সারাক্ষণ ডেস্ক
২০২৪ সাল এশিয়ার জন্য একটি ঘটনাবহুল বছর ছিল। এই বছরে অঞ্চলটির বেশিরভাগ গণতন্ত্র নতুন নেতা বা প্রতিনিধিদের নির্বাচনের জন্য ভোট দিয়েছিল। কিছু ভাগ্যঘাতী ভুলের কারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল এবং ভিয়েতনামের ভো ভান থুং ক্ষমতা হারান, অন্যদিকে সিঙ্গাপুরে লি সিয়েন লুং নিজেই পদত্যাগ করেন।
এশিয়ার একটি প্রভাবশালী মিডয়িার পাঠকদের বেশিরভাগ পূর্বাভাস ২০২৪ সালের জন্য বাস্তবায়িত হয়েছিল। জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়ানো শুরু করে, চীনের অর্থনীতি আরও মন্থর হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হন, থাইল্যান্ড সমলিঙ্গ বিয়ে বৈধ করে, নিক্কেই স্টক সূচক নতুন উচ্চতায় পৌঁছায় এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মিয়ানমারের সামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকে – যদিও তাদের প্রভাব কিছুটা দুর্বল হয়।
তবে উত্তর কোরিয়া একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করলেও পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। চীনা গাড়ি প্রস্তুতকারী বিওয়াইডি অনেক বাজারে আধিপত্য বিস্তার করলেও, তারা তাদের বৈদ্যুতিক যাত্রীবাহী গাড়ি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনেনি। যদিও ওপেনএআই তাদের জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতি অব্যাহত রেখেছে, চ্যাটজিপিটি গুগল এবং অন্যান্য আমেরিকান প্রতিযোগী এবং চীনের নতুন উদ্ভাবনগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। তবে চীনা চিপ প্রস্তুতকারীরা এখনও ৫-ন্যানোমিটার প্রযুক্তির চিপ উৎপাদন শুরু করতে পারেনি।
সম্প্রতি, সেই মিডিয়াার প্রায় ৮৫০ জন পাঠক আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২০২৫ সালে এশিয়ার বাজার, বাণিজ্য, কূটনীতি এবং ব্যবসার সম্ভাবনা সম্পর্কে তাদের মতামত শেয়ার করেছেন। স্পষ্টতই, বিশেষত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিরে আসার ফলে, এশিয়া নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগের সম্মুখীন হতে চলেছে।
চীনের শেয়ারবাজার ২০২৪ সালে তিন বছরের পতনের ধারার অবসান ঘটায়, বিশেষ করে সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং বেইজিংয়ের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের অর্থনীতি চাঙা রাখার সংকেত দেওয়ার পর। তবে এই উত্থান বেশিদিন স্থায়ী হয়নি, কারণ বিনিয়োগকারীরা সরকারের কার্যকর অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অপেক্ষায় ছিলেন। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে সরকারের বার্ষিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা উন্মোচনের সময় আরও বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশিত হওয়ার আশা করা হচ্ছে। তবে বাজারে অস্থিরতা অব্যাহত থাকতে পারে।
পাঠকরা চীনের শেয়ারবাজারে দ্বিতীয় বছরের লাভ সম্পর্কে প্রায় সমানভাবে বিভক্ত। কিছু বাজার কৌশলবিদ আরও আশাবাদী। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের উত্তর এশিয়ার প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রেমন্ড চেং আশা করছেন যে চীনের বেঞ্চমার্ক সিএসআই ৩০০ সূচক, যা বছরের শেষে ৩,৯৩৪.৯১ পয়েন্টে ছিল, ২০২৫ সালে ৪,৩০০ পয়েন্টে পৌঁছাবে। গোল্ডম্যান স্যাকস আরও আশাবাদী, তাদের লক্ষ্যমাত্রা ৪,৬০০ পয়েন্ট।
চীনা বাজার প্রায়ই অর্থনীতির চেয়ে ভিন্ন গতিতে চলে, তবে শেয়ারবাজারের লাভের সম্ভাবনা চীনা ভোক্তারা নতুন প্রবৃদ্ধির শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হন কিনা তার উপর নির্ভর করবে।
এশিয়ার মুদ্রাগুলি ২০২৪ সালে মার্কিন ডলারের তুলনায় মূল্য হারিয়েছিল। অনেক অর্থনীতিবিদ আশা করছেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে আমেরিকান মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। ট্রাম্প আমদানির ওপর শুল্ক বাড়ানো, অভিবাসীদের বহিষ্কার এবং কর কমানোর পরিকল্পনা করেছেন। ফলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার ইঙ্গিত মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তকে সীমিত করবে, যা ডলারের মূল্য বাড়িয়ে তুলবে।
বিওয়াইডি এবং টেসলার মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিশ্বনেতা হওয়ার প্রতিযোগিতা ২০২৩ সাল থেকেই চলেছে। ২০২৪ সালে বিওয়াইডি ১.৭৬ মিলিয়ন বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি করেছিল, যা টেসলার ১.৭৯ মিলিয়ন গাড়ির থেকে সামান্য কম। তবে বিওয়াইডি হাইব্রিড গাড়ির বাজারে আরও বড় ভূমিকা পালন করেছিল। চীনের বাজার এবং রপ্তানি বাজার উভয় ক্ষেত্রেই তারা তাদের অফার পুনর্গঠন করেছিল। ২০২৪ সালের শেষে, তারা ২.৪৯ মিলিয়ন হাইব্রিড গাড়ি বিক্রি করে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা মাত্র তিন মাস ক্ষমতায় থাকলেও অনেক পর্যবেক্ষকের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় টিকে গেছেন। তিনি সেপ্টেম্বরে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরপরই সাধারণ নির্বাচন ডাকার সিদ্ধান্ত নেন, যা তার দলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। তবে বিরোধী দলগুলোর বিভক্তির কারণে তিনি এখনও ক্ষমতায় টিকে আছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। তার দ্বিতীয় মেয়াদে ৬০% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা চীনের রপ্তানির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তবে ট্রাম্প তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছুটা ধীরগতির হতে পারেন। তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ওয়াশিংটনে তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো দেশের রাজধানী স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনায় কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছেন। ২০২৪ সালে নতুন রাজধানী নুসানতারায় প্রথম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন এবং প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে নতুন রাজধানীর পুরোপুরি কার্যকর হতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে।
Leave a Reply