আর্কাদি গাইদার
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
তিষ্কা কিনকে বিদায় জানাতে ওদের কবরখানার বাসায় গেলুম। বাবার সঙ্গে ও চলে যাচ্ছিল ওর কাকার কাছে ইউক্রেনে। জিতোমিরের কাছাকাছি কোনো জায়গায় ওর কাকার একটা ছোট্ট খামার ছিল।
গিয়ে দেখি ওদের জিনিসপত্র বাঁধাছাঁদা হয়ে গেছে। তিমুঙ্কার বাবা গেছেন ঘোড়ার গাড়ি জোগাড় করতে। তিষ্কাকে বেশ খুশিই মনে হল। ও স্থির হয়ে এক জায়গায় বসতে পারছিল না, খালি এঘর-ওঘর দৌড়োদৌড়ি করছিল, যেন যে-বাসায় ও জন্ম থেকে এত বড়টি হয়ে উঠেছিল সেখানকার চারি দিক একবার শেষ দেখা দেখে নিতে চাইছিল।
কিন্তু আমার কেমন সন্দেহ হল, তিমুক্কা সত্যিসত্যিই খুশি নয়, বরং ও প্রাণপণে চোখের জল লুকোতে চেষ্টা করছে। ওর পাখিদের ও ছেড়ে দিয়েছে দেখলুম।
‘ওরা সব… উড়ে পালিয়েছে,’ তিষ্কা বলল। ‘রবিনপাখিটা, মন্দা টিটুগুলো, গোল্ডফিঞ্চগুলো, সিকিনটা। সব পালিয়েছে। বুঝলি বরিস, সিঙ্কিন পাখিটাকে আমি সবচে’ ভালোবাসতুম। খু-উ-ব পোষ মেনে গিয়েছিল। খাঁচার দরজা খুলে দিতে ও কিছুতে বাইরে আসতে চাইছিল না। তখন ছোট একটা কঞ্চি দিয়ে খুঁচিয়ে বের করে দিলুম। শেষপরে পাখিটা উড়ে গিয়ে একটা পপুলারের ডালে বসে গান গাইতে লাগল আহ, সে গান যদি শুনতিস-না! আরেকটা ডালে খাঁচাটা ঝুলিয়ে রেখে আমি গাছটার নিচে গিয়ে বসলুম। বসে-বসে এখানে আমাদের দিনগুলোর কথা ভাবছিলুম।
ভাবছিলুম এই সব পাখি, ওই কবরখানা আর আমাদের ইশকুলের কথা। আর এখন সব শেষ হয়ে গেল, আমাদের চলে যেতে হচ্ছে, এইসব। অনেকক্ষণ এইভাবে বসে-বসে ভাবার পর উঠে খাঁচাট। ডাল থেকে পাড়তে গেলুম। আর তুই বললে বিশ্বাস করবি না, বরিস, দেখি কাঁ, সিকিনটা ফের খাঁচাটার উপর চুপচাপ বসে আছে। কখন এসে আবার নেমেছে কে জানে, কিছুতে পালাতে চাইছে না। আর হঠাৎ সবকিছুর জন্যে মনটা এত খারাপ হয়ে গেল। আমার আমার প্রায় কান্না পেয়ে গিয়েছিল, জানিস রে।’
অসম্ভব বিচলিত হয়ে পড়ে বললুম, ‘যাঃ, বাজে কথা বলছিস তিকা। তুই নিশ্চয়ই কে’দেছিলি।’
Leave a Reply