সন্ন্যাসী ঠাকুর
সুতরাং সেই মিষ্টি খাইতে বসিলাম। নারকেলের পুর দেওয়া পুলিপিঠা, খাঁটি ঘিয়ের ভাজা সরপুরী, সন্দেশ, পানতোয়া। প্রথমে দু’একটা যখন মুখে দিলাম তাহারা যেন গলার ভিতরে কঠিন পদক্ষেপ করিয়া আমার অনুশোচনাকে আরও বাড়াইয়া তুলিল। কিন্তু সেই খাঁটি ঘিয়ের খাবার পুনরায় মুখে দিতেই স্বাদে সুগন্ধিতে মুহূর্তের মধ্যে আমার সমস্ত অনুশোচনা কোথায় উড়াইয়া দিল। আমার খাওয়া শেষ হইলে সন্ন্যাসী ঠাকুর জলধর-দাদাকে বলিলেন, “আমার শরীরটা আজ ভালো নাই। কিছুই খাইব না। ওই ছেলেটি আজ সারাদিন খায় নাই। তাই ফাঁকি দিয়া ওকে খাবারগুলি খাওয়াইলাম।”
পরদিন রানীদিদির সঙ্গে দেখা করিয়া বলিলাম, “দিদি। সন্ন্যাসী ঠাকুর কেমন ফাঁকি দিয়া খাবারগুলি আমাকে দিয়া খাওয়াইয়াছেন। আপনি নাজানি কি মনে করিয়াছেন।”
অতি স্নেহের হাসি হাসিয়া রানীদিদি বলিলেন, “তুমি যে আমার ভাই। তুমি আমার তৈরি মিষ্টিগুলি খাইয়াছ এজন্য আমি কম-খুশি হই নাই।”
দিদির এই আন্তরিকতাপূর্ণ উত্তর শুনিয়া আমার মন হইতে সমস্ত গ্লানি চলিয়া গেল।
সন্ন্যাসী ঠাকুর এখানে থাকিতে প্রায়ই আমি তাঁহার থালা-বাটি মাজিয়া দিতে নদীর ঘাটে যাইতাম। সেই ঘাটে বারবনিতারা স্নান করিতে আসিত। একদিনের ঘটনা মনে পড়িতেছে। কয়েকটি মেয়ে তাহাদের ঘরের পুরুষদের বিষয়ে আলোচনা করিতেছিল। সেই আলোচনা কখনও কখনও শ্লীলতাকে অতিক্রম করিতেছিল। তাহা শুনিয়া আমার খুব খারাপ লাগিতেছিল। কিন্তু থালা বাটিগুলি মাজিতে কিছু সময় লাগিবে। সেগুলি ফেলিয়াও যাইতে পারি না। তাই অতি বিনীতভাবে বলিলাম, “মা জননীরা! আমি ছোট ছেলে। আমার সামনে আপনারা এমন আলোচনা করিবেন না।”
একটি মেয়ে আমার কথা শুনিয়া বলিল, “আরে ছোকরা! আমাদের আলোচনা আজ তোমার ভালো লাগিতেছে না। এমন একদিন আসিবে, যখন মেয়েদের আঁচলের বাতাস পাইবার জন্য পাগল হইয়া তাহাদের পাছে পাছে ঘুরিবে।” সেই মেয়েটির ভবিষ্যদ্বাণী কি আমার জীবনে প্রতিফলিত হইয়াছিল? হয়তো সকল পুরুষের জীবনেই তাহা প্রতিফলিত হইয়া থাকে।
সুহৃদদার বাড়ির নিকটের আস্তানা গোটাইয়া পরে সন্ন্যাসী ঠাকুর জলধরদার বাড়ির নিকটে আসেন। সেখান হইতে নানা জায়গা ঘুরিয়া তিনি কুমারখালির নদীর ধারে কালীবাড়িতে যাইয়া আশ্রয় লন।
চলবে…
Leave a Reply