আর্কাদি গাইদার
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
‘এই! বরিস! এই যে, আমরা এখানে!’
‘কী রে, কেমন? জায়গাটায়গা পেয়েছিস?’
‘মন্দ-না। বাবা বসেছে আমাদের মালপত্রের ওপর, তার ওপরের বাঙ্কে একজন মাল্লা তার পাশে একটু জায়গা দিয়েছে আমায়। বলেছে, ‘বেশি নড়াচড়া করবি না, তাহলে তাড়িয়ে দেব’।’
দ্বিতীয় ঘণ্টা পড়ার পর হৈচৈ আরও বেড়ে গিয়ে রীতিমতো হল্লায় পরিণত হল।
প্রাণ খুলে দিব্যি গালার সঙ্গে ফরাসী ভাষায় কথা, সেন্টের সুগন্ধের সঙ্গে ঘামের গন্ধ, অ্যাকর্ডিয়ন-বাজনার সঙ্গে কান্নার শব্দ মিলেমিশে সে এক বিতিকিচ্ছি ব্যাপার। হঠাৎ সবকিছু ডুবিয়ে ট্রেনের বিকট বাঁশি শোনা গেল।
‘বিদায়, তিঙ্কা!’
‘বিদায়, বরিস!’ জানলা দিয়ে ঝুঁকে পড়ে গোছা গোছা চুল উড়িয়ে ও হাত নাড়তে লাগল।
নানা ধরনের, রকমারি কয়েক শো লোক নিয়ে ট্রেন চলে গেল। তবু স্টেশনে লোকের ভিড় কিছু কমেছে বলে মনে হল না।
‘উহ, দেখলে কান্ডটা!’ পাশে একজনের গলা শুনলুম। ‘সকলেই চলেছে দক্ষিণে।
রোন্তভে, দোনে। উত্তর দিকে যত ট্রেন যাচ্ছে তাতে থাকছে সৈন্য আর চাকুরেরা, আর দক্ষিণের ট্রেন বোঝাই হয়ে যাচ্ছে যতসব ভন্দরলোক, বাবুমশায়রা।’
‘কোথায় যাচ্ছে সব কও দেখি স্বাস্থ্যনিবাসে, নাকি?’
বিদ্রূপের সুরে জবাব শোনা গেল, ‘তা বলেচ বটে কথা একখান। জবুথবুরোগ সারানোর জন্যি, বলতি পার। ভয়ে ওরা আজকাল এক্কেবারে আধমরা হয়ে আচে, ওই যে তোমাদের বাবুমশায়রা গো।’
Leave a Reply