বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩২ অপরাহ্ন

চিতা বাঘের মতো দেখতে আইবেরীয় লিংক্সে প্রজাতিকে যেভাবে রক্ষা করা হচ্ছে

  • Update Time : সোমবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ৬.৪৫ পিএম

আন্তোনিও ফার্নান্দেস

নাভারো নামে এক পুরুষ লিংক্স – চিতাবাঘের মতো ফোটা দাগওয়ালা – প্রজনন মৌসুমে ডাকেআর হাঁটতে হাঁটতে ক্যামেরা ট্র্যাপের দিকে এগিয়ে আসে।
প্রায় ১০০ সেমি দৈর্ঘ্য ও ৪৫ সেমি উচ্চতার এই আইবেরীয় লিংক্সকে প্রকৃতিতে দেখা বেশ দুর্লভ ছিল। কিন্তু এখন স্পেন ও পর্তুগালের বিভিন্ন অঞ্চলে দুই হাজারেরও বেশি লিংক্স বিচরণ করছেযা বিশ বছর আগের তুলনায় দেখার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

আইবেরীয় লিংক্স একসময় বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে ছিল,” বলছেন রোদ্রিগো সেরাযিনি স্পেন ও পর্তুগালজুড়ে লিংক্সের প্রজনন কর্মসূচি পরিচালনা করেন।
সবচেয়ে খারাপ সময়ে দুটি বিচ্ছিন্ন এলাকায় মিলে লিংক্সের সংখ্যা ছিল একশরও কমআর এর মধ্যে মাত্র ২৫টি ছিল প্রজননক্ষম স্ত্রী-লিংক্স।
হাজার হাজার বছর আগে স্যাবার-টুথ টাইগার ছাড়া আর কোনো বিড়াল-প্রজাতি এতটা বিপন্ন ছিল না।

লিংক্সের সংখ্যাধিক্য হ্রাসের পেছনে মূল কারণ ছিল ক্রমবর্ধমান চাষের জমিরাস্তা দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার বৃদ্ধি এবং খাদ্যসংকট।
বুনো খরগোশ হল লিংক্সের প্রধান আহারকিন্তু দুটি মহামারিতে খরগোশের সংখ্যা ৯৫% কমে গিয়েছিল।

২০০৫ সাল নাগাদ পর্তুগালে আর কোনো লিংক্স ছিল নাতবে সে বছরই স্পেনে বন্দি অবস্থায় প্রথমবারের মতো লিংক্সের শাবক জন্ম হয়।

পর্তুগাল আরও তিন বছর পর একটি জাতীয় সংরক্ষণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেযাতে এ প্রজাতিকে রক্ষা করা যায়। আলগারভ অঞ্চলের সিলভেসে স্থাপন করা হয় আইবেরীয় লিংক্সের একটি জাতীয় প্রজনন কেন্দ্র।

সেখানে লিংক্সদের ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রাখা হয়। লক্ষ্য দুটোপ্রথমততাদের বুনো পরিবেশের জন্য প্রস্তুত করা এবং দ্বিতীয়তসঠিকভাবে জোড়া বানিয়ে প্রজননের সুযোগ নিশ্চিত করা।

সেরা খুব ধীরে ধীরে কথা বলেনকারণ ২০০ মিটার দূর থেকেও উচ্চ শব্দ লিংক্সদের (যারা ১৬টি আলাদা খাঁচায় থাকে) মানসিক চাপ বাড়াতে পারে।
সিলভেসের এই ক্লিনিকে নিশ্চিত করা হয় যে লিংক্সগুলো বুনো পরিবেশে টিকে থাকার জন্য শারীরিকভাবে উপযুক্ত।

যখন দেখি কোনো শাবক একটু সাহসী হয়ে উঠছেআমরা গিয়ে জোরে শব্দ করি এবং তাদের তাড়া করিযাতে তারা ভয়ে বেড়ার ওপর উঠে যায়,” বলছেন সেরা। আমরা ওদের শিখতে সাহায্য করি যে বুনোতে মানুষের কাছাকাছি না যাওয়াই ভালো।

এটা একদিকে ওদের নিরাপত্তার জন্যআবার অন্যদিকে মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণীদের সুরক্ষার জন্যও প্রয়োজন। একটি লিংক্সকে লিংক্স হিসেবেই থাকতে হবেগৃহপালিত বিড়ালের মতো আচরণ করলে চলবে না।

সে কারণেই খাবার দেওয়ার সময় কখনোই মানুষের উপস্থিতি বোঝা যায় নাখাবার বিশেষ সুড়ঙ্গপথে সরবরাহ করা হয়যাতে লিংক্সরা খাবারকে মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে না ফেলে।

সময় হলে এগুলোকে বন্য পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জিনগত বৈচিত্র্য রক্ষা ও রোগের ঝুঁকি কমাতে যেকোনো লিংক্সকে যে অঞ্চলে ছাড়া হবেতা নির্ধারণ করা হয় বংশগত তথ্য অনুযায়ী। এমনকি কোনো লিংক্স পর্তুগালে জন্মালেও তাকে স্পেনে নিয়ে ছাড়া হতে পারে।

পেদ্রো সারমেন্তো পর্তুগালে লিংক্স ফেরানোর দায়িত্বে আছেন এবং তিনি ৩০ বছর ধরে আইবেরীয় লিংক্স নিয়ে গবেষণা করছেন।
একজন জীববিজ্ঞানী হিসেবে লিংক্সকে ধরার সময় দুটো জিনিস আমার চোখে পড়ে। প্রথমতওদের দেহের তুলনায় মাথা অপেক্ষাকৃত ছোট। দ্বিতীয়তওদের পা বিস্ময়করভাবে চওড়া। ফলে তারা অসম্ভব উঁচুতে লাফ দিতে ও দ্রুত গতিতে ছুটতে পারে।

প্রজনন কর্মসূচি ও লিংক্স পুনর্বাসনকে বিশাল সাফল্য হিসেবে ধরা হচ্ছেতবে লিংক্সের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জও আসতে পারে।
পর্তুগালে বেশির ভাগ সময়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে লিংক্স ছাড়া হয়তাই জমির মালিকের সম্মতির প্রয়োজন হয়।

তারপর লিংক্সরা যেখানে ইচ্ছা চলে যেতে পারে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে মুরগির খোপে আক্রমণের ঘটনা ঘটেছেসারমেন্তো বলছেন এগুলো খুব বেশি নয়।
এতে অনেকের মনে উৎকণ্ঠা তৈরি হতে পারে। আমরা সেই মুরগির খোপগুলোকে আরও মজবুত করে দিচ্ছিযাতে লিংক্স ঢুকতে না পারে। কখনো যদি লিংক্স সেই এলাকায় ঘোরাফেরা করেআমরা ওদের তাড়িয়ে দিই।

তিনি লিতিও নামের একটি লিংক্সের গল্প বলেনযাকে প্রথমদিকে পর্তুগালে ছাড়া হয়েছিল।
ছয় মাস লিতিও একই এলাকায় ছিলতারপর হঠাৎ করে তার কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না।
শেষ পর্যন্ত সে স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় দোনিয়ানা জাতীয় উদ্যানে ফিরে যায়সেটি তার জন্মস্থান।

লিতিও অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে চিকিৎসা করা হয়তারপর আবার আলগারভের reproduction টিমের কাছে ফেরত দেওয়া হয়।

কেন্দ্র থেকে ছেড়ে দেওয়ার কয়েক দিনের মাথায় লিতিও আবার স্পেনের দিকে রওনা হয়গুয়াদিয়ানা নদী সাঁতরে পার হয়ে সে সেদিকে যেতে থাকে।
একসময় সে হারিয়ে যায়পরে আবার তাকে আলগারভে ফিরিয়ে আনা হয়।

তৃতীয়বার তাকে ছেড়ে দেওয়ার পর সে আর স্পেনে যায়নিমাত্র ৩ কিলোমিটার এগিয়ে গিয়ে এক স্ত্রী-লিংক্স খুঁজে পায় এবং সেখানেই থিতু হয়ে যায়।
এখানকার সবচেয়ে বয়স্ক লিংক্স ও-ইআর সে অনেকগুলোর বাবা হয়েছে,” বলছেন সারমেন্তো।

স্পেন প্রায় তিন দশক আগে এই লিংক্স সংরক্ষণ শুরু করে। এখন এটি আর তাৎক্ষণিকভাবে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে নেই। সারমেন্তোর আশা২০৩৫ সালের মধ্যে আইবেরীয় লিংক্স অনুকূল সংরক্ষণ অবস্থায়” পৌঁছাবে।

সেই লক্ষ্যে বনে লিংক্সের সংখ্যা ৫,০০০-৬,০০০এ উন্নীত করতে হবে।

আমি নিজে দেখেছি কীভাবে এই প্রজাতিটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছেযেখানে আমরা প্রায় প্রতিদিন বুনোতে বা ক্যামেরা ট্র্যাপের মাধ্যমে লিংক্স দেখতে পাইএটা সত্যিই অবিশ্বাস্য,” বলছেন সারমেন্তো।

সংরক্ষণ দলের কেউই আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন নাকারণ তাদের কাজে ঝুঁকিও আছে। গত বছর লিংক্সের ৮০% মৃত্যু ঘটেছে রাস্তার দুর্ঘটনায়।
তবুও তাদের দৃঢ় বিশ্বাসআইবেরীয় লিংক্সকে এখন নিরাপদ অবস্থায় নিয়ে আসা গেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024