এক্ষণে তিনি সামান্জ ২।৩ লক্ষ টাকা আয়ের জমিদারী পরিচালনে অসমর্থা হইলেন! যিনি নবাবশ্রেষ্ঠ আলিবর্দীর সময়ে মহারাষ্ট্রীয়গণের ঘোর অত্যাচারের মধ্যেও অবিচলিত ভাবে আপনার রাজস্বসংগ্রহ করিয়া আসিয়াছেন; এক্ষণে তিনি অকর্মণ্যা বলিয়া বিবেচিত হইলেন। হেষ্টিংসের ন্যায় শত শত কেরাণী- গবর্ণর যাঁহার পদতলের নিকট বসিবার উপযুক্ত নহে, সেই কার্য্যদক্ষ বিচক্ষণ নবাবশ্রেষ্ঠ আলিবন্দীর সময়, যাঁহার হস্তে সর্ব্বাপেক্ষা অধিক রাজস্বসংগ্রহের ভার ছিল, আজ কি না তাঁহার প্রতি একটা অযথা দোষ অর্পণ করিয়া, তাঁহার হস্ত হইতে তাঁহার জমিদারী বিচ্ছিন্ন করিয়া লওয়া হইল।
অনুগত লোককে প্রতিপালন করিতে হয় বলিয়া, ন্যায়- ও ধর্ম্মের মস্তকে পদাঘাত করিতে হয়, ইহা কোন্ নীতির পরিচায়ক? দেশের শাসনকর্তা হইয়া, যিনি একের শুভোদ্দেশে অপরের সর্ব্বনাশ করিতে পারেন, তিনি, শাসনকর্তা নামের কিরূপ উপযুক্ত, সকলে তাহা অনুমান করিতে পারেন। আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িলেও’ কখন ন্যায়ের মর্য্যাদা লঙ্ঘন করা উচিত নহে। হেষ্টিংস যে দোষ দেখাইয়া রাণী ভবানীর হস্ত হইতে বাহারবন্দ কাড়িয়া লন, মণিবেগমের সময় সে বিচার যে কোথায় ছিল, তাহা বুঝিতে পারা যায় না।
নাবালগ নবাব মোবারক উদ্দৌলার অভিভাবক যদি মণিবেগম হইতে পারেন, তাহা হইলে রাণী ভবানী যে, একটি জমিদারীর রাজস্বসংগ্রহে অসমর্থা, এ কথা কে স্বীকার করিতে পারে? মণিবেগমের সময় যে আপত্তি উঠে নাই, এক্ষণে দেই আপত্তি করিয়া স্বীয় উদ্দেশ্য সমর্থন করা হইল। কাউন্সিলের সদস্য ফ্রান্সিস্ সাহেব রাণী ভবানীর পক্ষ হইয়া হেষ্টিংসকে এইরূপ জানাইয়া- ছিলেন যে, মণিবেগম যখন স্ত্রীলোক হইয়াও নবাবের অভিভাবক নিযুক্ত হইয়াছেন, তখন রাণী ভবানী কি জন্য করসংগ্রহ করিতে পাইবেন না? কিন্তু হেষ্টিংস তাঁহার কথায় কর্ণপাত করেন নাই।
হেষ্টিংস যাহা জেদ করিতেন, তাহা কার্য্যে পরিণত না করিয়া বিরত হইতেন না। কিন্তু তাঁহার এই যুক্তি পরে পরিবর্তিত ও বাহারবন্দ প্রদানের জন্য অন্য কৈফিয়ৎ সৃষ্ট হইয়াছিল। আমরা পরে তাহার উল্লেখ করিব। যাহা হউক, তিনি রাণী ভবানীর নিকট হইতে বলপূর্ব্বক বাহারবন্দ লইয়া প্রথমে ১১৮১ সাল ১৭৭৫ খৃঃ অব্দে কান্ত বাবুর পুত্র লোকনাথকে ইজারা দিলেন। পরে ১১৮৩ সালের (১৭৭৯ খৃঃ অঃ) ৩রা ভাদ্র ৮২,৬৩৯ টাকায় ঐ ইজারা চিরস্থায়ী করা হয়।
Leave a Reply