শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-১১০)

  • Update Time : সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১.০০ এএম

সন্ন্যাসী ঠাকুর

সাধু না হইয়া কবি হইলে, এই বা মন্দ কি!” তারপর তিনি তাঁহার কাগজপত্র খুঁজিয়া তাঁহার রচিত কয়েকটি গান আমাকে শুনাইলেন। সেই গানগুলি রামপ্রসাদী গানের মতো বাৎসল্যরসে আপ্লুত নয়। কালীমাতা তাঁহার নিকটে নায়িকা। গানগুলি আমার খুব ভালো লাগিল। কয়েকটি গানে দুঃখজয়ের আকুতি ছিল:

যত দুঃখ পাইলাম সেই দুঃখের তীর দিয়াই জগতের শাশ্বত কালের দুঃখকে জয় করিব। মা কালী! তোর গলার মুণ্ডমালা খুলিয়া ফেল আমি দুঃখের মালা পরাইয়া দেখিব তোকে কেমন দেখায়।

দুই-তিনদিন সন্ন্যাসী ঠাকুরের আশ্রমে কাটাইয়া ফিরিয়া আসিলাম। বিদায়ের দিন তিনি বলিলেন, “আমার খবর লইও। যদি বাঁচিয়া না থাকি আমার কথা মনে রাখিও।”

ইহার পরে আর সন্ন্যাসী ঠাকুরের সঙ্গে দেখা হয় নাই। তিনি আমাকে তাঁর খবর লইতে বলিয়াছিলেন। সেই খবরও আমি লইতে পারি নাই। সন্ন্যাসী ঠাকুর কিছুদিন পরে ফরিদপুর জেলার বাহিরবাগ নামক স্থানে চলিয়া যান। সেখানে যাইতে হইলে প্রায় তিরিশ মাইল পথ হাঁটিয়া যাইতে হয়।

একবার খবর পাইলাম সন্ন্যাসী ঠাকুর দেহত্যাগ করিয়াছেন। আমার বালক-কালের এত

বড় সহানুধ্যায়ীর এইভাবে জীবন-নাট্যের অবসান হইল। কৃতান্ত দিদির মুখে শুনিয়াছি শেষজীবনে তিনি বড়ই অসুস্থ হইয়া পড়িয়াছিলেন। একদিন তিনি দিদিকে বলিলেন, “আজ আমার যাইবার সময় হইয়াছে। শীঘ্র আমাকে আসন করিয়া বসাইয়া দাও।” কৃতান্ত দিদি দুই-তিনটি বালিশ পেছনে দিয়া সন্ন্যাসী ঠাকুরকে বসাইয়া দিলেন। “তিনি আসনে বসিয়া নানারকম যোগ-সাধনা করিতে লাগিলেন। তাঁহার দেহ মাঝে মাঝে শূন্য হইয়া উপরে উঠিতেছিল। তারপর তিনি মাটিতে নামিয়া আসিয়া কি যেন মন্ত্র পাঠ করিলেন। তারপর চিরনীরব হইয়া গেলেন। মাথায় হাত দিয়া দেখিলাম ব্রহ্মরন্ধ্র ফাটা। গ্রামের সব লোক ডাকিয়া আনিয়া বাবাকে সেইখানে সমাধিস্থ করিলাম।”

এই কাহিনীর কতকটা সত্য আর কতকটা ভক্ত-হৃদয়ের কল্পনায় মিশিয়া আছে।

কৃতান্ত দিদি বাঁচিয়া থাকিতে মাঝে মাঝে আমাকে দেখিতে আমাদের বাড়িতে আসিতেন। যেবারই আসিয়াছেন আমি তাঁহাকে পাথেয় বাবদ যৎকিঞ্চিৎ সাহায্য করিয়াছি। ভাইবোনে বসিয়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা সন্ন্যাসী ঠাকুরের জীবন-কাহিনী লইয়া আলোচনা করিয়াছি। সেবার শুনিলাম, কৃতান্ত দিদিও দেহত্যাগ করিয়াছেন।

চলবে…

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024