সন্ন্যাসী ঠাকুর
পরদিন সকালে শ্মশানে আসিয়া যথারীতি পূজা করিয়া বাহিরে আসিয়া বসিলাম। দেখিলাম আমারই বয়সের একটি বালক সন্ন্যাসীর বেশে শ্মশানের পথ দিয়া যাইতেছে। তাহাকে কাছে ডাকিয়া আনিয়া সমাদর করিয়া বসাইলাম। পূর্ব দিনের সেই চৌর্য-উপার্জিত আমগুলির কয়েকটি পাকিয়াছিল। তাহা আনিয়া আমার এই সন্ন্যাসী বন্ধুকে খাইতে দিলাম। আর তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “আচ্ছা ভাই!
তুমি এই অল্প বয়সে সন্ন্যাসী হইয়াছ কেন?” ছেলেটি বলিল, “বাড়িতে বসিয়া ধর্মকাজ করিতে আমার বাপ-মা আমাকে বেদম প্রহার করেন।” আমি আবার জিজ্ঞাসা করিলাম, “আচ্ছা ভাই! তোমাকে আর কে কে মারে?” ছেলেটি বলিল, “আমার বড় ভাই-ই আমাকে সবচাইতে বেশি মারেন।”
এ যে আমারই কাহিনী। আমি ছেলেটির প্রতি আরও আকৃষ্ট হইলাম। আমি বলিলাম, “ভাই! আমি যদি তোমার মতো সন্ন্যাসী হই, তুমি কি আমাকে সঙ্গে লইবে?”
ছেলেটি বলিল, “বেশ তো! আমরা দুই বন্ধুতে একসঙ্গে দেশে দেশে ঘুরিব।”
জিজ্ঞাসা করিলাম, “ভাই! তুমি এখন খাইবে কোথায়?” সে বলিল, “আমি সন্ন্যাসী মানুষ, যে দিবে তাহারই বাড়িতে আহার করিব।”
আমি বলিলাম, “এই পথ দিয়া বরাবর চলিয়া যাও। তিনখানা বাড়ি পার হইলেই আমার পিতা আনছার উদ্দীন মোল্লার বাড়ি। সেখানে যাইয়া অপেক্ষা কর। আমি অল্প সময়ের মধ্যেই ঘর-দোর পরিষ্কার করিয়া আসিতেছি।” রাজি হইয়া ছেলেটি আমার নির্দিষ্ট পথে রওয়ানা হইল।
তাড়াতাড়ি আমার কাজগুলি সারিয়া বাড়ি আসিলাম। আসিয়া দেখি আমার নির্দেশমতো ছেলেটি আমাদের বাড়ি আসে নাই। সমস্ত পাড়া তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিলাম, কোথাও তাহার দেখা পাইলাম না। কতজনকে তাহার কথা জিজ্ঞাসা করিলাম। কেহই তাহার কোনো সন্ধান দিতে পারিল না।
শহরে যাইয়া রানীদিদিকে সমস্ত ঘটনা বলিলাম। রানীদিদি বলিলেন, “ওই ছেলেটির রূপ ধরিয়াই মা কালী তোকে দেখা দিয়া গেলেন। আর তুই রাত্রে শ্মশানে থাকিস না। কি হয় বলা তো যায় না। তবে একথা নিশ্চয় জানিস, তোর সরল বিশ্বাসে মা কালী একদিন-না-একদিন তোকে দেখা দিবেনই।”
ইহার পর প্রতিদিন শ্মশানে আসিয়া পথের দিকে চাহিয়া থাকি। সেই ছেলেটি যদি আসে। এবার আসিলে দুই হাতে তার পা জড়াইয়া ধরিব। দিনের পর দিন যাইতে লাগিল; সেই ছেলেটি আর ফিরিয়া আসিল না।
চলবে…
Leave a Reply