আর্কাদি গাইদার
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
মাখোরকা তামাকের সেই চিরাচরিত টুকরো-জড়ানো কালো দাড়ি বারকয়েক নাড়লেন দাঁড়কাক।
‘সেইখানেই মুশকিল হয়েছে, ইয়ার। ক্লাবে তো এটা রাখা যাচ্ছে না কিনা। আমাদের ক্লাবের দফা রফা। ক্লাব আর নেই।’
‘সে কি?’ আমি প্রায় লাফিয়ে উঠলুম। ‘কেউ আগুন লাগিয়ে দিল, নাকি? স্টেশনে আসার পথে আজ সকালেও তো ক্লাব ঠিক আছে দেখলুম।’
‘না, কেউ আগুন দেয় নি, খালি বন্ধ করে দিয়েছে, ইয়ার। ভাগ্যিস, কিছু কিছু লোক সময় থাকতে আমাদের সাবধান করেছিল। ক্লাবে এখন খানাতল্লাসি চলছে।’
আমি হতবুদ্ধি হয়ে গেলুম, ‘কিন্তু, সেমিওন ইভানোভিচ, ক্লাবটা বন্ধ করে দেয় কী করে? এখন তো আর পুরনো রাজত্ব নেই। আমরা এখন স্বাধীন। ‘এস- আর’দের ক্লাব চলছে, মেনশেভিকদের, কাদেতদেরও ক্লাব চালু, আর নৈরাজ্যবাদীরা তো সব সময়ে মাতাল হয়েই আছে, এমন কি ওদের জানলাগুলো পর্যন্ত বোর্ড লাগিয়ে বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছে। তবু কেউ তো ওদের গায়ে হাত দেয় না। আর আমরা তো চুপচাপ থাকি, তবু যত দোষ কি আমাদের? হঠাৎ ওরা এইভাবে আমাদের ক্লাব বন্ধ করে দিল যে!’
‘স্বাধীন! স্বাধীনতা! হাঃ!’ দাঁড়কাক হাসলেন। ‘কারো জন্যে স্বাধীনতা, আর কারো জন্যে ঘোড়ার ডিম। কিন্তু আমি এখন এই বোঝাটা নিয়ে করি কী, বল তো? কাল পর্যন্ত এটা কোথাও লুকিয়ে রাখা দরকার। আমি এটা এখন শহরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারি না, তাহলে পুলিশ এটা হাতিয়ে নেবে।’
‘তাহলে ওটা কোথাও লুকিয়ে রাখা যাক, সেমিওন ইভানোভিচ! কাছেই একটা জায়গা আমার জানা আছে। এই নালা ধরে আরেকটু এগিয়ে গেলে একটা পুকুর পড়বে, তার এক পাশে একটা খোলা গর্তের মতো জায়গা আছে। একসময় ইট
তৈরির জন্যে ওখান থেকে মাটি কাটা হত। ওই গড়খাইয়ের দেয়ালে অনেক ছোট বড় গর্ত আছে। তার মধ্যে ঘোড়াসুদ্ধ আন্ত একটা গাড়ি পর্যন্ত লুকিয়ে রাখা যায়, বোঁচকা-বঁাঁচকি তো কোন ছার। তবে শুনেছি ওখানে নাকি সাপ আছে। আমার তো খালি পা, কিন্তু আপনার পায়ে বুটজুতো আছে। কাজেই ঠিক আছে। আর তাছাড়া আপনাকে কামড়ালেই বা কী আপনি তো আর মরবেন না, একটু নেশা হবে এই যা।’
Leave a Reply