ম্যাকসিম গোর্কী
একটি চিঠি
“ও! কী আনন্দ! আপনিও আমাদেরই একজন! অবশেষে ভগবানের কৃপায়, আমি আমার স্বদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানের মুখোমুখি দাঁড়াবার সুযোগ পেয়েছি। চিরকালের জন্যে আপনি আমাদের কাছে সুস্বাগত। আমি আপনাকে প্রণাম করি।”
এই হোলো মস্কাও রাশিয়ানদের নমুনা। সাদাসিদে ভালো মানুষ। এছাড়া আরেক ধরণেরও আছে, তাদের আবার একটু “স্বাধীন-চিন্তা- চিন্তা-ভাব”।
“লিও নিকোলাইয়েভিচ, যদিও আপনার ধর্ম দর্শন সংক্রান্ত মতবাদের সংগে আমি একমত নই, তবু আপনার মধ্যে যে মহাশিল্পীর প্রকাশ ঘটেছে, তার কাছে আমি সসম্ভ্রমে মাথা নত করি।”
তারপর অকস্মাৎ টলস্টয়ের চাষাড়ে দাড়ী আর ভাঁজপড়া ঝুলওয়ালা গণতান্ত্রিক ব্লাউসের মধ্যে জেগে উঠতো সেই প্রাচীন রাশিয়ান ‘বারিন’, সমুদ্ধত অভিজাত পুরুষ। তখন তাঁর শিক্ষিত অশিক্ষিত ভালো মানুষ অভ্যাগতদের নাকগুলো মুহূর্তে হয়ে যেত নীল আর অসহ্য ঠাণ্ডা। সত্যি এই নির্ভেজাল অভিজাত রক্তে গড়া এই মানুষটিকে দেখতে খুব ভালো লাগতো, ভালো লাগতো লক্ষ্য করতে তাঁর অংগ প্রত্যংগের -অভিব্যক্তি, তাঁর গর্বিত সংযত ভাষার বিন্যাস। শুনতে ভালো লাগতো তাঁর সু-উচ্চারিত কথাগুলির সুন্দর সূচিমুখিতা।
এই গোলামদের জন্যে যতোখানি প্রয়োজন, ‘বারিনে’র ততোখানি মাত্রই তিনি দেখাতেন। তারা যখন টলস্টয়ের মধ্যেকার ‘বারিন’কে বাইরে আসার জন্যে ডাকতো, তখন ‘বারিন’ অতি সহজে স্বাভাবিক ভাবেই আসতো বাইরে এবং তাদের এমনভাবে পিষে দিতো যে তারা কুঁকড়ে কেঁউ কেঁউ ক’রে ভয়ে পালাতো।
একদিন আমি এমনি একটি “ভালো মানুষ’ রাশিয়ানের সংগে ইয়াসনাইয়া পলিয়ানা থেকে মস্কাও ফিরছিলাম। লোকটির বাড়ী মঙ্কাও। অনেকক্ষণ ধ’রে লোকটি কথা বলার মতোও যেন দম পেলো না, করুণভাবে খানিকক্ষণ মৃদু হাসলো, তারপর সবিস্ময়ে বললো, “উঃ! এ যেন একেবারে ঠাণ্ডা স্নান করিয়ে দিলেন,… অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠলেন।… উঃ।”
Leave a Reply