আর্কাদি গাইদার
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
স্টেশনের বাইরের গেটের দিকে এগিয়ে চললুম আমি, গাদা-গাদা বাক্স, ট্রাঙ্ক আর বস্তার পাশ কাটিয়ে। দেখতে-দেখতে চললুম, কেউ বা চা খাচ্ছে, বিচি চিবুচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের কেউ, নয়তো কেউ ঘুমোচ্ছে, হাসছে কিংবা ঝগড়া করছে।
হঠাৎ দেখি কোথেকে উদয় হয়েছে খোঁড়া খবরকাগজওয়ালা সেমিওনের। প্ল্যাটফর্মের ওপর দিয়ে কাঠের পা চালিয়ে আশ্চর্য তাড়াতাড়ি হাঁটছে আর তীক্ষত্র কর্কশ গলায় হাঁকছে:
‘সন্ধের সংখ্যা! সন্ধের সংখ্যা! ‘রুস্কোয়ে স্লোভো’! পড়ুন, বলশেভিক শোভাযাত্রার চমকপ্রদ বিবরণ! সরকারের হাতে শোভাযাত্রা ছত্রভঙ্গ! বহু লোক হতাহত। বলশেভিক চাঁই লেনিনকে ধরার বৃথা চেষ্টা!’
কাগজগুলো, বলতে গেলে, লোকে প্রায় ছিনিয়ে নিল। ভাঙানির পয়সা ফেরত চাইল না কেউ।
বাড়ি ফেরার পথে বড় রাস্তা ছেড়ে অল্প একটু ডানদিকে বে’কে পাকা রাই- খেতের মধ্যে দিয়ে একটা সরু পায়ে-চলা পথ ধরলুম। নালায় নামতেই দেখি কে একজন উলটো দিকের উৎরাই বেয়ে নেমে আমার দিকেই আসছে। লোকটির পিঠে একটা বড় বোঝা, বোঝার ভারে নুয়ে পড়েছে দেহটা। কাছে আসতে লোকটিকে আমাদের দাঁড়কাক বলে চিনতে অসুবিধে হল না।
উনি ডেকে বললেন, ‘বরিস? এখানে কী করছ? স্টেশন থেকে আসছ নাকি?’ ‘হ্যাঁ। আপনি কোথায় যাচ্ছেন? ট্রেন ধরতে নিশ্চয়ই? ট্রেন ধরার থাকলে আপনি
কিন্তু দেরি করে ফেলেছেন, সেমিওন ইভানোভিচ। ট্রেন এইমাত্র চলে গেল।’ দাঁড়কাক থামলেন। তারপর পিঠের ভারি বোঝাটা মাটিতে ফেলে ঘাসের ওপর বসলেন।
‘ধুত্তেরি,’ মহা বিরক্তির সঙ্গে পা দিয়ে বোঁচকাটার গায়ে একটা খোঁচা মেরে বললেন, ‘এখন এটাকে নিয়ে কী করি?’
বললুম, ‘কী ওটা?’
‘বেশির ভাগই সাহিত্য, কাগজপত্র। তাছাড়া আরও কিছু আছে…’
‘তাহলে আসুন আমরা দু-জনে মিলে ওটা বয়ে নিয়ে যাই। আজ রাত্রে ওটা তো ক্লাবে থাক, কাল সকালে বরং দেখা যাবে’খন।’
Leave a Reply