ম্যাকসিম গোর্কী
একটি চিঠি
“ভাষাটাকে তিনি জানতেন আশ্চর্য রকম ভালো ক’রে; এমন কি মারপ্যাঁচগুলোও। অদ্ভুত যে তাঁকে তোমার ভালো লাগে; কারণ, যে কোনো কারণেই হোক, তুমি রাশিয়ান নও। তোমার চিন্তাগুলোও ঠিক রাশিয়ান নয়। তাই না? আমার কথায় রাগ করলে নাকি? আমি বুড়ো মানুষ; সম্ভবত আধুনিক সাহিত্য আমি আর বুঝি না। কিন্তু আমার মনে হয়, ওটা রাশিয়ান নয়।
তারা এক অদ্ভুত রকমের কবিতা লিখতে সুরু করেছে। আমি বুঝি না এই কবিতাগুলো কি, আর এদের অর্থই বাকী। কবিতা লেখা শিখতে হ’লে শেখা উচিত পুশ কিন থেকে, তিউচেন্ড থেকে, ফেট থেকে। তবে তুমি”- তিনি শেখভের দিকে ফিরে বললেন-“তুমি রাশিয়ান, সত্যিকারের রাশিয়ান।”
তিনি সস্নেহে মৃদু হেসে তাঁর একখানি হাত শেখভের কাঁধের ওপর রাখলেন; অস্বস্তি বোধ করলেন শেখভ। তিনি তাঁর বাংলো এবং তাতারদের সম্পর্কে অস্ফুট জড়িত গলায় কি যেন বলতে লাগলেন।
টলস্টয় শেখভকে ভালোবাসতেন; তিনি যখন শেখভের পানে তাকাতেন, তখন তাঁর চোখদুটি কোমল হ’য়ে উঠতো, মনে হোতো যেন প্রায় আঘাত করছে, আন্টন পালোভিচের মুখে।
একবার আন্টন পান্ডুলোভিচ ময়দানে আলেকজান্দ্রা লওভ নার সংগে বেড়াচ্ছিলেন; টলস্টয় তখনো অসুস্থ, চত্বরে বসেছিলেন একটা চেয়ারে; মনে হোলো তিনি যেন ওঁদের পানে ঝুঁকে পড়লেন, তারপর চুপি চুপি বললেন: “কী সুন্দর সমুন্নত একটি মানুষ: অথচ বালিকার মতো শান্ত, বিনত! চলার ভংগীটুকুও বালিকার মতো। অপূর্ব! অপূর্ব!”
একদিন সন্ধ্যায়, গোধুলিতে, তিনি তাঁর চোখদুটিকে অর্ধ নিমীলিত ক’রে, ভ্রূ দুটিকে নাড়তে নাড়তে তাঁর রচিত “ফাদার সার্জিয়াস”-এর একটি দৃশ্য প’ড়ে শোনালেন-যেখানে মেয়েরা এক মুনিকে ভোলাতে এসেছে সেইখানটা। শেষ পর্যন্ত সবটুকুই প’ড়ে গেলেন, তারপর মাথা তুলে চোখ মুদে বেশ স্পষ্ট গলাতেই বললেন: “বুড়োটা লিখেছে বেশ, লিখেছে বেশ।”
Leave a Reply